শ্বশুর ও বৌমা মিলে চক্রান্ত করে শাশুড়ি খুন করার অভিযোগ উঠল বাঁকুড়া সদর থানার বাগনেজা গ্রামে। মঙ্গলবার সকালে ওই গ্রামের একটি পুকুরের পাড়ে বধূটির অগ্নিদ্বগ্ধ দেহ মেলে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম চায়না মিশ্র (৪৫)। পরে তাঁর ভাই বর্ধমানের গলসি থানার গুমা গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী পুলিশের কাছে জামাইবাবু ও তাঁর পুত্রবধূর বিরুদ্ধে চায়নাদেবীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার খবর পেয়ে তদন্তে যান ডিএসপি (আইন শৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ। পরে তিনি বলেন, “স্বামী ও পুত্রবধূর মধ্যে অন্যরকম সম্পর্ক ছিল বলে চায়নাদেবী প্রতিবাদ করতেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। সে কারণেই তাঁকে খুন করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তবে অভিযুক্ত শ্বশুর ও বৌমাকে এ দিন পুলিশ ধরতে পারেনি।
বাগনেজা গ্রামের পুকুরপাড়ে এ দিন সকালে ওই মহিলার মুখ থেকে কোমর পর্যন্ত সম্পূর্ণ পোড়া দেহ দেখে প্রথমে তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। পরে পুলিশ ও গ্রামবাসী খোঁজ শুরু করে তাঁর পরিচয় উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে সেখানে আসেন মৃতার ভাই বিশ্বেশ্বর চক্রবর্তী। তিনি অভিযোগ করেন, “ভাগ্নের অকাল মৃত্যুর পরে ওই বৌমার সঙ্গে জামাইবাবুর অন্যরকম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ নিয়ে দিদির সঙ্গে প্রায়ই বিরোধ বাধত ওদের। অনেকবার আমাকে মীমাংসা করতে দিদির বাড়িতে ছুটে আসতে হয়েছে। ওই দু’জনে মিলে চক্রান্ত করে আমার দিদিকে খুন করেছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চায়নাদেবীর স্বামী সুখময় মিশ্র পেশায় পুরোহিত। তাঁর দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলের বিয়ে হয়। তাঁদের ১৩ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বছর দশেক আগে একটি পথদুর্ঘটনায় চায়নাদেবীর দুই ছেলেই মারা যায়। এই ঘটনার পরে বড়ছেলের বিধবা স্ত্রী বাঁকুড়া সদর থানা এলাকায় তাঁর বাপের বাড়িতে চলে যান। কয়েক বছর আগে তাঁকে ফের শ্বশুর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। চায়নাদেবী তাঁর স্বামী, বিধবা পুত্রবধূ, নাতি ও বৃদ্ধা শাশুড়ির সঙ্গে থাকতেন।
গ্রামবাসী তপন বাউরি, আকাশ মিশ্র-র দাবি, “স্বামীর সঙ্গে তাঁর বৌমার সম্পর্ক নিয়ে প্রায়ই চায়নাদেবী অশান্তি করতেন। আমরা শুনেছি, বিহারে এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার নাম করে বৌমা ও নাতিকে নিয়ে শনিবার বের হন সুখময়বাবু।” কিন্তু সোমবার পাশের গ্রাম শিবরামপুরের একটি মেলায় ওই তিনজনকেই একসঙ্গে দেখা দিয়েছে বলে কিছু গ্রামবাসীর দাবি।
ঘটনার তদন্তে নেমে বাপ্পাদিত্যবাবু চায়নাদেবীর বৌমার বাপের বাড়িতে এ দিন যান। তিনি বলেন, “ওই দুই অভিযুক্ত বিহারে গিয়েছেন, না কি অন্য কোথাও রয়েছেন, তা খোঁজ করে দেখা হচ্ছে।” পুলিশ দেহটি ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। তবে চেষ্টা করেও ওই বধূর পরিবারের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।