বৃদ্ধকে পিটিয়ে খুন, ধৃত নাতজামাই

শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছিলেন স্বামী। জামাইয়ের ওই আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তা নিয়ে বচসা থেকে জামাইয়ের কপালে জুটেছিল থাপ্পড়। অভিযোগ, সেই রাগে মাঝরাতে ঘুমন্ত দাদাশ্বশুরকে খুন করল তাঁর নাতজামাই। বাকিদের খুনের চেষ্টা করলে পরিবারের অন্য সদস্যদের তৎপরতায় সে ধরা পড়ে যায়। রবিবার গভীর রাতে দুবরাজপুর থানার আগুলিয়া গ্রামের ঘটনা। ওই রাতেই জামাইকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:২১
Share:

নিহত জগন্নাথ বাগদি। সোমবার ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর গায়ে হাত তুলেছিলেন স্বামী। জামাইয়ের ওই আচরণের প্রতিবাদ করেছিলেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। তা নিয়ে বচসা থেকে জামাইয়ের কপালে জুটেছিল থাপ্পড়। অভিযোগ, সেই রাগে মাঝরাতে ঘুমন্ত দাদাশ্বশুরকে খুন করল তাঁর নাতজামাই। বাকিদের খুনের চেষ্টা করলে পরিবারের অন্য সদস্যদের তৎপরতায় সে ধরা পড়ে যায়। রবিবার গভীর রাতে দুবরাজপুর থানার আগুলিয়া গ্রামের ঘটনা। ওই রাতেই জামাইকে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন।

Advertisement

পুলিশ জানায়, নিহতের নাম জগন্নাথ বাগদি (৬২)। বাড়ি ইলামবাজারের শালকা গ্রামে। ওই বৃদ্ধকে খুনের অভিযোগে ধৃত জামাই দেবদূত বাগদির বাড়ি দুবরাজপুর থানার উত্তরডাহা গ্রামে। নিহতের স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত জামাই মেনে নিয়েছে শ্বশুরবাড়িতে হেনস্থা হওয়ার রাগেই সে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, জগন্নাথবাবুর মেয়ে রিতা বাগদির শ্বশুরবাড়ির পাশের গ্রামে ধর্মরাজপুজো উপলক্ষে বড় মেলা বসে। তা দেখতে রবিবার সকালে স্ত্রী সুখী ও ছেলে দুলচাঁদকে নিয়ে আগুলিয়া গ্রামে মেয়ের বাড়িতে উঠেছিলেন পেশায় ভ্যান চালক জগন্নাথবাবু। অন্য দিকে, কাছের উত্তরডাহা গ্রাম থেকে মা রিতার কাছে এসেছিলেন মেয়ে শৈবা এবং তাঁর স্বামী দেবদূতও। সকাল থেকে সবই ঠিক ছিল। গোলমাল বাঁধে সন্ধ্যায়। রিতাদেবীদের অভিযোগ, হঠাৎই স্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয় দেবদূতের। তাঁদের সামনেই স্ত্রীকে সে মারধর শুরু করে। তখনই সকলে বাধা দেন। প্রতিবাদে এগিয়ে এসেছিলেন দাদু জগন্নাথও। কিন্তু বাধা পেয়ে আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন জামাই। অভিযোগ, ওই সময় শ্বশুরবাড়ির লোকেদের উপর চড়াও হয় এবং তাঁদেরও মারতে উদ্যত হয় দেবদূত। ওই সময় জামাইকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে উত্তরডাহা পাঠানো হয়। ওই পরিবারের অভিযোগ, দেবদূত তখন বাড়ি ফিরে গেলেও রাত ১টা নাগাদ কয়েক জনকে জুটিয়ে ফের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে যায়।

Advertisement

পরিবারটি লিখিত অভিযোগে জানিয়েছে, ওই সময় বাড়ির উঠোনে নিজের ভ্যান রিকশার উপরে ঘুমিয়ে ছিলেন জগন্নাথবাবু। তাঁকে বেধড়ক পিটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে ছাদে গিয়ে মামাশ্বশুর দুলচাঁদ ও অন্য এক আত্মীয়কে আঘাত করা শুরু করে দেবদূত। তখনই দুলচাঁদেরা জামাইকে ধরে ফেলেন। চিৎকার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় পরিবারের অন্য সদস্যদেরও। ততক্ষণে শেষ হয়ে গিয়েছেন বৃদ্ধ জগন্নাথ। এর পরেই পুলিশকে ডেকে অভিযুক্তকে তাদের হেফাজতে তুলে দেওয়া হয়। নিহতের ছেলে দুলচাঁদ বলেন, “সময়মতো ঘুম না ভাঙলে আমরাও বাঁচতাম না। নিচ থেকে আরও কয়েক জনের আওয়াজও পেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁদের পরিচয় জানতে পারিনি।”

সোমবার নিহতের মেয়ে রিতাদেবী জানান, মেয়ে শৈবার সঙ্গে দেবদূতের ভালবাসার সম্পর্ক ছিল। তাই অমত থাকলেও মাস কয়েক আগে দেবদূতের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই শৈবার গায়ে যখন তখন হাত তুলত জামাই। রিতাদেবী বলেন, “এখানে এসেও যখন মেয়ের গায়ে হাত তুলল, তখন প্রতিবাদ না করে পারিনি। কিন্তু ও যে এ ভাবে রাতে এসে বাবাকে পিটিয়ে খুন করবে, তা ভাবতেই পারছি না।” খুনি জামাইয়ের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন তিনি। পাশাপাশি দৃঢ় ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, মেয়েকে আর জামাইয়ের বাড়িতে পাঠাবেন না। এ দিকে, গোটা ঘটনায় হতচকিত হয়ে পড়েছেন জগন্নাথের স্ত্রী সুখীদেবী। এ দিন কোন রকমে বললেন, “ভেবেছিলাম মেয়ের বাড়িতে দু’দিন খুব করে আনন্দ করব। এখন তিনটে পরিবারই শেষ হয়ে গেল।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন