পুলিশি প্রহরায় সিপিএমের মিছিল। (ডান দিকে) বেদখল হয়ে যাওয়া উত্তর কোপাই লোকাল অফিসে সিপিএমের পতাকা। —নিজস্ব চিত্র
সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় পাড়ুইয়ে রীতিমতো বেকায়দায় শাসকদল। পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে মাঠে নেমে পড়েছে সিপিএমও। হাজারখানেক দলীয় কর্মী-সমর্থক নিয়ে শান্তিমিছিল করে দু’ বছর আগে বেদখল হয়ে যাওয়া একটি দলীয় কার্যালয় ‘পুনরুদ্ধার’ করল সিপিএম।
বুধবার সকালে পাড়ুইয়ের সাত্তোর এলাকার ঘটনা। ওই ঘটনার পরেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে জেলা সিপিএম। ঘটনা নিয়ে অনেকটাই নরম প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, যাঁর নেতৃত্বে সিপিএমের উত্তর-কোপাই লোকাল কমিটির ওই অফিস দখল করার অভিযোগ উঠেছিল, পাড়ুইয়ের সেই দাপুটে তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফা। সিপিএমের এ দিনের কর্মসূচিকে নেতৃত্ব দেন দলের নতুন জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম। সঙ্গে ছিলেন জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়, বোলপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক উৎপল রুদ্র, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সমীর ভট্টাচার্য। এ দিন ওই কার্যালয়ের সামনে দলীয় ঝান্ডা লাগানোর পরে রামচন্দ্রবাবু বলেন, “আমাদের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূল আগেই লুঠপাট করেছিল। ওরা বেআইনি ভাবে আমাদের রেজিস্ট্রি করা দলীয় কার্যালয় দখল করে নিয়েছিল। ওই সময় আমরা সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। কিন্তু, কেউ-ই কোনও পদক্ষেপ করেনি।”
শেষমেশ এ দিনের কর্মসূচির মাধ্যমে ওই দলীয় কার্যালয় পুনরুদ্ধারে নামে সিপিএম। সমীরবাবুর দাবি, “তৃণমূল কার্যালয় দখল করে অস্ত্র মজুত করত। এখন ভিতরের পরিস্থিতি ঠিক কী, তা আমরা জানি না। তাই আমরা পারলেও এ দিন ভিতরে ঢুকিনি।” সিপিএমের দাবি, প্রশাসনই দায়িত্ব নিয়ে কার্যালয়টি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক। তিনি আরও বলেন, “আমরা দখল ও পুনর্দখলে বিশ্বাসী নই। আমরা শান্তি চাইছি। তাই দলীয় কার্যালয় পুনর্দখল করা হল, এমনটা বলায় আমাদের কিন্তু আপত্তি আছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাত্তোর এলাকায় অবস্থিত সিপিএমের ‘উত্তর কোপাই লোকাল কমিটি’র ওই দলীয় কার্যালয়টি মোটামুটি ২০১১ সাল নাগাদ থেকে বন্ধ ছিল। সংবাদমাধ্যমকে আগাম খবর দিয়ে ২০১৩ সালের ২২ অক্টোবর দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফার নেতৃত্বে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক মিছিল করে এসে বিনা বাধায় সিপিএমের ওই পার্টি অফিসের দখল নেয়। সে দিন মিছিল করে এসে তৃণমূল কর্মীরা কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই কার্যালয়ের ছাদে তৃণমূলের দলীয় পতাকা লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মুস্তফা দাবি করেছিলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের টাকায় সিপিএম ওই কার্যালয় গড়েছিল। এলাকার মানুষই ওই কার্যালয় চালাতেন। তাঁরা আমাদের দলে যোগ দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ওই কার্যালয় তৃণমূলের হেফাজতে থাকবে।” সিপিএম যদিও তখনও দাবি করেছিল, দলীয় কার্যালয়টি দলের জেলা সম্পাদকের নামে রয়েছে। তার সব রকমের কাগজপত্র জমা করে ওই কার্যালয়টি দখলের আশঙ্কার কথা জানিয়ে দলের তরফে সিপিএম পুলিশ-প্রশাসনকেও জানিয়েছিল। তার পরেও পুলিশ-প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে সিপিএমের অভিযোগ।
ওই কার্যালয়ে যাওয়ার আগে এ দিন বোলপুর-সিউড়ি রাস্তায়, পাড়ুই থানার দেবগ্রাম থেকে কেন্দ্রডাঙাল পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় শান্তিমিছিল বের করে সিপিএম। এলাকায় শান্তি ফেরানোর দাবি, তৃণমূল ও পুলিশের যুগলবন্দিতে সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করা হয় ওই মিছিলে। সিপিএমের ওই কর্মসূচিতে পাড়ুই থানার সাত্তোর ও কসবা এলাকার প্রায় হাজার খানেক দলীয় কর্মী-সমর্থক পা মেলান। ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলা ওই পদযাত্রাকে ঘিরে এলাকায় যাতে নতুন করে অশান্তি না ছড়ায় তার জন্য সকাল থেকেই পুলিশ ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। বস্তুত, এত দিন তৃণমূলই ওই কার্যালয়ে সভা-সমিতি করে আসছিল। গত পাঁচ বছরে এই মুস্তফার খাসতালুকে প্রকাশ্যে এমন কোনও মিছিল করল সিপিএম। এ দিনের মিছিল দেখে দৃশ্যতই হাসি ফিরেছে সিপিএম নেতৃত্বের। রামচন্দ্রবাবু বলছেন, “আপনারাই দেখলেন মিছিলে এলাকার মানুষ কেমন স্বতঃস্বফূর্ত ভাবে যোগ দিয়েছেন। আসলে এখন রাজনীতির নামে এলাকা দখলের লড়াই চলছে। নিত্য দিন সন্ত্রাস, অশান্তি। এ সব মানুষ চান না। ওঁরা বুঝতে পারছেন বাংলায় বামফ্রন্ট ছাড়া বিকল্প নেই।” এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সিপিএম রাজনৈতিক ভাবে জোরদার লড়াই শুরু করবে বলে তাঁর দাবি।
এ দিকে, সিপিএমের ওই কর্মসূচিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। মুস্তফা এ দিন দাবি করেন, “ওই কার্যালয় দখল করা হয়নি। সিপিএমেরই ছিল। তাদের দলের কিছু কর্মী-সমর্থক জোর করে তৃণমূলের কার্যালয় করেছিল। মানুষ চেয়েছেন, তাই সেটি তৃণমূলের কার্যালয় হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এখন সিপিএম আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে বলে শুনেছি। আমরা আইনকে শ্রদ্ধা করি। অশান্তি চাই না। আইনি দিক থেকে ওরা নিতে চাইলে নিক।” বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেছেন বোলপুরের মহকুমাশাসক মলয় হালদার। অন্য দিকে, ফোন ধরেননি জেলার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া।