বাস কম, চড়া ভাড়া দিয়ে বাদুড়ঝোলা যাত্রী

পুজোর মুখে শুক্রবারের পরিবহণ ধর্মঘটে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পুরুলিয়ায়। ধর্মঘটের জেরে এ দিন এই জেলার ৪৭টি রুটের মধ্যে হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া আর কোনও রুটেই বেসরকারি বাস চলেনি। সেই সুযোগে চড়া ভাড়া হেঁকেছে ছোট গাড়ি বা ট্রেকার। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) সব রুটের বাসই চলেছে বলে সংস্থার দাবি। যদিও রাস্তায় দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাদের দাবি মিলছে না। যে ক’টি বাস মিলেছে, তাতে ছিল বাদুড়ঝোলা ভিড়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৩৭
Share:

শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা বাস ধর্মঘটে শুক্রবার পথে বেরিয়ে নাজেহাল হলেন মানুষজন। (বাঁদিক থেকে) বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড ও হুড়ার লালপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুজোর মুখে শুক্রবারের পরিবহণ ধর্মঘটে নাকাল হলেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পুরুলিয়ায়। ধর্মঘটের জেরে এ দিন এই জেলার ৪৭টি রুটের মধ্যে হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া আর কোনও রুটেই বেসরকারি বাস চলেনি। সেই সুযোগে চড়া ভাড়া হেঁকেছে ছোট গাড়ি বা ট্রেকার। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এসবিএসটিসি) সব রুটের বাসই চলেছে বলে সংস্থার দাবি। যদিও রাস্তায় দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাদের দাবি মিলছে না। যে ক’টি বাস মিলেছে, তাতে ছিল বাদুড়ঝোলা ভিড়।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ড ছিল প্রায় ফাঁকা। বেশির ভাগ বাসই দাঁড়িয়েছিল। বাস বা গাড়ির জন্য হন্যে হয়ে কিছু যাত্রী ইতস্তত ঘুরে বেড়িয়েছেন। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। শহরের বাসিন্দা উমারানি মাহাতো যাবেন বড়টাঁড়। ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, “একটাও বাস, গাড়ি পাচ্ছি না।” পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে এসে বাড়িতে গিয়ে বেজায় সমস্যায় পড়েছেন কেন্দা থানার মানিকডির বাসিন্দা চিত্ত পরামাণিক। একই ভাবে আত্মীয় বাড়ি যাওয়ার জন্য বেরিয়ে সমস্যায় পড়েন মানবাজারের বামনি গ্রামের বাসিন্দা যুধিষ্ঠির সহিস। বললেন, “বনকানালি যাওয়ার ছিল। বাস নেই। অগত্যা সাইকেলই ভরসা।” এক সরকারি কর্মী সুশীল সাহার কথায়, “বাস না থাকায় বাধ্য হয়ে গাড়ি করে পুরুলিয়ায় এসেছি।”

মানবাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে এ দিন সকালের দিকে বর্ধমান ও কলকাতা রুটের দু’টি বাস এবং একটু বেলায় বাঁকুড়ার একটি বাস ছাড়া অন্য কোনও রুটেরই বাস ছাড়েনি। তবে, ছোট গাড়িতে বেশি ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করেছেন বহু যাত্রী। ছবিটা একই পুরুলিয়া শহরেও। বোকারো বা কাছাকাছি এলাকায় যেতে ছোট গাড়িতে বেশি ভাড়া গুণতে হয়েছে যাত্রীদের। তবে, ট্রেন চলাচল ছিল স্বাভাবিক। আদ্রা-কাশীপুর বা আদ্রা-রঘুনাথপুর, রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা, রঘুনাথপুর-সাঁতুড়ি রুটে অটো এবং ট্রেকারও অন্য দিনের মতোই চলেছে। তবে, এই রুটে বা রঘুনাথপুর মহকুমাতেও বেসরকারি বাস পথে নামেনি বললেই চলে।

Advertisement

পুরুলিয়া জেলা বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত জানান, এ দিন জেলার ৪৭টি রুটের দু-একটি রুট ছাড়া কোনও রুটেই বাস চলেনি। তবে, ধানবাদ ও জামশেদপুর রুটে দু-একটি বাস চলাচল করেছে. তাঁর কথায়, “এই ধর্মঘট আমাদের ডাকা নয়। পুজোর মুখে এই ধর্মঘট ডেকে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলতে চাইনি।” এসবিএসটিসি-র ডিপো ম্যানেজার অশোক চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রতিদিন তাঁদের ডিপো থেকে ২০টি বাস ছাড়ে। এ দিনও সব বাস ছেড়েছে। তাছাড়া, রঘুনাথপুর ও মানবাজার রুটে দু’টি অতিরিক্ত বাস দেওয়া হয়েছিল।

পরিবহণ ধর্মঘটের জেরে পুজোর মুখে মার খেয়েছে বাজারও। পুরুলিয়া শহরের বেশির ভাগ দোকানদারদের বক্তব্য, বাস না চললে শহরের বাইরে থেকে বড় একটা লোকজন আসতে পারেন না। তাই বিক্রিবাটা কম হয়। শহরের পোশাক ব্যবসায়ী অশোক সারাওগি বললেন, “ফাঁকা বাজার। পুজোর আগে এই দিনটা নষ্ট হল।” একই কথা শহরের কাপড়গলির ব্যবসায়ী সমীর হালদারের। “এ সময় কাপড়গলিতে পা ফেলার জায়গা থাকে না। আর এ দিন কার্যত কেউই আসেননি দোকানে।”খেদের সঙ্গে জানালেন তিনি।

পুরুলিয়ার তুলনায় ছবিটা অনেকটাই আলাদা ছিল বাঁকুড়ায়। শহরের গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে রোজের মতো এ দিনও বাসের আনাগোনা দেখা গিয়েছে। শহরের লালবাজার এলাকার বাসিন্দা নিখিল প্রামাণিক বাস ধরতে এসেছিলেন কেরানিবাঁধ বাসস্ট্যান্ডে। তিনি বলেন, “কাজে বর্ধমান যাচ্ছি। ধর্মঘট হবে শুনে বাস পাব কি না, তা নিয়ে সংশয়ে ছিলাম। কিন্তু সেভাবে তো ধর্মঘটের প্রভাব দেখলাম না।” ওন্দার যুবক তাপস রক্ষিত ব্যবসার কাজে প্রায়ই বাসে বাঁকুড়া যাতায়াত করেন। এ দিন বাস পেতে অসুবিধা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনিও। যদিও বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রুটে কিছু কম বাস চলার অভিযোগ শোনা গেছে। এ দিন বেশ কিছু রুটের বেসরকারি বাস বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বের হয়নি। বিষ্ণুপুরের রামানন্দ কলেজের ছাত্রী, সোনামুখীর বাসিন্দা মোনালিসা সিংহের ক্ষোভ, “প্রতিদিন দুপুরে সোনামুখী যাওয়ার অনেক বাস ছাড়ে। এ দিন বাস প্রায় ছিলই না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরে মারাত্মক ভিড় বাসে বাড়ি ফিরেছি।” খাতড়া মহকুমায় অবশ্য বাস চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল।

এ দিনের ধর্মঘটে জেলার বাসমালিকেরা সামিল হয়নি বলেই জানিয়েছেন বাসমালিক সমিতির জেলা সম্পাদক দীপক সুকুল। তিনি বলেন, “আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, এই ধর্মঘটে সামিল হব না। বিশ্বকর্মা পুজোর ভাসানের জন্য কিছু বাস কম চলেছে। তবে, তার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়নি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন