বেহাল নিকাশি, বৃষ্টিতে জলমগ্ন পুর-এলাকা

সামান্য বৃষ্টি হলেই জল জমবে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই এমন আশঙ্কা করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য গত দু’দিনের বৃষ্টিতে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে চলতি বর্ষার মরসুমে জল নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে, স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পুরসভার পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের কাছে বারে বারে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু অবস্থা যা ছিল, তাই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জল জমেছে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আরও ভয়ঙ্কর অবস্থা হবে বলে আশঙ্কা পুরবাসীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বোলপুর শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৪
Share:

জলাশয় নয়। বৃষ্টিতে ভেসেছে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দিরাপল্লি। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

সামান্য বৃষ্টি হলেই জল জমবে। বর্ষা শুরু হওয়ার আগেই এমন আশঙ্কা করেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার জন্য গত দু’দিনের বৃষ্টিতে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। তৃণমূল পরিচালিত বোলপুর পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে চলতি বর্ষার মরসুমে জল নিকাশি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করে, স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে শুরু করে পুরসভার পুরপ্রধান সুশান্ত ভকতের কাছে বারে বারে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু অবস্থা যা ছিল, তাই। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জল জমেছে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে। অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে আরও ভয়ঙ্কর অবস্থা হবে বলে আশঙ্কা পুরবাসীর।

Advertisement

এলাকা ঘুরে এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বোলপুর পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডের নিকাশি ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে আবার ওই নিকাশি নালার সংস্কার করার ক্ষেত্রে নিয়ম নীতি মানা হয়নি। ফলে জল গড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। আবার কোনও কোনও জায়গায় নিকাশি নালা সংস্কার ঠিক মতো হলেও অন্যত্র সমস্যা থাকায় সেখানও জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে লাগোয়া দুই ওয়ার্ডের পুরবাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অবস্থা সামাল দিতে সোমবার গোটা দিন এবং মঙ্গলবারের সকাল গড়িয়ে দুপুরেও সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের আলোচনা এবং বাসিন্দাদের তদ্বির করতে দেখা গিয়েছে।

পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেল, ইন্দিরাপল্লির বাসিন্দা মুনি জোয়ারদার, পলাশ সেনের বাড়ির সামনে এক হাঁটুর বেশি জল জমে রয়েছে। ওই পাড়ার একাধিক বাসিন্দাদের বাড়ির উঠোনেও জলজমে ঘরে ঢুকে যাওয়ার অবস্থা। আবার ওই ওয়ার্ডেরই সুকান্তপল্লির বাসিন্দা রাজা সেনগুপ্তেরও একই হাল। গত সপ্তাহে কাউন্সিলরকে নিয়ে সরেজমিন গোটা পরিস্থিতি চাক্ষুষও করিয়েছেন তিনি। নিকাশি নালা সংস্কার হয়েছে। কিন্তু গড়িয়ে জল যাওয়ার উপায় নেই। কারণ, ওই জল গড়িয়ে যায় ছয় নম্বর ওয়ার্ডের নিকাশি নালা দিয়ে। কিন্তু দুই ওয়ার্ডে সংযোগস্থলে জায়গায় নেই কোন জল নিকাশির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা এবং নালা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জামবুনি, নীচু বাঁধগোড়া, উদয়নপল্লির মতো এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা জল জমে আছে। ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে আরও খারাপ।

Advertisement

অন্য দিকে, বোলপুরের ভকতভাই রোড়ের বাসিন্দা রমেশ ভকতের অভিযোগ, “দিন কুড়ি আগে তৈরি হয়েছে বোলপুর-শ্রীনিকেতন রাস্তার ওপর নিকাশি নালা। কিন্তু প্রয়োজনীয় নিয়ম না মানায় কোথাও ওই নিকাশি নালার গভীরতা বেশি, কোথাও আবার কম। ফলে প্রাকৃতিক নিয়মে জল নীচের দিকে গড়িয়ে যাওয়ার পরিবর্তে জমে রয়েছে ওই নিকাশি নালায় এবং বৃষ্টি নামা মাত্রই ওই জল উপচে পড়ছে। আর তার জন্য মুখ্য রাস্তা-সহ রাস্তার ধারে থাকা লাগোয়া দোকান এবং বাসিন্দাদের বাড়িতে জল ঢুকে যাচ্ছে।” তাই এই এলাকার বাসিন্দারা সকাল থেকে কোমর বেঁধে জমা জল পরিষ্কারে হাত দিয়েছেন। যেমনটা দিয়েছিলেন গত সপ্তাহে। জল নিকাশির একই সমস্যায় বারে বারে মুখোমুখি হওয়ার কারণে কয়েক দিন আগে স্থানীয় কাউন্সিলার থেকে শুরু করে পুরপ্রধান এবং এলাকার বিধায়ক তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বৃদ্ধ রমেশবাবু। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ পেয়ে অবশ্য তৃণমূলের পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত এলাকা ঘুরে সরেজমিন সমস্যা খতিয়ে দেখেছেন। কিন্তু সমাধানের রাস্তা বের হয়নি।

পুরসভার পাঁচ এবং ছয় নম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ পাওয়ার পর হালে আলোচনা করে, জল জমা এলাকাগুলি যৌথ ভাবে ঘুরেও দেখেছেন পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা মহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন এবং ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বোলপুর পুরসভার উপ-পুরপ্রধান নরেশচন্দ্র বাউরি।

ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জমা জলের নিকাশি ব্যবস্থার আশু সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতিমধ্যেই তাঁরা একপ্রস্থ বৈঠক সেরেছেন। মহম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “বৃষ্টির জেরে জমা জল সমস্যা দ্রুত সমাধানে লিখিত আবেদন জাননো হয়েছে পুরপ্রধানকে। উপপুরপ্রধান নরেশবাবুর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। আশা করি অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে।” নরেশবাবু দাবি করেন, “শহরের বেশ কিছু বর্ধিত অংশে উপযুক্ত নিকাশি ব্যবস্থা দ্রুত গড়ে তোলা হচ্ছে। পাশাপাশি দুই ওয়ার্ডের সংযোগস্থলের মতো এলাকাগুলির নিকাশি ব্যবস্থা বর্তমান কী অবস্থায় আছে তা যাচাই করা হচ্ছে। এ নিয়ে পুরপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “শহরের কোনও কোনও জায়গায় জল নিকাশি ব্যবস্থা উপযুক্ত নয় বলে শুনেছি। কিছু এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। পুর-বাসিন্দাদের সমস্যা নিয়ে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন