বিয়েতে নারাজ, ছাত্রীর পাশে স্কুল

পরীক্ষা শেষ হতেই ক্লাসঘর থেকে বেরিয়ে প্রধান শিক্ষকের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি। সঙ্গে কয়েক জন সহপাঠী। তাদের সেখানে ইতস্তত করতে দেখে এক শিক্ষক প্রধানশিক্ষককে জানান। তিনি ডেকে পাঠান। কী ব্যাপার? ছাত্রীরা একজনকে দেখিয়ে বলে, “স্যার বাড়ি থেকে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু ও এখনি বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু বাড়ির লোকজন মানতে চাইছে না।” মেয়েটিও জানায় সে পড়াশোনা করতে চায়। এরপরেই কাশীপুরের মণিহারা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীলকুমার দে উদ্যোগী হয়ে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে ওই নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাশীপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০০:২০
Share:

পরীক্ষা শেষ হতেই ক্লাসঘর থেকে বেরিয়ে প্রধান শিক্ষকের ঘরের বাইরে দাঁড়িয়েছিল মেয়েটি। সঙ্গে কয়েক জন সহপাঠী। তাদের সেখানে ইতস্তত করতে দেখে এক শিক্ষক প্রধানশিক্ষককে জানান। তিনি ডেকে পাঠান। কী ব্যাপার? ছাত্রীরা একজনকে দেখিয়ে বলে, “স্যার বাড়ি থেকে ওর বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু ও এখনি বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু বাড়ির লোকজন মানতে চাইছে না।” মেয়েটিও জানায় সে পড়াশোনা করতে চায়। এরপরেই কাশীপুরের মণিহারা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুনীলকুমার দে উদ্যোগী হয়ে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে ওই নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করেন। তিনি মেয়েটিকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত নিখরচায় পড়ার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন।

Advertisement

আগামী মঙ্গলবার মেয়েটির বিয়ের দিন ধরা হয়েছে। শুক্রবার মেয়েটির কাছে এই কথা শুনে প্রধানশিক্ষক তখনই তার বাবা-মা’কে ডেকে পাঠান। তাদের সামনেও ১৬ বছরের ওই মেয়ে জানিয়ে দিল সে এখনই বিয়ে করতে চায় না। সুনীলবাবু মেয়েটির বাবা-মা’কে মত পরিবর্তনের জন্য বোঝান। তিনি বলেন, “মেয়ের যে এখনও বিয়ের বয়স হয়নি এবং সে নিজেও বিয়ে করতে রাজি নয়, তা ওঁদের আমি বোঝাই। আপাতত ওঁদের বিয়ে বন্ধ রাখতে বলি। ওর মা জানান, দারিদ্রের কারণে আর পড়াতে পারবেন না। তাই বিয়ে ঠিক করেছিলেন। আমি তাঁদের আশ্বাস দিই, অন্তত উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ওর পড়ার কোনও খরচ দিতে হবে না। সব ব্যবস্থা আমরাই করে দেব। বিডিওকেও ফোন করে বিষয়টি জানাই।”

শনিবার কাশীপুরের বিডিও তপনকুমার ঘোষাল নিজেই মেয়েটির গ্রামে গিয়ে তার বাবা-মা-র সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, “মেয়ে বিয়েতে রাজি নয়। তা ছাড়া ওর বয়স ১৬ বছর দু’মাস। আমরা বোঝালাম এই বয়সে বিয়ে দেওয়া ঠিকও নয়। মেয়ের পরিবার মুচলেকা দিয়ে জানিয়ে দেন, বিয়ের বয়স হলেই তাঁরা বিয়ে দেবেন।” এ দিকে বিয়ে বাতিল হতে চলেছে শুনে গ্রামে চলে আসেন পাত্রপক্ষের লোকজন। বিডিও জানান, তাঁরা এসে দাবি করছিলেন বিয়ে এই অবস্থায় বন্ধ করা যাবে না। পুলিশ তখন তাঁদের বোঝায়, নাবালিকার বিয়ে দেওয়া বেআইনি কাজ। বিয়ে হলে পাত্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিডিও জানান, এরপরেই পাত্রপক্ষ আর আপত্তি করেননি।

Advertisement

প্রধানশিক্ষক জানিয়েছেন, শনিবার ওই ছাত্রী স্কুলে গণিতের ইউনিট পরীক্ষা দিতে এসেছিল। তাকে অনেকটা চাপমুক্ত বলে তাঁর মনে হয়েছে। বিডিও জানান, ওই ছাত্রী নিজে এগিয়ে এসে বিয়ে রুখেছে। এটা যথেষ্ট সাহসিকতার প্রমাণ। সে জন্য আগামী ১৪ আগস্ট ‘কন্যাশ্রী দিবস’-এ তাকে সাহসিকতার পুরস্কার দেওয়া হবে। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “আমরা ওই ছাত্রীকে কয়েকটি স্কুলে নিয়ে গিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধের সচেতনতার প্রচার চালাব বলে ভেবেছি। তার সাহসিকতার কথা শুনে অনেকেই প্রয়োজনে রুখে দাঁড়ানোর উৎসাহ পাবে।” শনিবার ওই ছাত্রী বলে, “আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। তাই এখনই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চাই না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন