বই দিয়ে গ্রন্থাগারের সদস্য গ্রামবাসী

কেউ দিলেন রবীন্দ্র রচনাবলি, কেউ বা কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ, বুদ্ধদেব গুহ-র বাবলি। আর কেউ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পুরাণের গল্প, রাঙামাটির দেশ বাঁকুড়া ইত্যাদি বই দান করলেন। এ ভাবে গ্রামের প্রায় একশো জন মানুষের দেওয়া একটি করে বই দিয়ে চালু হল ‘গোপালচন্দ্র খাঁ অ্যাকাডেমি অ্যান্ড লাইব্রেরি।’

Advertisement

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

জয়পুর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০৮
Share:

শুরু হল পথচলা। রবিবার ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

কেউ দিলেন রবীন্দ্র রচনাবলি, কেউ বা কর্মযোগ স্বামী বিবেকানন্দ, বুদ্ধদেব গুহ-র বাবলি। আর কেউ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পুরাণের গল্প, রাঙামাটির দেশ বাঁকুড়া ইত্যাদি বই দান করলেন। এ ভাবে গ্রামের প্রায় একশো জন মানুষের দেওয়া একটি করে বই দিয়ে চালু হল ‘গোপালচন্দ্র খাঁ অ্যাকাডেমি অ্যান্ড লাইব্রেরি।’ রবিবার বিকেলে বাঁকুড়ার জয়পুর থানার বেলিয়ায় উদ্বোধন হল এই নতুন গ্রন্থাগার।

Advertisement

তবে সরকারি উদ্যোগে নয়। পুরোপুরি বেসরকারি। উদ্যোক্তা বেলিয়ায় প্রবাসী বাঙালি তপন খাঁ। তিনি আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় থাকেন। তাঁর প্রয়াত বাবার স্মৃতিতেই এই গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছেন। তপনবাবু বললেন, “মা এখনও গ্রামে থাকেন। ফলে গ্রামের বাড়িতে মাঝে মাঝে আসতেই হয়। গ্রামে এসে দেখি, এলাকায় হাইস্কুল হয়েছে। কিন্তু কোনও গ্রন্থাগার নেই। তাই গ্রামবাসীদের জানিয়ে কাজটা শুরু করলাম। নতুন ১০০টি বই, নতুন একটা কম্পিউটার দিয়ে আপাতত গ্রন্থাগার চালু করা হল। গ্রামবাসীরাও প্রায় ১০০টি বই তুলে দিয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও নানা পরিকল্পনা রয়েছে।”

গ্রন্থাগারটি চালু হল স্থানীয় পঞ্চায়েতের কমিউনিটি হলে। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, অনুষ্ঠান তখনও শুরু হয়নি। গ্রামবাসীরা একে একে আসতে শুরু করেছেন। ছোটছোট ছেলেমেয়েরাও জড়ো হচ্ছে। মেয়েরা লালপাড় সাদা শাড়ি পরে সাইকেলে করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তপনবাবুর পাশে দাঁড়িয়ে একে একে গ্রামের বাসিন্দারা বই দান করলেন। গ্রামবাসী অরুণ পাত্র, অনুপ দিয়াশী বলেন, “একটা ভাল কাজের জন্য তপনবাবু দু’লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছেন। তাই আমরাও তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছি। যে যার সাধ্যমতো বই কিনে লাইব্রেরিকে দিয়েছি।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক শ্যামল সাঁতরা। পেশায় নিউরো সায়েন্স গবেষক তপনবাবু দীর্ঘ ১৭ বছর জয়পুর ছেড়ে বাইরে থাকলেও, তিনি যে নিজের গ্রামকে ভোলেননি এবং তাঁর এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেন বিধায়ক। তিনি বলেন, “কমিউনিটি হলের একটি ঘর ফাঁকা পড়েছিল। এমন একটা ভাল কাজের জন্য ঘরটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত কমিউনিটি হলে গ্রন্থাগারটি চালু করা হয়েছে। পরে এটিকে গ্রামীণ গ্রন্থাগারে রূপান্তরিত করার চিন্তা ভাবনা সরকারের রয়েছে।”

Advertisement

গ্রামটি কৃষি প্রধান জানিয়ে তপনবাবু বলেন, “বাবা কৃষিকাজ করে আমাদের মানুষ করেছেন। তাঁর নামাঙ্কিত এই অ্যাকাডেমি ও লাইব্রেরিতে কৃষি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সেমিনার করা, এই সংক্রান্ত আধুনিক প্রযুক্তি নিয়েও চিন্তা-ভাবনা আছে।” এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত গ্রামবাসী মহাদেব কুণ্ডু, প্রশান্ত শীট বলেন, “গ্রামে গ্রন্থাগার ছিল না। তপনবাবুর উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। গ্রাম উন্নয়নে যে কোনও পরিকল্পনার পাশে আমরা আছি এবং থাকব।” এ সব শুনে তপনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “দূরে থাকি। কিন্তু এই সব মানুষই আমার অনুপ্রেরণা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন