বন্ধের মুখে ছাত্রাবাস, স্কুলে তালা

প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসেন না এবং তাঁর গাফিলতিতেই অচলাবস্থা তৈরি হতে চলেছে বিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্রাবাসে। মূলত এই দু’টি অভিযোগে একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে স্কুলের মধ্যেই দীর্ঘক্ষণ তালা বন্ধ করে রাখলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি ১ ব্লকের লতাবুনি প্রাথমিক স্কুলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০১:০৭
Share:

এমনই অবস্থা সিউড়ির লতাবুনি প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রাবাসের। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রধান শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে আসেন না এবং তাঁর গাফিলতিতেই অচলাবস্থা তৈরি হতে চলেছে বিদ্যালয়ের আদিবাসী ছাত্রাবাসে। মূলত এই দু’টি অভিযোগে একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে স্কুলের মধ্যেই দীর্ঘক্ষণ তালা বন্ধ করে রাখলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি ১ ব্লকের লতাবুনি প্রাথমিক স্কুলে।

Advertisement

বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি গ্রামবাসীদের পক্ষ থেকে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে সিউড়ি পশ্চিম সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে। বাসিন্দা বাবলু মুর্মু, মদনমোহন হেমব্রম, সনাতন টুডু, যদু হেমব্রমদের অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক পরেশ মাল নিয়মিত স্কুলে আসেন না। এলেও দেরি করে এসে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে বাড়ি চলে যান। বর্তমানে বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের একজন ছুটিতে রয়েছেন। তা সত্ত্বেও উনি বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ স্কুলে এসেছেন। এ ছাড়া উনি কাজগপত্র ঠিক মতো জমা না দেওয়ায় স্কুল সংলগ্ন আদিবাসী ছাত্রাবাসটিও বন্ধের মুখে।” সেই জন্যই তাঁকে আটকে রেখেছিলেন বলে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানিয়েছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। এসআই কাকলি জোয়ারদার ছুটিতে থাকায় তাঁকে পাওয়া যায়নি। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রথামিক) সুকুমার পাল বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানা গিয়েছে, এলাকটি আদিবাসী অধ্যুষিত। লতাবুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯ জন স্কুল পড়ুয়ার প্রায় সকলেই অদিবাসী পরিবারের। বিদ্যালয় চত্বরে রয়েছে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন অদিবাসী ছাত্রাবাস। ৬৯ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৩০ জন ছাত্র ওই ছাত্রাবাসেই থাকে। ছাত্রাবাস দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন একজন সুপার, এক রাঁধুনি ও তাঁর দুই সহকারী-সহ ৪ জন। কিন্তু চার জন কর্মী থাকলেও ছাত্রাবাসের মূল দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের হাতেই। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দফতরের দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রাবাসের জন্য বরাদ্দ খরচের কোনও হিসেব দাখিল না করায় এবং ছাত্রাবাস সুপারের সঙ্গে তালমিলের গোলমাল হওয়ায় গত ৯ মাস ধরে ওই ছাত্রাবাস কোনও বরাদ্দ অর্থ পায়নি সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে। চার কর্মীর বেতনও বন্ধ রয়েছে একই সময় ধরে। আর যে মুদি দোকান থেকে ছাত্রাবাসের আবাসিকদের রান্নার সামগ্রী আসত সেখানেও ঋণের বোঝা বেড়ে যাওয়ায় আর জিনিসপত্র দেওয়া হবে বলে ওই দোকান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরই বাসিন্দাদের ক্ষোভ চরমে উঠে।

Advertisement

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক পরেশবাবু বলেন, “আমি নিয়মিত স্কুলে আসি। কিন্তু আসার পথে এ দিন মোটরবাইক বিকল হয়ে যাওয়ায় দেরি হয়েছিল।” ছাত্রাবাস প্রসঙ্গে ওই শিক্ষকের বক্তব্য, “এ জন্য দায়ী ছাত্রাবাসের সুপারই। তিনি প্রতেক দিন খরচের কোনও ভাউচার জমা না দেওয়ায় আমার পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জামা দেওয়া সম্ভব হয়নি।” ছাত্রাবাসের সুপার অবিনাশ হাঁসদার পাল্টা দাবি, “অমি যাথারীতি ভাউচার দিয়েছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরে তা জমা করেননি প্রধান শিক্ষকই। দফতরে খোঁজ নিয়ে আমি তা জেনেছি। আর আমাদের বেতন ও ছাত্রদের খাওয়ার টাকা বন্ধ করলে ক্ষতি আমারই। আমি তা কেন করব।” সুপারের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন ছাত্রাবসের রান্নার দায়িত্বে থাকা সনথকুমার রায়ও। উভয়েই বলছেন, “ছাত্রাবাসে উপস্থিত পড়ুয়া পিছু ৭৫০ টাকা করে প্রতিমাসে বরাদ্দ। এর পরে প্রতি মাসে আমাদের বেতন রয়েছে গত নভেম্বর থেকে বেতন পাইনি। আসেনি আবাসিক ছাত্রদের জন্য টাকাও।”

জেলা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ আধিকারিক তথা প্রকল্প আধিকারিক রঞ্জন চক্রবর্তীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমাকে কেউ জানাননি। তবে ওই ছাত্রাবাসের সুপার যদি এই বিষয়ে আমাকে লিখিত ভাবে জানান, তা হলে আমি প্রধান শিক্ষক ও সুপারের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন