ভাল ফল করে ফের চমকে দিল জঙ্গলমহলের সেই স্কুল

জঙ্গলমহলের স্কুলটা বারবার চমকে দিচ্ছে। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম। আর এ বার এক চুলের জন্য মেধা তালিকায় না থাকলেও এই স্কুলের ছেলে বাঁকুড়া জেলায় কৃতীদের একেবারের প্রথম সারিতে রয়েছে। স্কুলের নাম, সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খাতড়া ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০০:৫০
Share:

ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়, সৌরভ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলমহলের স্কুলটা বারবার চমকে দিচ্ছে। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম। আর এ বার এক চুলের জন্য মেধা তালিকায় না থাকলেও এই স্কুলের ছেলে বাঁকুড়া জেলায় কৃতীদের একেবারের প্রথম সারিতে রয়েছে।

Advertisement

স্কুলের নাম, সিমলাপাল মদনমোহন হাইস্কুল। এই স্কুল থেকেই এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৫ নম্বর পেয়েছে সৌরভ ঘোষ। কিন্তু, আর দু’টো নম্বর বেশি কেন পেল না, সেই নিয়ে তার আফসোস কিছুতেই যাচ্ছে না। ওই দুই নম্বর পেলেই যে মেধা তালিকায় নামটা থাকত! সেটা আর হল না। জেলার সেরা উচ্চমাধ্যমিকের কৃতী এই ছাত্রটির কথায়, “নম্বর যা পেয়েছি, তাতে খুশি। তবে মেধা তালিকায় অল্পের জন্য ঢুকতে না পেরে সেটা উপভোগ করতে পারছি না।” গত বছর স্কুলের ছাত্র রামানুজ সিংহ মহাপাত্র উচ্চম াধ্যমিকে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন। এ বার এই স্কুলের কোনও ছাত্রছাত্রী মেধা তালিকায় না থাকলেও রেজাল্ট যথেষ্ট ভাল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শ্যামরঞ্জন সিংহ বলেন, “এ বার উচ্চমাধ্যমিকে ৩৪৩ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। ২৯০ জন পাশ করেছে। সৌরভের ফলে আমরা খুবই খুশি।”

সিমলাপাল হাইস্কুলের পিছনেই সৌরভের বাড়ি। বাবা কার্তিক ঘোষ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। মা মিঠু ঘোষ গৃহবধূ। তাঁদের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় সৌরভ। সব ক’টি বিষয়েই গৃহশিক্ষক ছিল তার। দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা পড়াশেনা করেছে। আর সময় পেলে নেশা ক্রিকেট খেলা। প্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। “ভারতের খেলা থাকলে বিরাট কোহলির ব্যাটিং দেখার জন্য টিভির পর্দায় চোখ রাখতেই হয়।”বলছে এই কৃতী ছাত্র। গোয়েন্দা গল্প ও উপন্যাসও তার ভারী প্রিয়। ছেলের রেজাল্টে খুশি কার্তিকবাবু। গৃহশিক্ষকদের পাশাপাশি স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছেও যে সে কৃতজ্ঞ, তা জানাতে ভোলেনি সৌরভ। তাঁর কথায়, “আমার কৌতূহল রসায়নে। তবে ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের পাশে থাকতে চাই। সেই লক্ষ্যে এ বছর জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েছে সে।”

Advertisement

সৌরভের পাশাপাশিই জেলায় মেয়েদের মধ্যে একদম প্রথম দিকে থাকা ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়ের সাফল্যের রহস্য আবার শুধুই পড়া নয়। বরং মন হালকা রাখতে টিভিতে সিরিয়াল দেখা। আর এ ভাবেই উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬০ নম্বর পেয়েছে বাঁকুড়া শহরের কেন্দুয়াডিহির বাসিন্দা ঋতুপর্ণা। বাঁকুড়া মিশন গার্লসের এই ছাত্রীর বাবা সুপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় ব্যবসায়ী, মা চন্দনাদেবী গৃহবধূ। স্কুলের পরীক্ষায় বরাবর ক্লাসের প্রথম সারিতে থেকেছে ঋতুপর্ণা। মাধ্যমিকে ৬৩৮ নম্বর পেয়ে পাশ করে বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করেছিল। সে যে ভাল ফল করবেই তা নিয়ে কার্যত নিশ্চিত ছিলেন পরিবারের লোকজন। যে বিষয় তার সবচেয়ে প্রিয়, সেই অঙ্কে ৯৬ নম্বর পাওয়ার আক্ষেপ যাচ্ছে না এই কৃতী মেয়েটির। ইঞ্জিনিয়ার হতে চাওয়া মেয়েটি বলছে, “অঙ্কে আরও একটু বেশি নম্বর হল না বলে হতাশ লাগছে।” সারাদিন রুটিন করে সাত ঘণ্টা পড়েছে সে। আর ছিল পড়ার ফাঁকে টিভিতে সিরিয়াল দেখা। তার কথায়, “রেজাল্ট ভাল হবে আশা ছিল। কিন্তু এতটা ভাল হবে ভাবতেও পারিনি।” মেয়ে ভাল ফল করেছে জেনে ঋতুপর্ণার সঙ্গে মার্কশিট আনতে স্কুলে গিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মাও, সুপ্রিয়বাবু বলেন, “মেয়ের এই সাফল্যে খুশি। তবে আমি চাই ও নিজের পায়ে দাঁড়াক।” চন্দনাদেবীর আক্ষেপ, “কিছু নম্বরের জন্য রাজ্যের মেধা তালিকায় না আসায় একটু খারাপ লাগছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন