ভাঁড়ারে টান, পূর্ত দফতরকে রাস্তা দিতে চায় জেলা পরিষদ

তহবিলে টাকা নেই। অথচ একের পর এক রাস্তার হাল খারাপ হয়ে পড়েছে। আমূল সংস্কারে রও দাবি উঠেছে অনেক এলাকায়। এই অবস্থায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি রাস্তা পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দিতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। মাস খানেক আগে পূর্ত দফতরকে রাস্তাগুলি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫১
Share:

বদলাবে এই পথ-যন্ত্রণা? রঘুনাথপুর থেকে চেলিয়ামা যাওয়ার রাস্তার ছবিটি তুলেছেন পৌলমী চক্রবর্তী।

তহবিলে টাকা নেই। অথচ একের পর এক রাস্তার হাল খারাপ হয়ে পড়েছে। আমূল সংস্কারে রও দাবি উঠেছে অনেক এলাকায়। এই অবস্থায় জেলার গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি রাস্তা পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দিতে চাইছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদ। মাস খানেক আগে পূর্ত দফতরকে রাস্তাগুলি অধিগ্রহণ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

পুরুলিয়ার জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “রাস্তাগুলির দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে পূর্ত দফতর। পাঁচটি রাস্তার ক্ষেত্রেই তারা সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। অযোধ্যা পাহাড় যাওয়ার দু’টি রাস্তা সমীক্ষার জন্য কলকাতা থেকে দল আসছে। বাকি তিনটি রাস্তা সমীক্ষা করছে জেলা দফতর।”

জেলা সফরে এসে বারবারই জেলার রাস্তাঘাট মেরামতি ও সংস্কারের দিকে নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অর্থের অভাব ভোগাচ্ছে জেলা পরিষদকে। তার প্রেক্ষিতেই বেহাল হয়ে পড়া সিরকাবাদ থেকে অযোধ্যা হয়ে বাঘমুণ্ডি (৩১ কিমি), কুমারীকানন থেকে অযোধ্যা (১৪ কিমি), ঝালদা থেকে গোলা (১৯ কিমি), রঘুনাথপুর থেকে চেলিয়ামা (১৫ কিমি) এবং ইন্দকুড়ি থেকে মানবাজার বাসস্ট্যান্ড (৪ কিমি) এই গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বড় রাস্তা রক্ষনাবেক্ষণের জন্য পূর্ত দফতর ও পূর্ত দফতর (রোডস) এর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, জেলায় মোট ২০টি বড় এবং গুরত্বপূর্ণ রাস্তা রয়েছে তাদের আওতায়। এই রাস্তাগুলির সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব পুরোপুরি জেলা পরিষদের। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি হওয়া ১১০টি রাস্তা এবং আরআইডিএফ (গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল) এর অর্থে তৈরি হওয়া ১২টি রাস্তা রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্ব জেলা পরিষদের।

জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেলার মধ্যে প্রায় ১৮০০ কিলোমিটার রাস্তা রক্ষনাবেক্ষণ করতে হয় আমাদের। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ঘাটতি বিরাট।” গুরুত্বপূণর্র্ রাস্তাগুলি পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সুজয়বাবুদের যুক্তি, জেলাপরিষদের তহবিল বলতে তৃতীয় অর্থ কমিশন, বিআরজিএফ এবং ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন থেকে প্রাপ্ত তহবিল। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ত্রয়োদশ অর্থ কমিশনের তহবিল ছাড়া অন্য কোন বরাদ্দ থেকে রাস্তা সংস্কারের কাজ করা সম্ভব নয়। এই তহবিলে বছরে চার কোটি টাকা পাওয়া যায়। ওই টাকায় ২০টি ব্লকের মোট ১৪২টি রাস্তা রক্ষনাবেক্ষণ কখনোই করা সম্ভব নয়। সুজয়বাবুর কথায়, “প্রতিটি ব্লক থেকেই নিজের নিজের এলাকার রাস্তা জরুরি ভিত্তিতে মেরামতির জন্য প্রস্তাব পাঠাচ্ছে জেলাপরিষদে। এ ক্ষেত্রে যদি প্রতিটি ব্লকে সমান অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তাহলে ব্লক পিছু বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ লক্ষ টাকা। অথচ রাস্তা মেরামতির জন্য যে নিয়ম স্থির করা হয়েছে, তাতে ওই টাকায় কোন রাস্তাই ঠিকভাবে মেরামতি করা সম্ভব নয়।”

বস্তুত জেলাপরিষদ চাইছে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সবক’টি রাস্তারই দায়িত্ব পূর্ত দফতরকে দেওয়া হোক। তারই প্রথম ধাপ হিসাবে পাঁচটি রাস্তার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “আর্থিক সমস্যায় বড় রাস্তাগুলির সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না আমাদের পক্ষে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ও আরআইডিএফ-এর তহবিল থেকে তৈরি করা রাস্তাগুলির দায়িত্ব আমাদের কাঁধে চেপেছে। তাই আমরা চাইছি বড় রাস্তাগুলি এ বার পূর্ত দফতরকে দিয়ে ছোট রাস্তাগুলির সংস্কারের দায়িত্ব নিজেদের কাছে রাখতে।”

জেলাপরিষদের এক আধিকারিকের দাবি, ১৮০০ কিলোমিটার রাস্তা সংস্কারের জন্য তাদের বরাদ্দ বছরে চার কোটি টাকা। অথচ ৮০০ কিলোমিটার রাস্তার জন্য পূর্ত দফতর পায় বছরে ২০ কোটি টাকা। ফলে জেলা পরিষদের পক্ষে কোনও ভাবেই ওই বিশাল রাস্তা অত কম টাকায় সংস্কার করা সম্ভব নয়। সুজয়বাবু বলেন, “বরাদ্দ অর্থের হিসেবেই স্পষ্ট গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি আমাদের চাইতে ভালভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করতে পারবে পূর্ত দফতর।”.

জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, পর্যটন ও শিল্পের পরিকাঠামো তৈরিতে যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলি সংস্কার দ্রুত প্রয়োজন সেই পাঁচটি রাস্তা পূর্ত দফতরকে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অযোধ্যা পাহাড়কে ঘিরে সুসংহত পর্যটন কেন্দ্র গঠনে গুরুত্ব দিচ্ছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। তাই বলরামপুরের কুমারীকানন থেকে অযোধ্যা এবং পাহাড়ে ওঠার অন্যতম রাস্তা আড়শার সিরকাবাদ থেকে অযোধ্যা হয়ে বাঘমুণ্ডি এই রাস্তাগুলির আমূল সংস্কারের প্রয়োজন। তাই ওই রাস্তাগুলি নেওয়ার প্রস্তাব পূর্ত দফতরকে দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক জানিয়েছেন, শিরকাবাদ-অযোধ্যা রাস্তা সংস্কারের কাজ পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ হাতে নিয়েছে। পূর্ত দফতর ওই রাস্তা পরে রক্ষনাবেক্ষণ করবে।”

শিল্পায়নের কারণে রঘুনাথপুর মহকুমা সদর থেকে চেলিয়ামা পর্যন্ত রাস্তাটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই ওই রাস্তার দায়িত্বও পূর্ত দফতরকে দিতে চাইছে জেলাপরিষদ। ঘটনা হল আপাতত ১৪২টি রাস্তা জেলাপরিষদের হাতে থাকলেও আরও প্রায় ১৪০টি রাস্তা পুরুলিয়ায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় তৈরি করছে ওয়েস্টবেঙ্গল স্পেসিফিক রুরাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। যার মধ্যে ৩৭টি রাস্তা নির্মাণ শেষ হয়েছে এবং নির্মানের পরে এই রাস্তাগুলির রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বও পড়বে সেই জেলাপরিষদের কাঁধেই।

সব মিলিয়ে বড় রাস্তার দায়িত্ব পূর্ত দফতরকে দিয়ে অনেকটাই ভারমুক্ত হতে চাইছে জেলাপরিষদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন