মাঠ মাপজোকে গিয়ে তৃণমূলের হাতে ঘেরাও

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মাপজোক করতে আসা সরকারি আধিকারিকদের ব্লক অফিসে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখায় অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাইপুর ব্লক অফিসে খাতড়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ তনবীরুল হাসান-সহ আধিকারিকদের স্থানীয় তৃণমূলের এক গোষ্ঠী আটকে রাখেন। তাঁরা ওই মাপজোক বাতিল করার দাবি জানান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০১:২৬
Share:

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে মাপজোক করতে আসা সরকারি আধিকারিকদের ব্লক অফিসে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখায় অভিযোগ উঠল তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার রাইপুর ব্লক অফিসে খাতড়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ তনবীরুল হাসান-সহ আধিকারিকদের স্থানীয় তৃণমূলের এক গোষ্ঠী আটকে রাখেন। তাঁরা ওই মাপজোক বাতিল করার দাবি জানান।

Advertisement

একশো দিনের প্রকল্পে ফুলকুসমায় একটি ক্লাবের জমি সমতলীকরণের কাজে গোলমাল ধরা পড়েছে বলে আগে অভিযোগ উঠেছিল। সেই কাজের মাপজোকেও গোলমাল ধরা পড়েছে বলে তদন্ত করে বিডিও ফুলকুসমা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান-সহ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। পঞ্চায়েতের কয়েকজন কর্মী গ্রেফতারও হন। জামিন পেয়ে সেই অভিযুক্তরাই বিডিও মাপজোক করেননি বলে অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসকের কাছে নতুন করে মাপজোক করানোর আর্জি জানান। তার প্রেক্ষিতেই শুক্রবার রাইপুর ব্লকের ফুলকুসমায় একটি ক্লাবের মাঠের জমি সমতলীকরণের কাজের মাপজোক করা হয়। সেই মাপজোকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের একাংশের বিরুদ্ধে। বিকেলে তাঁরা রাইপুর ব্লক অফিসে গেলে রাত পর্যন্ত তাঁদের তৃণমূলের অন্য গোষ্ঠীর লোকজন আটকে রাখেন বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, ফের মাপজোক করে যা পাওয়া গিয়েছে, তা বাতিল করতে হবে।

রাতে খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু শুক্রবার বলেন, “রাইপুরের বিডিও তদন্ত করে প্রধান-সহ চারজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। দিন কয়েক আগে ওই কাজে সঠিক মাপজোক করা হয়নি বলে কয়েকজন অভিযোগ করেন। তাই পুনরায় মাপজোক করানো হয়। যাঁরা ব্লক অফিসে আধিকারিকদের ঘেরাও করে রেখেছেন, তাঁদের সঙ্গেও আলোচনা চলছে।” জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “এ দিন যে মাপজোক করা হয়েছে তা মোটেই বাতিল করা হবে না। ওরা অন্যায় দাবি নিয়ে ঘেরাও করেছেন। ঘেরাও মুক্ত করতে মহকুমাশাসককে বলা হয়েছে।” জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীও জানিয়েছেন, দল এই ধরনের আন্দোলন বরদাস্ত করে না। দ্রুত ঘেরাও তুলতে বলা হবে।” ঘটনা হল এ দিন অনেক রাত পর্যন্ত ঘেরাও মুক্ত করা যায়নি।

Advertisement

গত মার্চ মাসে ওই মাঠে ভূমি সমতলীকরণের কাজ করা হয়। এর জন্য বরাদ্দ ছিল ২৪ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৩৩ টাকা। অভিযোগ, মার্চ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বলে খাতায় কলমে দেখানো হলেও কাজ তখন শেষ হয়নি। পরে সেই কাজ শেষ করা হয়। কিন্তু গোলমালের অভিযোগ অন্য জায়গায়। ওই কাজে অদক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে মাটি কাটার মেশিন ব্যবহার করা হয় বলে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাসের দাবি ছিল, “ওই প্রকল্পে ৬০৩২ জন শ্রমিকের কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে কাজ করেছেন ৩৪১৪ জন। শ্রমিকদের কর্মদিবসের হিসাবেও যথেষ্ট গরমিল পাওয়া গিয়েছে।”

বিডিও জানিয়েছিলেন, ওই কাজে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তে ভুয়ো জবকার্ড ব্যবহার করা এবং মাটি কাটার মেশিন ব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। মাপ করে দেখা যায়, কাজে গোলমাল রয়েছে। গত ২ মে তৃণমূল পরিচালিত ফুলকুসমা পঞ্চায়েতের প্রধান গোবিন্দপ্রসাদ মুর্মূ, পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক, গ্রাম রোজগার সেবক, সুপারভাইজার-সহ চারজনের বিরুদ্ধে বারিকুল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।

ওই পঞ্চায়েতের তদানীন্তন প্রধান গোবিন্দপ্রসাদ মুর্মু অবশ্য দাবি করেছিলেন, “প্রকল্পের কাজ সরকারি নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। অর্থ তছরুপ বা ভুয়ো জবকার্ড ব্যবহারের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।” ওই পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক নীলরতন বিশ্বাস, গ্রাম রোজগার সেবক রাহুল সেনাপতি ও সুপারভাইজার অলক মণ্ডলও একই দাবি করেন। ওই তিনজন সম্প্রতি জামিন পেয়ে অভিযোগ করেছেন, বিডিও তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। যদিও তা অস্বীকার করেছেন বিডিও। ওই তিনজন সম্প্রতি খাতড়ার মহকুমাশাসকের কাছে আবেদনে জানান, ওই কাজের সঠিক পরিমাপ করা হয়নি। তাঁরা পুনরায় মাপজোক করার জন্য অনুরোধ জানান।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ খাতড়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ তনবীরুল হাসানের নেতৃত্বে আধিকারিকেরা ফুলকুসমার ওই মাঠে যান। খবর পেয়ে কিছু অত্যুৎসাহী মানুষজন মাঠে ভিড় করেন। তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। বারিকুল থানার ওসি সলিল পালের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী মাঠের চারপাশে ব্যারিকেড করে থাকে।

রাইপুর ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার সিংহ এ দিনও দাবি করেন, “ওই কাজের পরিমাপ ঠিকমতো করা হয়নি। ওই ক্লাব কর্তৃপক্ষ মাটি কাটার মেশিন ব্যবহার করেছিল। পঞ্চায়েতের কোনও দোষ নেই। চক্রান্ত করে প্রধান ও পঞ্চায়েতের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে বিডিও মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছেন।” ফুলকুসমা পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান তৃণমূলের চন্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই কাজের নিরপেক্ষ তদন্ত ও সঠিক মাপজোক করা হোক এটা আমাদেরও দাবি।” বিডিও দীপঙ্কর দাস অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন