মেডিক্যাল কলেজ হবে কি, প্রশ্ন সিউড়িতে

জেলায় এসে দলীয় সাংসদের ‘দাবি’ মেনে সিউড়িতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে প্রতিশ্রুতির পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর এলাকায় জমির হদিশ দিলেও, কবে মেডিক্যাল কলেজ হবে, সে নিয়ে কোনও সদুত্তর নেই খোদ সাংসদের কাছেই! তিনি বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। তাঁর দাবি, “ওই জায়গাতেই মেডিক্যাল কলেজ হবে। অপেক্ষা করুন একদিন ওখানে মেডিক্যাল কলেজ হবেই। তার জন্য চেষ্টা করছি।”

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায়

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৪ ০১:০৬
Share:

জেলায় এসে দলীয় সাংসদের ‘দাবি’ মেনে সিউড়িতে মেডিক্যাল কলেজ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে প্রতিশ্রুতির পর কেটে গিয়েছে প্রায় তিন বছর। ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর এলাকায় জমির হদিশ দিলেও, কবে মেডিক্যাল কলেজ হবে, সে নিয়ে কোনও সদুত্তর নেই খোদ সাংসদের কাছেই! তিনি বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়। তাঁর দাবি, “ওই জায়গাতেই মেডিক্যাল কলেজ হবে। অপেক্ষা করুন একদিন ওখানে মেডিক্যাল কলেজ হবেই। তার জন্য চেষ্টা করছি।”

Advertisement

তবে রাজ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (শিক্ষা) সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আপাতত সিউড়িতে কোনও মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে না। রামপুরহাটে প্রথম হবে। তার জন্য ২০০ কোটি টাকা বাজেট ধরা হয়েছে।” তিনি জানান, ওই টাকার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা দেবে কেন্দ্র। বাকি টাকা রাজ্য দেবে। জমি দেখার কাজও শেষ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী, রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যা ঠিক মনে করেছেন, তাই করেছেন। তবে আমি জানি, সিউড়িতে একটি মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার প্রস্তাব রয়েছে।”

রাজ্যে পালা বদলের পর, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে জেলা সফরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বোলপুরে মহকুমা প্রশাসনিক ভবনে রাজ্য এবং জেলার আধিকারিকদের নিয়ে দীর্ঘ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছিলেন। সেখানে বীরভূমের নানা সমস্যা এবং দাবি নিয়ে আলোচনার পর সংবাদ মাধ্যমের সামনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, শতাব্দীর (বীরভূমের সাংসদ) দাবি মতো সিউড়িতে একটি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা হবে। কার্যত এর পরে পরেই অত্যন্ত তৎপররতার সঙ্গে জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর মেডিক্যাল কলেজের জন্য জমির সন্ধান শুরু করে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সিউড়ি লাগোয়া নগরী পঞ্চায়েত এলাকায় আঠারো একর খাস জমির হদিশও পায় তাঁরা। সেই জমির বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে রাজ্য এলআর (ল্যান্ড রিফরমস) দফতরে পাঠানো হয় অনুমোদনের জন্য। কিন্তু সেই অনুমোদন আজও মেলেনি।

Advertisement

বীরভূম থেকে সদ্য বাঁকুড়ায় বদলি হয়ে আসা তৎকালীন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক শ্যামাশিস রায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ওই আঠারো একর জায়গা নির্ধারণ করে প্রায় দু’ বছর আগে রাজ্য এলআর দফতরে পাঠানো হয়। অনুমোদনের জন্য বার বার ওই দফতরের কাছে সুপারিশ জানানোও হয়। কিন্তু এল আর দফতর থেকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ করার জন্য টাকা কোথা থেকে পাওয়া যাবে, তা জানানো না হলে ওই জমির অনুমোদন মিলবে না। তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে বীরভূম কেন্দ্রের সাংসদ শতাব্দী রায়ও বেশ কয়েকবার তাঁর কাছে খোঁজ খবর নেন। তাঁকে এলআর দফতরের সিদ্ধান্তের কথা জানান শ্যামাশিসবাবু।

সাংসদ জানলেও তাঁর জানা নেই বলছেন জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও তৃণমূলের কার্যকরী সভাধিপতি চন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই”। প্রায় তিন বছরে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি বলতে এইটুকুই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রামপুরহাটে এক জনসভায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, রামপরহাটে মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল নেতারা বিষয়টিকে প্রচারে ইস্যু করেছিলেন। প্রায় প্রতিটি জনসভায় তাঁরা রামপরহাটে মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।

সিউড়ির ১২ ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বপন রায়, ৫ ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিশু নন্দন বলেন, “শতাব্দীর দাবি মতো, দিদি সিউড়িতে মেডিক্যাল কলেজ করতে রাজি হয়েছেন, এমনই শুনেছিলাম। সেটা হলে সিউড়ির ছেলেমেয়েদের সুবিধা হত।” সিউড়ি সদরের প্রাক্তন তৃণমূল সভাপতি তথা শতাব্দী অনুগামী রমারঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিউড়ির মেডিক্যাল কলেজের কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশেষ উদ্দেশ্যেই সেটা সরিয়ে নিয়ে রামপুরহাটে হওয়ার কথা বলা হচ্ছে।”

কেন সিউড়ির বদলে রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজের পরিকল্পনা, সে নিয়ে নানা মত জেলা তূণমূলের মধ্যে। কেউ কেউ সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, সিউড়িতে মেডিক্যাল কলেজের সম্ভাবনাই নেই। বীরভূম জেলা পরিষদের তৃণমূল সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, “রামপুরহাটে মেডিক্যাল কলেজ গড়ে তোলা হচ্ছে সুতরাং সিউড়িতে সরকারি ভাবে কোনও মেডিক্যাল কলেজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।” জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক কার্তিক মণ্ডল বলেন, “রামপুরহাটে একটি মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে। সিউড়ির বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে সিউড়ি ও বোলপুরের মহকুমা হাসপাতালকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করা হচ্ছে।”

সহ প্রতিবেদন: অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন