অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর তালিকা ঘিরে বিতর্ক

মন্ত্রীর সম্মতি নেই, স্থগিত নিয়োগ

সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা পদে নিয়োগের সফল প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেও তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া ১ ব্লকের ওই প্রকল্পে কর্মী নিয়োগ নিয়ে এই বিতর্কে জড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৩৬
Share:

সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা পদে নিয়োগের সফল প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেও তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। পুরুলিয়া ১ ব্লকের ওই প্রকল্পে কর্মী নিয়োগ নিয়ে এই বিতর্কে জড়িয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

পরীক্ষা নেওয়ার বছর চারেক পরে ফল প্রকাশের পরেও কেন বা কার নির্দেশে সফল প্রার্থীদের তালিকা রাতারাতি প্রত্যাহার করে নেওয়া হল এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। পুরুলিয়া ১ ব্লক এলাকায় ওই প্রকল্পের দায়িত্বে রয়েছে সংস্থাটি। তাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে ৫৮টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দে ১৬১ জন সহায়িকা নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেই পরীক্ষার ফল গত ২৩ সেপ্টেম্বর পুরুলিয়া ২ ব্লকের বোঙাবাড়ি এলাকায় সংস্থার কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙানো হয়। কিন্তু প্রকাশের পরেই রাতারাতি ওই তালিকা সরিয়েও ফেলা হয়। এতেই বিতর্কের সূত্রপাত।

জানা গিয়েছে, সমাজ কল্যাণ দফতরের অধিকর্তার অনুমতি নিয়েই সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সফল প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছিল। কিন্তু এলাকার বিধায়ক হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো পদাধিকার বলে ওই নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁর অগোচরে তালিকা প্রকাশ করায় তিনি অসন্তুষ্ট হন বলে একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এরপরেই রাতারাতি তালিকা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

Advertisement

শান্তিরামবাবু তৃণমূলের জেলা সভাপতিও বটে। এ নিয়ে দলের অন্দরে জলঘোলাও শুরু হয়েছে। এই ব্লকেরই বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “তালিকা প্রকাশ করার পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়ার কোনও যুক্তি থাকতে পারে না। এতে বিভ্রান্তি বাড়বে। কেন না এই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে। কাজেই মানুষজন মনে করবেন দুর্নীতি হচ্ছে। কিন্তু আমরা স্বচ্ছতার পক্ষে।” তাঁর দাবি, অবিলম্বে তালিকা প্রকাশ করা হোক। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক মাণিক দেওঘরিয়া-র দাবি, “আমরা সফল প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছিলাম। কিন্তু জেলা সমাজ কল্যাণ দফতর থেকেই আপত্তি উঠল যে নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যানকে তালিকা প্রকাশের কথা জানানোই হয়নি। তাই আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে।” জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, মন্ত্রী নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হলেও তাঁর অগোচরে ওই তালিকা প্রকাশিত হওয়ায় আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে। তাঁর অনুমতি পেলেই তালিকা প্রকাশ করা হবে।” তবে রাজ্য সমাজ কল্যাণ দফতরের অধিকর্তা সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “পুরুলিয়ার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সফল প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করতেই বলা হয়েছিল। তা প্রকাশ করার পরেও প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে আমার জানা নেই।”

জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো দাবি করেছেন, “শান্তিরামবাবু পদাধিকার বলে সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করতে পারবেন কি না তা আদালতের বিচারাধীন। তাই তাঁর হস্তক্ষেপে তালিকা কী ভাবে প্রত্যাহার করে নেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর সরকারের সম্মতিতে তালিকা প্রকাশের পরে মন্ত্রী কী ভাবে তা আটকান বোঝা যাচ্ছে না। বিধানসভায় বিষয়টি তুলব।” যাঁকে নিয়ে এই বিতর্ক, সেই শান্তিরামবাবু দাবি করেছেন, “তালিকা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে স্থানীয় নিয়োগ কমিটির একটা অনুমোদন লাগে। এ ক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি। তবে শীঘ্রই ওই তালিকা প্রকাশ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন