আদালত থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দোষীদের। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
যুবক খুনের ঘটনায় গ্রামেরই ৩৫ জন বাসিন্দাকে দোষী সাব্যস্ত করল সিউড়ি আদালত। সোমবার এই মামলাটি উঠেছিল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শুভ্রদীপ মিত্রের এজলাসে। আজ, মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা হবে।
১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পাড়ুই থানা এলাকার কসবা পঞ্চায়েতের খিরুলি গ্রামে ঘটনা। এই মামলার সরকারি আইনজীবী অশোককুমার ধর ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ফসল পাহারা কার দায়িত্বে থাকবে এই নিয়ে বিবাদ হয়েছিল গ্রামবাসীদের মধ্যে। অভিযোগ ছিল, ওই দিন সকাল ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে গ্রামের হরিমোড়ল পুকুর থেকে বাড়ি ফিরছিলেন জয়নাল আবেদিন নামে বছর ৩৫-এর এক যুবক। পথে গ্রামেরই ৩৭ জন রড, লাঠি, টাঙি ও বোমা নিয়ে জয়নালের উপর চড়াও হয়ে বেধড়ক মারতে শুরু করে।
খবর পেয়ে জয়নালকে বাঁচাতে এসে বোমার আঘাতে জখম হন এক ভাই কাদের মোল্লা। একই সময়ে বাসে করে গ্রামের কাছাকাছি সাত্তোর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কাজে যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী তথা নিহতের বোন দেলরা বেগম। দাদাকে এ ভাবে মারার খবর তাঁর কানে পৌঁছতেই কাজে না গিয়ে সোজা পাড়ুই থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে একটি আভিযোগ করেন দেলরা। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র-সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তখনও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন জয়নাল। মারত্মক জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসাপাতালে পাঠানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরের দিন বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথেই মারা যান জয়নাল। ঘটনার দিনই মোট ৩৭ জনের বিরুদ্ধে লিখিত আভিযোগ করেন জয়নালের আর এক ভাই শেখ তহিরুদ্দিন।
এর পরে পুলিশ ১৪৮ (খুনের উদ্দেশ্য অস্ত্র-সহ জড়ো হওয়া), ৩০২ (খুন) এবং ৩০৭ (বোমা দিয়ে আঘাত করা) এই তিনটি ধারায় মামলা রুজু করে। ৩৭ জন অভিযুক্তের মধ্যে ইতিমধ্যে দু’জন মারা গিয়েছে। বাকিরা জামিনে মুক্ত ছিল। সোমবার সকলকেই সিউড়ি জেলে পাঠানো হয়। এই মামলায় মোট ১৮ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিচারক উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রামাণ দেখে সকলকে দোষী সাব্যস্ত করেন। প্রসঙ্গত, ওই সময় নিহত ও অভিযুক্তরা সকলেই সিপিএম কর্মী-সমর্থক ছিলেন। বর্তমানে ৩৫ জনের মধ্যে অনেকেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১৮ বছর আগে এই খুনের মামালায় আজ বিচারক কী রায় দেন সে দিকেই তাকিয়ে খিরুলি।