রাজনৈতিক চাপে কাজ করছে পুলিশ: রাহুল

দলের কর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদ সভায় পুলিশকে সতর্ক করে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। শুক্রবার তিনি খাতড়ার মঞ্চে বলেন, “পুলিশ এখন রাজনৈতিক রঙ দেখে। রাজনৈতিক চাপে কাজ করছে।” একই সঙ্গে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমালোচনার চড়া সুর জারি রাখেন। বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতির অরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা শুরু না করলে আগামী দিনে দলের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করার ব্যাপারে চিন্তভাবনা চলছে বলে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খাতড়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৪ ০১:০২
Share:

বৃষ্টির মধ্যেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির সভা। ছবি: দেবব্রত দাস।

দলের কর্মীদের উপর হামলার প্রতিবাদ সভায় পুলিশকে সতর্ক করে দিলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। শুক্রবার তিনি খাতড়ার মঞ্চে বলেন, “পুলিশ এখন রাজনৈতিক রঙ দেখে। রাজনৈতিক চাপে কাজ করছে।” একই সঙ্গে তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমালোচনার চড়া সুর জারি রাখেন। বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতির অরূপ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা শুরু না করলে আগামী দিনে দলের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করার ব্যাপারে চিন্তভাবনা চলছে বলে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি জানিয়েছেন।

Advertisement

রাহুলের বক্তৃতার পরেই খবর আসে মনিয়াডিহি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনার জেরে এ দিনই দলের অন্যতম সম্পাদক নীলাদ্রিশেখর দানা গ্রেফতার হয়েছেন। তাতে সভা ফেরত মানুষের মধ্যে আরও ক্ষোভ ছড়ায়। পুলিশ তৃণমূলের চাপে পড়েই বিজেপি নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলায় একের পর এক ফাঁসাচ্ছে বলে দলের কর্মীদের অভিযোগ। যদিও জেলা পুলিশের কর্তারা এই অভিযোগ মানতে চাননি। তৃণমূলও চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

গত ২৩ জুন খাতড়ায় বিডিও অফিসে একটি ডেপুটেশন এবং দাসের মোড়ে এক সভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। ওইদিন বিজেপির মিছিলে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দাসের মোড়ে বিজেপির সভামঞ্চ তৃণমূলের লোকেরা ভেঙে দিয়েছিল বলে অভিযোগ। জখম হন বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দাস-সহ ২০ জন কর্মী। বিজেপির বিরুদ্ধেও পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। দু’দলের তরফেই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার এতদিন পরেও পুলিশ অবশ্য কাউকে ধরেনি। সে দিনের ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপির পক্ষ থেকে এ দিন দাসের মোড়ে সভা ডাকা হয়েছিল।

Advertisement

সকাল থেকেই অঝোরে পড়ছিল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই ছাতা মাথায় নিয়ে এ দিন বিজেপির কর্মী সমর্থকেরা দাসেরমোড়ে হাজির হন। ভিড়ে ঠাসা সভায় রাহুলবাবু আগাগোড়া চাঁচাছোলা ভাষায় রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেন। তৃণমূলের সাংসদ তাপস পালকে এক চিঠিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তার তীব্র সমালোচনা করে রাহুলবাবু বলেন, “সারা বাংলার মহিলাদের অসম্মান করেছেন তৃণমূলের ওই কীর্তিমান সাংসদ। মহিলাদের অত্যাচার করার জন্য বলেছেন, আর দলকে একটা চিঠি দিয়ে তাপস পাল পার পেয়ে গেলেন। ওই কুমন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে জনসমক্ষে কান ধরে ওই সাংসদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।”

রাজ্যে ক্রমশ বেড়ে চলা নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি অভিযোগ করেন, “আগে লোকে আইন নেই বলে বিহারের নাম করত। এখন আমাদের পশ্চিমবাংলার নাম করছে। আর তাপস পালের মত কীর্তিমান সাংসদরা তৃণমূলের গর্ব।” রাজ্যে বিরোধীদের উপরে হামলার ঘটনা যে ভাবে বাড়ছে তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাহুলবাবু দাবি করেন, সিপিএম আগে বিরোধীদের উপরে যেমন নির্যাতন করত, এখন তৃণমূল সেই একই কায়দায় অত্যাচার শুরু করেছে। তৃণমূল এখন গুন্ডা দিয়ে, পুলিশ দিয়ে মিথ্যা কেস দিয়ে বিজেপিকে আটকাতে চাইছে।

তাপস পালকে আড়াল করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে সংবাদমাধ্যমকে দুষেছেন, তারও কড়া সমালোচনা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেন, “যদি ভিডিও ফুটেজ কিনে থাকে, তাহলেও মিডিয়াকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ মিডিয়া সত্যটা তুলে ধরেছে। এখন সাংসদ যে ওই কথা বলেছেন তা তো প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে।” তবে এই অবস্থা চলতে থাকলে রাজ্যের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন রাহুলবাবু। তাঁর রাহুলবাবুর সাবধানবাণী, “রাজ্য প্রশাসন যে ভাবে চলছে তাতে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। এটা বাংলার পক্ষে অমঙ্গলকর। তৃণমূলের পক্ষেও অমঙ্গলকর হবে। আগামী দিনে তৃণমূলের বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

এ দিনের সভায় এক হাজারের বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। বৃষ্টির মধ্যেও ছাতা মাথায় নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বহু মানুষকে বক্তৃতা শুনতে দেখা যায়। রাহুলবাবু ছাড়াও দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, জেলা সভাপতি জয়ন্ত মণ্ডল, জেলার মুখপাত্র অজয়কুমার ঘটক, জেলা নেতা অভিজিৎ দাস, জীবন চক্রবর্তী-সহ বহু নেতা নেত্রী ছিলেন। এ দিনের সভাকে ঘিরে পুলিশি নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন