রাস্তায় মঞ্চ গড়ে বিতর্কে পুরসভা

এত দিন শহরের রাস্তা বেআইনি ভাবে দখল করে ব্যবসা করার অভিযোগ উঠত হকারদের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে মাঠে নামতে দেখা গিয়েছে পুরসভাকে। এ বার সেই পুরসভাকেই পূর্ত দফতরের রাস্তা দখল করে মুক্তমঞ্চ গড়তে দেখা গেল জেলা সদর বাঁকুড়ায়। শহরের কেন্দ্রস্থল মাচানতলায় পুরসভার ওই মুক্তমঞ্চ তৈরি করায় এতে যানজট আরও বাড়বে বই কমবে না বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪০
Share:

পুরসভার সাফাই, হকার উচ্ছেদ করতেই ব্যস্তবহুল মাচানতলায় মুক্তমঞ্চ গড়া হচ্ছে। বাস্তব ছবিটা কিন্তু অন্য। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

এত দিন শহরের রাস্তা বেআইনি ভাবে দখল করে ব্যবসা করার অভিযোগ উঠত হকারদের বিরুদ্ধে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তাদের উচ্ছেদ করতে মাঠে নামতে দেখা গিয়েছে পুরসভাকে। এ বার সেই পুরসভাকেই পূর্ত দফতরের রাস্তা দখল করে মুক্তমঞ্চ গড়তে দেখা গেল জেলা সদর বাঁকুড়ায়।

Advertisement

শহরের কেন্দ্রস্থল মাচানতলায় পুরসভার ওই মুক্তমঞ্চ তৈরি করায় এতে যানজট আরও বাড়বে বই কমবে না বলেই মনে করছেন বাসিন্দারা। তাই পুরসভার ওই নির্মাড় কাজ নিয়ে শহরজুড়ে নানামহলের শুরু হয়েছে জোক বিতর্ক। যদিও পুরপ্রধান শম্পা দরিপার দাবি, “মঞ্চের জন্য রাস্তায় কোনও ভাবেই যানজট বাড়বে না।”

মাচানতলার পাঁচমাথার মোড়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির নীচে আগে হকাররা পসরা নিয়ে বসতেন। তাদের অস্থায়ী দোকানের প্লাস্টিকের ছাউনির আড়ালে চলে যেত নেতাজির মূর্তি। এ ছাড়া হকাররা রাস্তার একাংশ দখল করে থাকায় শহরের কেন্দ্রস্থলের ওই এলাকায় দিনের ব্যস্ত সময়ে যানজটও পাকিয়ে উঠত। ইতিপূর্বে ওই এলাকা থেকে হকারদের সরাতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুরসভাকেও নামতে দেখা গিয়েছে। যদিও তাতে এতদিন হকারদের হটানো যায়নি। এতদিন হকাররা যে এলাকাজুড়ে পসরা নিয়ে বসতেন, সেখানেই পুরসভার মুক্তমঞ্চ গড়া হচ্ছে।

Advertisement

পুরপ্রধান অবশ্য দাবি করে যাচ্ছেন, “মঞ্চ গড়ায় হকার সমস্যা এড়ানো যাবে। ওই জায়গাতে এতদিন কিছু ফল বিক্রেতা ব্যবসা করতেন। ফলে এলাকাটা নোংরা আবর্জনায় ভরে যেত। নেতাজির মূর্তিও ঢাকা পড়ত কালো পলিথিনে। এলাকা থাকবে পরিষ্কার। পাশাপাশি মাচানতলা মোড়ে প্রায় পথসভা, ছোটখাটো অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। মঞ্চ না থাকায় একটা সমস্যা হতো। এ বার সেই সমস্যাও মিটবে।”

বাস্তবে কিন্তু অন্য ছবিই দেখা যাচ্ছে। নির্মীয়মান মঞ্চের সামনে যথারীতি ফল নিয়ে হকাররা বসছেন। ওই মঞ্চে শুক্রবার মদন মিত্রের গ্রেফতারির প্রতিবাদে তৃণমূল নেতৃত্ব সভা করেছেন। তাতে যা ভিড় হয়েছিল, তাতে ওই এলাকায় যানজট পাকিয়ে ওঠে। সেই ভিড় ঠেলে এগোতে পথচারীদের রীতিমতো জেরবার হতে হয়। এ বার ওই মঞ্চে অন্য দলগুলিও নিয়মিত সভা করলে এলাকায় রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দুষ্কর হয়ে উঠবে বলে বাসিন্দাদের আশঙ্কা। তাঁদের প্রশ্ন, মুক্তমঞ্চ গড়ার আরও কোনও খোলা জায়গা কি পুরসভা পেল না? বাঁকুড়া শহরের অরবিন্দ নগরের বাসিন্দা পেশায় সঙ্গীত শিল্পী জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই ছোট এলাকায় মঞ্চ গড়ার যুক্তিই খুঁজে পাচ্ছি না। এখানে অনুষ্ঠান হলে শ্রোতাদের তো রাস্তার উপরে বসতে হবে। গাড়ির শব্দ আর লোকজনের কোলাহলে অনুষ্ঠানের পরিবেশ তো নষ্ট হবে!”

এই পরিস্থিতিতে পুরসভার বিরুদ্ধেই কোনও কোনও মহল বেদখল করে মুক্তমঞ্চ গড়ার অভিযোগ তুলেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রাস্তাটি জেলা পূর্ত দফতরের। অনুমতি মেলা তো দূরের কথা, মঞ্চ গড়ার জন্য অনুমতি চেয়ে কোনও আবেদনও করা হয়নি পুরসভার তরফে।

পূর্ত দফতরের বাঁকুড়ার এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রতাপ পুরকায়েত বলেন, “শুনেছি রাস্তার উপরে মঞ্চ গড়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কাছে মঞ্চ গড়ার জন্য কোনও অনুমতি চাওয়া হয়নি।” অনুমতি যে নেওয়া হয়নি সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুরপ্রধানও। তিনি বলেন, “কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তার প্রয়োজনীয়তাও নেই। পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা মঞ্চ গড়তে কোনও আপত্তি জানায়নি।” পুরপ্রধানের মন্তব্য শুনে জেলা প্রশাসনেরই কিছু আধিকারিকর বিস্ময় “প্রশাসনের পদে থেকে তিনি কি এই মন্তব্য করতে পারেন?”

মঞ্চ গড়ার জন্য যানজট যে বাড়বে তা মানছে পুলিশ মহলও। এই মঞ্চ গড়ার বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে কোনও অনুমতিই নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন এক পুলিশ কর্তা। তিনি বলেন, “ওই রাস্তায় মঞ্চ গড়ার জন্য পুরসভা কোনও অনুমতি নেয়নি। এতে তো উল্টে ওই এলাকায় যানজট বাড়বে। যান নিয়ন্ত্রণে সমস্যা বাড়বে ট্রাফিক পুলিশের।”

বাঁকুড়া আদালতের আইনজীবী তথা জেলা কংগ্রেস নেতা অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি না নিয়ে রাস্তায় মঞ্চ গড়ে পুরসভা বেআইনি কাজ করেছে।” তাঁর কটাক্ষ, “পুরকর্তৃপক্ষের কাজ দেখে মনে হচ্ছে, বিনা অনুমতিতে রাস্তা দখল করে বসে পড়া হকারদের কাজ। এহেন হকার সুলভ আচরণ করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতেই ফেললেন পুরপ্রধান।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “এটা খুবই অন্যায়। রাস্তার উপরে এ ভাবে মঞ্চ নির্মাণ করে আদতে জবরদখলকেই স্বীকৃতি দিল তৃণমূলের প্রশাসন।”

মুক্তমঞ্চ গড়া নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে পুরসভার অন্দরেও। ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর স্বরূপ সেন বলেন, “কারও সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা না করেই পদক্ষেপ করছেন তৃণমূলের পুরপ্রধান। আমরা প্রতিবাদ করলে কানেও তুলছেন না। মাচানতলার মোড়ে এই মঞ্চের জন্য আখেরে সাধারণ মানুষকেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন