শুকিয়ে গিয়েছে জলাশয়, জল সমস্যা সাঁইথিয়ায়

খালি কলসি নিয়ে বিড় বিড় করতে করতে বাড়ি ফিরছিলেন এক মহিলা। কী হল জিজ্ঞেস করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। বললেন, “এই জল জল করে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আধঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁডিয়ে এক কলসিও জল পেলাম না।” ওই বধূর কথা থেকেই পরিষ্কার, গরম পড়তেই জলে টান পড়েছে সাঁইথিয়া পুরসভা এলাকায়ও। সাঁইথিয়া শহরের লোকসংখ্যা ৪৫ হাজার ৫০০। এ ছাড়াও নানা প্রয়োজনে আশপাশ এলাকার বহু মানুষজন এই শহরে আসেন।

Advertisement

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৪ ০১:২৫
Share:

খালি কলসি নিয়ে বিড় বিড় করতে করতে বাড়ি ফিরছিলেন এক মহিলা। কী হল জিজ্ঞেস করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। বললেন, “এই জল জল করে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আধঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁডিয়ে এক কলসিও জল পেলাম না।” ওই বধূর কথা থেকেই পরিষ্কার, গরম পড়তেই জলে টান পড়েছে সাঁইথিয়া পুরসভা এলাকায়ও।

Advertisement

সাঁইথিয়া শহরের লোকসংখ্যা ৪৫ হাজার ৫০০। এ ছাড়াও নানা প্রয়োজনে আশপাশ এলাকার বহু মানুষজন এই শহরে আসেন। বসবাসও করেন। এত মানুষের জন্য জলের জোগান বলতে মূলত পুরসভার ট্যাপ কল। ফলে এই শহরে ১২ মাস জলের সমস্যা লেগেই থাকে। গরম পড়লেই সেই সমস্যা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই শহরে হাতে গোনা কয়েকটি পুকুর আছে। সরকারি ও বেসরকারি বেশ কিছু কুয়ো আছে। গরম পড়লেই অধিকাংশ পুকুর ও কুয়ো শুকিয়ে যায়। ব্যবহার না হওয়ায় কয়েকটি কুয়ো আবার মজে গিয়েছে। তার উপরে মাটির নীচে পাথর ও খড়িমাটি আছে এই শহরে। ফলে অন্যান্য শহর বা গ্রামের মতো বাড়ি বাড়ি নলকূপও নেই। বাসিন্দাদের কেউ কেউ জল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিজেরা বাড়িতে সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়েছেন। কিন্তু শহরের অধিকাংশ মানুষজন এখনও পুরসভার কলের উপর নির্ভরশীল।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে সাঁইথিয়ায় দু’টি জলাধার আছে। একটি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৬০ হাজার গ্যালন এবং অন্যটি ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১ লক্ষ গ্যালনের একটি জলাধার রয়েছে। রাস্তা ও বাড়ির কলের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৩০ ও ৪৭০। শহরের জনসংখ্যা অনুপাতে কলের সংখ্যা সামান্যই। এই জল সমস্যার জন্য শহরের বাসিন্দারা পরিকাঠামোর অভাবকেই দায়ী করেছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিহারিপট্টীর বাসিন্দা বাবুদ্দিন মনসুরি, মহম্মদ ইমরান, বৃদ্ধা নুরিয়া বিবি বলেন, “গভীর নলকুপ বসার পরে জল সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার গভীর নলকুপগুলিতে ঠিক মতো জল না ওঠায় ফের সমস্যা হয়েছে।” একই অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন মল্লিকা মাহারা, ক্ষমা মাহারা, রাখী টিবরিওয়ালারা। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিবার গরমের সময় জলস্তর নেমে যায়। ফলে অধিকাংশ কুয়ো বা পুকুর শুকিয়ে যায়। এ বার জলস্তরের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, নদী গর্ভের গভীর নলকুপে জল উঠছে না।” শুধু নদী গর্ভের নলকুপই নয়, শহরের ১৬টি ওয়ার্ডে ৮০টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। তার মধ্যেও কয়েকটিতে জল উঠছে না বললেই চলে। পুরপ্রধান বিপ্লব দত্ত বলেন, “নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় নদী গর্ভ থেকে জল উঠছে না। নদীতে একটু করে জল ছাড়ার জন্য ইতিমধ্যে দু’বার ময়ূরাক্ষী সেচ দফতরকে দু’টি চিঠি পাঠানো হয়েছে। জল পরিষেবা সচল রাখতে নদীর যে সব যায়গায় পাম্প বসানো আছে, সে সব স্থানে বাঁধ দিয়ে জল ধারনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। জল পরিষেবা সচল রাখতে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার কারনেই এই অবস্থা।”

Advertisement

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, জল সমস্যা মেটাতে সম্প্রতি ‘উআইডিএসএসএমটি’ প্রকল্পে সম্প্রতি ১৩ কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে সাঁইথিয়ার জন্য। পুরসভার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র(জল) সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, “এই মুহূর্তে ৩০ কিলোমিটারের মতো জলের পাইপ লাইন আছে। সারাদিন দু’বারে চার লক্ষ গ্যালনের মতো জল দেওয়া হয়। প্রয়োজন ৯-১০ লক্ষ গ্যালন জলের।” তাঁর দাবি, “পুরসভার বিভিন্ন সাবমার্সিবল, নদী, কিছু কুয়ো, পুকুর ও বেশ কিছু বাসিন্দাদের নিজস্ব জলের উৎস থাকায় খুব একটা সমস্যা হয় না। এই সমস্যা সাময়িক। এই সমস্যা মেটাতে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে ১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে নতুন জল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।” কাজেই খুব শীঘ্রই শরবাসীর জলকষ্ট দূর হয়ে যাবে বলে আসা পুরপ্রধানের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন