শিল্প না হলে ফের জমি ফেরতের দাবি

হয় শিল্প গড়ো, না হয় জমি ফেরত দাও। জমি দেওয়ার সাত বছর পরেও শিল্প না হওয়ায় এই দাবি তুললেন জমিহারাদের একাংশ। শুক্রবার সেই দাবিতেই রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিল ‘নতুনডি অঞ্চল কৃষি কমিটি’। প্রশাসনের কাছে কমিটি লিখিত ভাবে জানিয়েছে, নতুনডি অঞ্চলের অধিগৃহীত জমিতে কী ধরনের ভারী শিল্প গড়া হবে, সে বিষয়ে এক মাসের মধ্যে জানাতে হবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০১:১২
Share:

শিল্প চেয়ে রঘুনাথপুর শহরে মিছিল নতুনডির জমি-মালিকদের। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

হয় শিল্প গড়ো, না হয় জমি ফেরত দাও। জমি দেওয়ার সাত বছর পরেও শিল্প না হওয়ায় এই দাবি তুললেন জমিহারাদের একাংশ। শুক্রবার সেই দাবিতেই রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিল ‘নতুনডি অঞ্চল কৃষি কমিটি’। প্রশাসনের কাছে কমিটি লিখিত ভাবে জানিয়েছে, নতুনডি অঞ্চলের অধিগৃহীত জমিতে কী ধরনের ভারী শিল্প গড়া হবে, সে বিষয়ে এক মাসের মধ্যে জানাতে হবে। না হলে তাদের জমি ফিরিয়ে দিতে হবে প্রশাসনকে।

Advertisement

এই নতুনডি রঘুনাথপুরের সেই এলাকা, যাকে রাজ্যের শিল্পায়নের অন্যতম মুখ হিসাবে তুলে ধরছে তৃণমলের সরকার। বাম আমলে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি পঞ্চায়েতের কয়েকটি মৌজায় দু’টি সুসংহত ইস্পাত প্রকল্প গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। সাত বছর ধরে এখনও পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কমবেশি ১৬০০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। কিন্তু, শিল্প গড়ে ওঠেনি। নতুনডি ও দুরমুট মৌজায় কারখানা গড়তে জমি দেওয়া হয়েছিল জয় বালাজিকে। রঘুনাথপুর শহরে তাদের অফিসটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। অন্য শিল্পসংস্থা শ্যাম স্টিল রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, রঘুনাথপুরে তারা কারখানা গড়ছে না। এর পরে রাজ্য সরকার ওই অঞ্চলে ৫০০ একর জমি দিয়েছিল রিলায়েন্স সিমেন্টকে। পাশেই ইমামি গোষ্ঠীও শিল্প গড়বে বলে সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন শিল্পমন্ত্রী। কিন্তু এখনও সে কাজ শুরু হয়নি।

এই অবস্থায় জমি ফেরতের দাবি তুলেছেন জমিহারারা। শুক্রবার সকালে ব্লক অফিস থেকে মিছিল করে মহকুমাশাসকের দফতরে যান কৃষি কমিটির শতাধিক সদস্য তথা জমি মালিক। মহকুমাশাসকের সঙ্গে আলোচনায় তাঁরা জানান, সাত বছর আগে শিল্প গড়ার জন্য তাঁদের জমি নেওয়া হলেও এখনও কারখানার একটি ইঁট গাঁথা হয়নি। নতুনডি অঞ্চল কৃষি কমিটি’-র সম্পাদক শ্রীলোক মাজি বলেন, “আমরা প্রশাসনকে বলেছি, অধিগৃহীত জমিতে রাজ্য সরকার কী ধরনের শিল্প গড়তে চাইছে, তা এক মাসের মধ্যে আমাদের জানাতে হবে। নয়তো জমি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকে।” কমিটির ব্যাখ্যা, এলাকায় গড়ে ওঠা শিল্পে কর্মসংস্থান হবে ভেবেই কৃষকেরা জমি দিয়েছিলেন। কিন্তু, সাত বছর অপেক্ষা করেও কর্মসংস্থান হয়নি। ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া অর্থ শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ কারখানা গড়ার জন্য মাটি ভরাটের কাজ হওয়াতে জমির শ্রেণি চরিত্রের বদল ঘটেছে। সেই জমিতে আর চাষ করাও সম্ভব হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন এলাকার কৃষি শ্রমিকেরা। কারণ, ওই জমিই ছিল তাঁদের রোজগারের উৎস।

Advertisement

কমিটির সদস্য তথা দুরমুট গ্রামের কৃষি শ্রমিক জগদীশ বাউরি, ত্রিলোচন বাউরি, বাহাদুর বাউরিদের ক্ষোভ, “দিনমজুরির কাজ করতে আসানসোল-সহ অন্যত্র যেতে হচ্ছে। সেখানেও প্রতিদিন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। কারখানা হলে অন্তত এখানে অদক্ষ শ্রমিকের কাজ পাওয়া যেতে পারতো। সেই সম্ভবনাও আর দেখা যাচ্ছে না।” নতুনডি অঞ্চলের জমি মালিকদের একাংশেরই বাধার জেরে বন্ধ হয়ে গেছে এলাকায় ডিভিসি-র প্রকল্পের রেললাইন পাতার কাজ। প্রশাসনের কাছে কমিটির দাবি, রেললাইন পাতার কাজে স্থানীয়দেরই নিতে হবে।

মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) সুরেন্দ্রকুমার মিনা বলেন, “অধিগৃহীত জমিতে শিল্প গড়া এবং শিল্প না হলে জমি ফেরতের বিষয়টি রাজ্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। ফলে, জমি মালিকদের এই দাবি জেলার মারফত রাজ্যের কাছে পাঠানো হবে। তবে, রেললাইন নির্মাণে স্থানীয়দের কাজ দেওয়ার জন্য ডিভিসিকে বলা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন