সেই বাজার নেই, প্রদীপ শিল্পীর ঘরেই অন্ধকার

এলইডি-র দাপটে পিছু হটেছে মাটির প্রদীপ। এক সময়ে দীপাবলিতে মাটির প্রদীপ কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে গিজগিজ করত পুরুলিয়া শহরের বড়হাটের মোড়। এ বার কিন্তু কালীপুজোর আগের দিনে সেই ভিড় চোখে পড়েনি।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৬
Share:

পরখ। রংচঙে পুতুল-প্রদীপ পুরুলিয়ার বাজারে।—নিজস্ব চিত্র।

এলইডি-র দাপটে পিছু হটেছে মাটির প্রদীপ।

Advertisement

এক সময়ে দীপাবলিতে মাটির প্রদীপ কিনতে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে গিজগিজ করত পুরুলিয়া শহরের বড়হাটের মোড়। এ বার কিন্তু কালীপুজোর আগের দিনে সেই ভিড় চোখে পড়েনি। উল্টো দিকে, এলইডি আলো কিনতে ক’দিন ধরেই শহরের বিভিন্ন দোকানে আট থেকে আশির উপস্থিতি দেখা গিয়েছে। রংচঙে মাটির খেলনার বিক্রি অবশ্য কমেনি।

পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে কোটলুই গ্রামের ভলু কুমার বংশ পরাম্পরায় মাটির কাজ করে আসছেন। এ বার তিনি আশা নিয়ে এসেছিলেন বাজারে। জানালেন প্রদীপের দামও বাড়াননি। ছোট প্রদীপের দাম ৪০ পয়সা, মাঝারি প্রদীপ ৬০-৭০ পয়সা। তার চেয়ে বড় এক টাকা বা দু’টাকা। তাঁর কথায়, “এ বারে দেখছি, একেবারেই বিক্রি নেই। কাঁচামাল-সহ অন্য জিনিসের দাম বেড়েছে। কিন্তু প্রদীপের দাম বাড়াইনি। তাতেও ক্রেতা বিমুখ।” আর এক বিক্রেতা নরসিংহ কুমার বলেন, “লোকজন আসছেন। দাম জিজ্ঞেস করে চলে যাচ্ছেন।”

Advertisement

এ সময় পুরুলিয়া শহরে রঙিন খেলনা ও পুতুল প্রদীপের চাহিদা থাকে। পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে কাটিন এলাকার বাসিন্দা গীতা কুম্ভকারও পসরা সাজিয়েছেন মানভূম স্টেডিয়াম মোড়ে। তাঁর কথায়, “১৪ প্রদীপ, পঞ্চপ্রদীপের আর তেমন বিক্রি নেই। এই ধরনের প্রদীপে পুতুলকে ঘিরে অনেক অনেক প্রদীপ থাকে। গীতাদেবী জানান, দাম সে ভাবে বাড়েনি। ১৪ প্রদীপের দাম ৩৫ টাকা। কিন্তু আগের মতো বিক্রি নেই। কাটিনেরই বাসিন্দা সীতারাম কুম্ভকার আক্ষেপ করেন, “এই পেশায় আমরাই বোধহয় শেষ প্রজন্ম। আর কেউ এই পেশায় আসবে বলে মনে হয় না।” তিনি বুঝছেন, মানুষের চাহিদা আসলে বদলে গিয়েছে। তাই দাম কমিয়েও ক্রেতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। তবে পরিবারের মঙ্গল হবে, এই আশাতে মাটির প্রদীপ কিনছিলেন মিঠু কালিন্দী, লিলু কালিন্দীরা।

যদিও শহরের কিছু বাসিন্দার মতে, মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। রোজগারও বেড়েছে। কিন্তু মৃত্‌শিল্পীরা তাল মিলিয়ে শিল্পসামগ্রীর পরিবর্তন আনেননি। শিল্পের কদর এখনও রয়েছে। প্রদীপে একটু নতুনত্ব নিয়ে এলে কেনাকাটা বাড়বে। শিল্পীরাও দাম পাবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন