সিউড়ির বিদ্রোহী কাউন্সিলর গেলেন বিজেপিতেই

সিউড়ি পুরসভার ১৫ নম্বরের তৃণমূল কাউন্সিলর দীপক দাস (বাবন) ফিরে গেলেন তাঁর পুরনো দল বিজেপিতেই। সোমবার দীপকবাবু তাঁর অনুগামীদের নিয়ে কলকাতার বিজেপি কার্যালয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “বাবন ভাল সংগঠক। এ দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে। তাঁকে সামনে রেখেই সিউড়ি পুরসভায় আমাদের দল প্রভাব বিস্তার করবে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০১:১৭
Share:

সিউড়ি পুরসভার ১৫ নম্বরের তৃণমূল কাউন্সিলর দীপক দাস (বাবন) ফিরে গেলেন তাঁর পুরনো দল বিজেপিতেই।

Advertisement

সোমবার দীপকবাবু তাঁর অনুগামীদের নিয়ে কলকাতার বিজেপি কার্যালয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “বাবন ভাল সংগঠক। এ দিন বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তাঁর অনুগামীদের নিয়ে। তাঁকে সামনে রেখেই সিউড়ি পুরসভায় আমাদের দল প্রভাব বিস্তার করবে।”

দলীয় পুরপ্রধানের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অতীতে একাধিক বার সিউড়ি পুরসভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দীপকবাবু। গত বছর পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থাও এনেছিলেন। এমনকী, পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও। শেষবার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন পুরসভা চত্বরেই। মঞ্চ বেঁধে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির সামনে লাগাতার অনশনে বসেছিলেন দীপকবাবু এবং তাঁর অনুগামী ৮ কাউন্সিলর। সেখানে উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে সিউড়ির জলপ্রকল্প-সহ একাধিক ক্ষেত্রে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি বাসিন্দাদের জন্য ১১ দফা দাবিও জানানো হয়। উজ্জ্বলবাবুর কাছে পুরসভার সমস্ত খরচের হিসেব জনসমক্ষে তুলে ধরার দাবিও জানানো হয়েছিল। উজ্জ্বলবাবুদের অবশ্য দাবি ছিল, দীপকবাবু পুরপ্রধান হতে চান। তাই নাটক করছেন। অভিযোগ সঠিক হলে দল বা প্রশাসন ঠিকই ব্যবস্থা নিত। অনশন নিয়ে হৈচৈ শুরু হলেও কিছু দিনের মধ্যেই অবশ্য দীপকবাবুরা তা প্রত্যাহার করে নেন।

Advertisement

দীপকবাবুর রাজনৈতিক উত্থান অবশ্য বিজেপির হাত ধরেই। ২০০০ সালে তিনি প্রথম বিজেপির প্রতীকে জেতেন। ২০০১ থাকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বিজেপি উপ-পুরপ্রধান ছিলেন। অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করে। এরপর তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১০ এর পুরভোটে তিনি জয়ী হন তৃণমূলের টিকিটেই। সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষেরও অত্যন্ত ঘনিষ্ট জন ছিলেন দীপকবাবু। দলের একাংশের কথায়, তিনি স্বপনবাবুর পরামর্শদাতাও ছিলেন। স্বপনবাবু যখনই কলকাতা থেকে আসতেন তখনই ছায়াসঙ্গী থেকেছেন দীপকবাবু।

এ দিন ফোনে স্বপনবাবুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি তাঁর। দীপকবাবুর দলবদল প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি সিউড়ির তৃণমূল পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ও। তিনি শুধু বলেন, “এ ব্যাপারে যা বলার জেলা তৃণমূল নেতৃত্বই বলবে।” আগেই দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল দীপকবাবুকে তৃণমূলের কেউ নন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর জবাব ছিল, “ওই অনশনকারীদের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। ওঁরা তৃণমূল দলের কেউ নন। নাটক করে উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছেন।” আর এ দিন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ সিংহ বলেছেন, “দীপক দাস কোনও দিনই তৃণমূলের লোক ছিলেন না। বিজেপিই ওঁর আসল ঘর।”

দীপকবাবুর বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে এ দিন কোনও খবর ছিল না বিজেপির জেলা নেতৃত্বের কাছে। সে নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা রাজনৈতিক মহলে নানা কথা ছড়িয়েছে। জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “বাবনবাবুর বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কোনও খবর নেই।”

বিজেপিতে যোগ দিয়ে কলকাতা থেকে ফোনে বাবনবাবু বলেন, “তৃণমূল পরিচালিত সিউড়ি পুরবোর্ডের কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তি বিশেষ করে পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় গরিবদের বাড়ি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করেছেন। এখনও পর্যন্ত শহরে পানীয় জলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা হয়নি। দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও অভিযোগ জানানো হলেও, কোনও কাজ হয়নি। ফলে দলত্যাগ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন