স্কুলে বিদ্যুৎ নেই, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি কচিকাঁচাদের

‘মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু, পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ এটুকু ঠিকানাই ওদের জানা। আর সেখানেই চিঠি পাঠিয়ে ‘শ্রদ্ধেয় দিদি’কে নিজেদের দুর্দশার কথা জানিয়েছে বীরভূমের একটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের বারো জন ছাত্রছাত্রী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের নালিশ, আবেদন করার এক বছর পরেও তাদের স্কুলে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি।

Advertisement

অর্ঘ্য ঘোষ

ময়ূরেশ্বর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০২:২৮
Share:

মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা পড়ুয়াদের চিঠি। নিজস্ব চিত্র।

‘মুখ্যমন্ত্রী সমীপেষু, পশ্চিমবঙ্গ সরকার’ এটুকু ঠিকানাই ওদের জানা। আর সেখানেই চিঠি পাঠিয়ে ‘শ্রদ্ধেয় দিদি’কে নিজেদের দুর্দশার কথা জানিয়েছে বীরভূমের একটি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রের বারো জন ছাত্রছাত্রী। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের নালিশ, আবেদন করার এক বছর পরেও তাদের স্কুলে বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি। এ দিকে এই প্রচণ্ড গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় তারা খুব কষ্টও পাচ্ছে। এই অবস্থায় স্কুলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের এই বিনীত নিবেদন।

Advertisement

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০০৬ সালে তৈরি হয়েছিল ময়ূরেশ্বরের গিধিলা মাধমিক শিক্ষা কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই স্কুলছুট হওয়ার পর আবার ভর্তি হয়েছে কেন্দ্রে। স্কুলের ১০০ ফুট দূরেই বিদ্যুতের খুঁটি। কিন্তু দীর্ঘ আট বছরেও সেই দূরত্ব ঘোচেনি। আজও আঁধারে ১৫৪ জন পড়ুয়ার ওই স্কুল। আগে আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। তাই বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করা যায়নি। কিন্তু পড়ুয়াদের কষ্ট দেখে স্কুলের ক্লাসঘরগুলিতে আলো-হাওয়ার ব্যবস্থা করতে চায় বর্তমান স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক কৃপাময় দাস বলেন, “নিয়ম মেনে ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আজও বিদ্যুৎ আসেনি।” প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বহুবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলেই স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ। ফলে এই প্রচণ্ড গরমে পড়ুয়াদের নিয়ে চরম সমস্যায় গোটা স্কুল।

বিদ্যুৎহীন স্কুলের দুই সহকারী শিক্ষক জিতেন্দ্রনাথ সরখেল এবং সুনীলকুমার বসুর অভিজ্ঞতা, “চড়া রোদে দোতলার ছাদ এতই গরম হয়ে যায় যে তার নীচে বসাই যায় না। গরমে ছাত্রছাত্রীরা হাঁসফাঁস করতে থাকে। তখন তাদের পড়ানোর পরিবর্তে হাতপাখা নিয়ে হাওয়া করতে হয়।” শুধু পঠনপাঠনই নয়, সমস্যা হয় মিড-ডে মিলেও। ওই স্কুলে মিড-ডে মিলের দায়িত্বে থাকা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী সতীকা বায়েন বলেন, “গরমে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। রান্নাঘরে পাখা থাকলে খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কমে।” কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় সেই সুযোগটুকুও মেলে না বলে জানান আর এক সহকারী শিক্ষক মহম্মদ আবুল খায়ের।

Advertisement

কাঁচাহাতে লেখা ওই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ঠিক কী লিখেছে ওরা?

স্কুলের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন লক্ষ্মী, রাজীব, নীলমণি, করবী, সৌরভরা চিঠির শুরুতেই জানিয়েও দিয়েছে, “জানি না দিদি সম্বোধন করায় আপনি রাগ করেছেন কি না। কিন্তু বড়দের আপনাকে ওই সম্বোধন করতে দেখে আমরাও তাই করলাম।” দিদির কাছে তাদের আবেদন, “আমরা শুনেছি আপনার নির্দেশে বহু দুঃস্থ ছাত্রছাত্রী রাতারাতি বিদ্যুৎ-এর আলো পেয়েছে। এক বছর আগে টাকা জমা দিয়েও আমাদের বিদ্যালয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি। শিক্ষক মশাইরা ঘুরে ঘুরে হয়রান হয়ে পড়েছেন। এই গরমে আমরাও খুব কষ্ট পাচ্ছি। গরমে মিড-ডে মিলের খাবারও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের বিনীত নিবেদন, দিদি আপনি আমাদের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিন।”

স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য তথা সংশ্লিষ্ট ঢেকা পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য ছায়ারানি ভল্লা, সুনীল বায়েনরা বলছেন, “গরমে ওদের কষ্ট আর দেখতে পারছি না। টাকা জমা দেওয়া সত্ত্বেও কেন স্কুলে গত এক বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া গেল না, তার উত্তর দফতরকে দিতেই হবে।” ময়ূরেশ্বর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের স্টেশন ম্যানেজার গঙ্গাধর মালির দাবি, “ওই স্কুলে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য যথা সময়েই ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কেন এখনও তা হল না, খোঁজ নিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।” ওই ঠিকাদার এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

হতাশ না হয়ে অষ্টম শ্রেণির মিতালী, সপ্তম শ্রেণির কৃষ্ণধনরা কিন্তু বলছে, “দাবি আদায়ের জন্য আমরা পড়া বন্ধ করে ধর্নায় বসতে পারি না। আবার পথ অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে অসুবিধায় ফেলার কথাও ভাবতে পারি না। সমস্যা মেটাতে তাই দিদির কথাই মনে পড়েছে। এখন ওঁর উত্তরেরই অপেক্ষা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন