স্কুলের পরিবেশ ভাল ফল করতে সাহায্য করেছে

মাধ্যমিকে রাজ্যে মেধা তালিকায় দশম স্থানে থেকে ফের জেলার শীর্ষে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ। এই স্কুলের ছাত্র রূপককুমার ঠাকুর ৬৭৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় ঠাঁই করে নেওয়ার পাশাপাশি জেলায় ছাত্রদের মধ্যে সেরার শিরোপাও পেয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০১:০৪
Share:

রূপক ও সাবর্ণী।—নিজস্ব চিত্র।

মাধ্যমিকে রাজ্যে মেধা তালিকায় দশম স্থানে থেকে ফের জেলার শীর্ষে পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ। এই স্কুলের ছাত্র রূপককুমার ঠাকুর ৬৭৩ নম্বর পেয়ে রাজ্যের মেধা তালিকায় ঠাঁই করে নেওয়ার পাশাপাশি জেলায় ছাত্রদের মধ্যে সেরার শিরোপাও পেয়েছে। বিহারের মধুবনি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম সিরিয়াপুরের বাসিন্দা রূপক পঞ্চম শ্রেণি থেকেই এই বিদ্যাপীঠের ছাত্র। রূপকের কথায়, “ছোটবেলায় গ্রামে থাকতেই শুনেছিলাম, পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ খুব ভাল স্কুল।”

Advertisement

আইআইটি প্রবেশিকার প্রশিক্ষণ নিতে রূপক এখন দিল্লিতে। বৃহস্পতিবার সকালেই সে বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে নিজের ভাল ফলের কথা জানতে পারে। ২০১১ সালেও অঙ্কে সে নিজের প্রতিভার পরিচয় রেখেছিল। ওই বছর আন্তর্জাতিক অঙ্ক অলিম্পিয়াডে তৃতীয় স্থান পায়। ‘বিহার গৌরব’ সম্মানও পায় নিজের রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কাছ থেকে। এ দিন দিল্লি থেকে রূপক বলে, “ভবিষ্যতে আইএএস হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।”

তাঁর জেলা মধুবনি ও পড়তে আসা পুরুলিয়ার মধ্যে সে খুব মিল খুঁজে পায়। মা মধুমিতা কুমারী সিরিয়াপুরেই একটি সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ফোনে জানালেন, ছেলের এই ফলে খুব ভাল লাগছে। এই ফলের জন্য রূপক কৃতিত্ব দিয়েছে বিদ্যাপীঠের শিক্ষক ও পরিবেশকে। রূপকের কথায়, “ছাত্রাবাসে সহপাঠীরাই হোক বা ক্লাসে শিক্ষকেরা, প্রত্যেকটা জায়গাই অন্য রকম। এ বার এই পরিবেশ ভীষণ ‘মিস’ করব।” বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বামী শক্তিপ্রদানন্দ বলেন, “রূপক আমাদের খুবই ভাল ছাত্র। আশা করি আগামী দিনেও ও ভাল ফল করবে। আমরা গতবারও রাজ্যে সপ্তম স্থানে ছিলাম। এ বার দশম স্থানে।”

Advertisement

জেলার মেয়েদের মধ্যে ফের শীর্ষে পুরুলিয়া রাষ্ট্রীয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সাবর্ণী ভট্টাচার্য। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭১। পুরুলিয়া শহরের দুলমি এলাকার বাসিন্দা সাবর্ণীর কথায়, “৭টি বিষয়ে টিউশনি থাকলেও পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি রেফারেন্স বই পড়ে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। টেস্টে ৬৫৮ নম্বর এসেছিল। তখনই ভেবেছিলাম, প্রস্তুতি নিলে আরও একটু ভাল ফল হতে পারে।” দাদু দীপঙ্কর সরকার পুরুলিয়া জেলা স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। সাবর্ণী জানায়, বাড়িতে দাদু ও স্কুলের পরিবেশ তাকে ভাল ফল করায় সাহায্য করেছে। মা ঈশিতা ভট্টাচার্য পুরুলিয়া শহরের একটি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা। বাবা বিজন ভট্টাচার্য ডিভিসি থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়েছেন। বললেন, “আমি সেভাবে দেখাতে পারিনি। যা দেখানোর মা ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাই দেখিয়েছেন।” গল্পের বইয়ের পোকা সাবর্ণী বলে, “বই কেনা ও পড়া বাড়ির সবারই নেশা। আমরা সবাই মিলে বাড়িতে একটা ছোট্ট লাইব্রেরি বানিয়েছি।” নিজে বড় হয়ে ইতিহাসের শিক্ষিকা হতে চায়।

২০০৭ সালে দিদি সৃজিতা এই স্কুল থেকেই স্কুলের তথা জেলায় মেয়েদের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছিল। সাবর্ণীর কথায়, “দিদিই আজ কলকাতা থেকে ফল দেখে আমাকে জানিয়েছিল।” সাবর্ণীর স্কুল গতবার রাজ্যে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থানে ছিল। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা সাহা বললেন, “আমাদের স্কুলে অনেক প্রতিবন্ধকতা। তবু এই ফল হয়েছে। তার অংশীদার যেমন আমরা, তেমনই অভিভাবক ও অবশ্যই ছাত্রীরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন