এক বা দু’দিন নয়। উৎসব জারি থাকে পাক্কা সাত দিন। স্থানীয় ড্রাগন ক্লাবের এই কালীপুজোকে ঘিরেই উৎসাহের শেষ নেই মহম্মদবাজারের দেউচা গ্রামে। পুজো উপলক্ষে টানা সাত দিন চলে নানা রকমারি অনুষ্ঠান। বাসিন্দাদের দাবি, এটি-ই হল গ্রামের প্রাচীনতম কালীপুজো।
দেউচা মহম্মদবাজার এলাকার একটি বড় গ্রাম। গ্রামে দুর্গা-সহ অন্যান্য পুজো থাকলেও ছিল না কোনও কালীপুজো। পুজো কমিটির সম্পাদক সীতেশ ঘোষ বলছেন, “কালী ভীষণ জাগ্রত দেবী। এমন দেবীর পুজো না থাকাটা গ্রামের অমঙ্গল। এই সব সাতপাঁচ ভেবে আমাদের তিন চার পুরুষ আগের পূর্ব পুরুষেরা গ্রামে বারোয়াড়ি কালীপুজো প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এই পুজোর বয়স প্রায় ১২৫-২৬ বছর।” আগে গ্রামের মানুষ মিলিত ভাবে পুজোর আয়োজন করলেও গত ১০-১১ বছর থেকে পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছে স্থানীয় ড্রাগন ক্লাব। আগে পাকা বেদীর উপর প্যান্ডেল করে কালীপুজো হতো। পরে পাকা মন্দির তৈরি করা হয়েছে।
এ বার পুরনো মন্দিরটি সংস্কার করে একেবারে ঝাঁ চকচকে আধুনিক মন্দিরের রূপ দেওয়া হয়েছে। ক্লাবের এই প্রজন্মের সদস্য অমিত দাস বলেন, “গত চার বছর ধরে আমরা থিম পুজোর প্রচলন শুরু করেছি। এবারের থিম মিশরের পিরামিড। সঙ্গে দেব-দেবীর আদলে পুতুলের দেবী মূর্তি মুতি।” পুতুলগুলি তৈরি করেছেন মহম্মদবাজারের রঘুনাথপুরের বিশিষ্ট মৃৎশিল্পী নিতাই সূত্রধর। পরের সপ্তাহেই কালীপুজোকে ঘিরেই উৎসব শুরু হবে মহম্মদবাজারের এই গ্রামে।
এ দিন, ক্লাব কর্তাদের অন্যতম কৌশিক সালুই জানান, মন্দিরটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। তাই পুজোর আগের দিন মন্দিরটির ‘অভিষেক’ করা হবে। রাতেই পঙ্ক্তিভোজের আয়োজন করা হয়েছে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এলাকার বহু মানুষ পাত পেড়ে খিচুরি খাবেন। বরাবরই বিসর্জনের পরের দিন পঙ্ক্তিভোজন হয়। এ বার অবশ্য প্রথা ভেঙে পুজোর আগের দিন তা আয়োজন করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় পুজোর উদ্বোধন করবেন সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ। উদ্বোধনের পরে দুঃস্থদের হাতে বস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। কৌশিকবাবু আরও বলেন, “আলোর রোশনাইয়ের পাশাপাশি প্রতি দিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। দিনের অনুষ্ঠানে থাকছে নাচ, গান প্রভৃতি।” বিসর্জনের দিন স্থানীয় পুকুর ঘাটে বাজি পোড়ানো দেখার দন্যও ভিড় উপচে পড়ে।
আর মাত্র কয়েকটা দিন। তাই আসন্ন কালীপুজোর জন্য আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে গ্রামের হাসি দলুই, সঞ্চিতা দাস এবং সুলতা ঘোষদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, “গ্রামে অনেকগুলো দুর্গাপুজো। তখন আনন্দটাও ভাগাভাগি হয়ে যায়। কিন্তু কালীপুজো একটাই। তাই ভাগাভাগির কোনও জায়গা থাকে না।” দূর দেশে থাকা পরিজনেরা ফিরতেই গ্রামের সবাই মিলে উৎসবের সাত দিন চুটিয়ে উপভোগ করার অপেক্ষা কমছে দেউচায়।