সচল সরকারি দফতর, অমিল বাস

সরকারি বাস অপ্রতুলভাবে চলাচল করলেও দেখা মেলেনি একটিও বেসরকারি বাসের। জেলাজুড়ে বন্ধ ছিল বহু দোকানপাটও। স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি অত্যন্ত কম। সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক খোলা ছিল। কর্মীদের উপস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু, পরিষেবা যাঁরা নেবেন, সেই সাধারণ মানুষকেই বাড়ির বাইরে তেমন বের হতে দেখা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:০৩
Share:

বন্ধ-যাপন। তালা ঝুলছে দুবরাজপুর ডাকঘরের প্রধান শাখায়। বুধবার দুপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সরকারি বাস অপ্রতুলভাবে চলাচল করলেও দেখা মেলেনি একটিও বেসরকারি বাসের। জেলাজুড়ে বন্ধ ছিল বহু দোকানপাটও। স্কুল কলেজ খোলা থাকলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি অত্যন্ত কম। সরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক খোলা ছিল। কর্মীদের উপস্থিতিও স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু, পরিষেবা যাঁরা নেবেন, সেই সাধারণ মানুষকেই বাড়ির বাইরে তেমন বের হতে দেখা যায়নি।

Advertisement

বামপন্থী শ্রমিক সংগঠননগুলির ডাকা ২৪ ঘণ্টার বন্‌ধে বুধবার দিনভর এমনই মিশ্র প্রভাব দেখা গেল বীরভূম জুড়ে।

তবে, মহম্মদবাজার ও সাঁইথিয়ার মতো বন‌্ধ সমর্থনকারী ও বিরোধীদের মধ্যে বড় আকারের গণ্ডগোল বা রক্তারক্তির ঘটনা না ঘটলেও জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় উত্তেজনা ছিল। দুবরাজপুরে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। রামপুরহাটে পুলিশের সঙ্গে বন্‌ধ সমর্থনকারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে। বন‌্‌ধের বিরোধিতা করে শহর দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের বাইক বাহিনীকেও। যদিও বিকেল পর্যন্ত কোনও পক্ষেরই কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার।

Advertisement

ঘটনা হল, ধর্মঘট প্রতিহত করতে প্রশাসন যে কোমর বেঁধে নামবে, সেটা রবিবারই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো রাজ্য সচল রাখার জন্য বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের কাছে। ধর্মঘট প্রতিহত করতে এতটাই মরিয়া ছিল শাসকদল যে সরকারি কর্মীদের এ দিন অফিসে না এলে বেতন ছাঁটাইয়ের ও এক দিনের কর্ম দিবস কেটে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছিল। কর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি দলের তরফে মঙ্গলবার দিনভর ধর্মঘট-বিরোধী প্রচারে সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা গিয়েছিল শাসকদলের নেতা-কর্মীদেরও। অন্য দিকে, তাঁদের দাবি-দাওয়া সমানে রেখে ধর্মঘট সফল করতে এককাট্টা ছিলেন বাম ট্রেড ইউনিয়নগুলির নেতা-কর্মীরা। রাজ্যের পাশাপাশি এ দিন সকাল থেকেই জেলাজুড়ে তারই ছবি ধরা পড়েছে। কখনও ধর্মঘটপন্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শাসকদলের কর্মীরা। কখনও ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের সঙ্গে। দিনের শেষে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ দিন সকাল পৌনে ৫টা নাগাদ রামপুরহাট স্টেশন থেকে হাওড়াগামী বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারকে আটকে দেন বন‌্ধ সমর্থকেরা। তখনও ধর্মঘট শুরু হওয়ার সময় হয়নি বুঝিয়ে রেল অবরোধকারীদের হটিয়ে দিলেও ৬টা ১৫ মিনিটে রামপুরহাট-বর্ধমান প্যাসেঞ্জার ট্রেন আটকে দেয় বন‌্ধ সমর্থনকারীরা। রেল পুলিশ, আরপিএফ এবং রামপুরহাট থানার পুলিশ এসে জোর করে রেললাইন থেকে বন্‌ধ সমর্থকদের সরিয়ে দেন। নেতৃত্বে ছিলেন রামপুরহাট থানার আইসি আবু সেলিম। এ নিয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মনের সঙ্গে আইসি-র ধস্তাধস্তি বেধে যায় বন‌্ধ তুলতে অতিরিক্ত তৎপর আইসি-র সঙ্গে। পরে রামপুরহাট পুরসভায় এবং রামপুরহাট আদালতে বন্‌ধের সমর্থনে থাকা বামপন্থী কর্মী সংগঠনের কর্মী ও আইনজীবীদের বচসা হয়। রামপুরহাট পুরসভা খোলা থাকলেও বহু কর্মীকেই কাজে যোগ দিতে দেখা যায়নি। অন্য দিকে, বার অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যে দলই বন‌্ধ ডাকুক আইজীবীরা সে দিন কাজ করবেন না। সেই সিদ্ধান্তের জন্য এ দিন কাজ হয়নি রামপুরহাট আদালতে। বন্‌ধের প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে রামপুরহাট মহকুমায় থাকা পাথর শিল্পাঞ্চলেও। নলহাটি থানার নাকপুকুরে একটি প্রথমিক স্কুল বন্ধ ছিল বলে দাবি বাসিন্দাদের।

অন্য দিকে, জেলা সদর সিউড়িতে সকাল থেকেই বন্‌ধকে ঘিরে কোনও অপ্রিয় ঘটনা যাতে না ঘটে, তা এড়াতে প্রশাসন ভবন, সিউড়ি স্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। বন্‌ধের সমর্থনে শহরে মিছিলও বের হয়। বেশ কিছু দোকানপাটও বন্ধ ছিল। কিন্তু, পুলিশের তৎপরতায় সেখানে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। তবে, অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল দুবরাজপুর থানা লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। ওই এলাকার একটি মিষ্টির ও একটি হার্ডওয়্যার দোকান খোলা থাকবে না বন্ধ, এই নিয়েই বন্‌ধের সমর্থনের আসা বামেদের সঙ্গে তৃণমূল সমর্থকদের হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি বেধে যায়। পুলিশের তৎপরতায় ঝামেলা বেশি দূর গড়ায়নি। যদিও তৃণমূলের দাবি, ওই ঘটনায় তাদের কেউ জড়িত নয়। দুবরাজপুরে অফিস আদালত ও স্কুল খোলা থাকলেও ডাকঘরের প্রধান শাখাটি সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বন্ধই ছিল।

কতকটা একই চিত্র ছিল বোলপুরেও। পোস্ট অফিসের মূলশাখা না খোলায় পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হন এলাকার মানুষ। তবে বোলপুরে এমনিতেই বুধবার দিন বাজার বন্ধ থাকে বলে এ দিন আলাদা করে বন্‌ধ বোঝা যায়নি। দোকানপাট সব বন্ধ থাকলেও বাসিন্দাদের তটস্থ করে বন্‌ধের বিরোধিতায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে তৃণমূলের বাইক বাহিনী। নেতৃত্বে ছিলেন রূপপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ইন্দ্রজিৎ মিত্র। বোলপুর আদালত খোলা থাকলেও বার অ্যসোসিয়েশনের একই সিদ্ধান্তের জন্য কাজ হয়নি বলে জানিয়েছে সংগঠনের বিদায়ী সভাপতি দেবকুমার দত্ত। তবে, বর্তমান সভাপতি তপনকুমার দে-র বক্তব্য, বিচারক, কর্মী, আইনজীবী সকলেই এসেছিলেন। কিন্তু, মক্কেলরা না আসায় কাজ হয়নি। এ দিন কাজ হয়নি জেলা আদালতেও।

এ দিকে, সাঁইথিয়াতেও এ দিন অধিকাংশ দোকান খোলেনি। দোকানদারদের অনেককেই ঝাঁপ বন্ধ করে তাস খেলতে দেখা যায়। মহম্মদবাজারে সকাল থেকে কিছু দোকান খুললেও গণ্ডগোলের পরে অধিকাংশ দোকানই বন্ধ হয়ে যায়। বেসরকারি বাস চলেনি। রাস্তায় হাতেগোনা কয়েকটি গাড়ি ও সরকারি বাস চলেছে। বাসের যাত্রী ছিল না বললেই চলে। স্কুল ও অফিস খোলা ছিল। তবে, পড়ুয়াদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল।

তৃণমূল প্রভাবিত বাসমালিক সংগঠনগুলিকে সতর্ক করা হলেও এ দিন জেলায় বেসরকারি বাস তেমন চলতে দেখা যায়নি। উল্টো দিকে, রাজনগর, খয়রাশোলের মতো বহু অংশে এমনিতেই সরকারি বাস চলে না। যার নিট ফল, সরকারি-বেসরকারি, কোনও বাসই না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েন বহু মানুষ। জেলার দু’টি বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক শুভাশিস মুখোপাধ্যায় এবং আব্দুল আজিমার বলছেন, ‘‘চালক, কর্মী না এলে মালিকেরাই বা কীভাবে বাস চালাবেন।’’ আড়ালে অবশ্য সংগঠনের নেতারা বলছেন, বাসের কোনও ক্ষতি হলে, তার দায় কে নেবে। তবে, বাস বন্ধ থাকলেও টোটো ও ছোট গাড়ি চলেছে। জেলাজুড়ে এ দিন সরকারি কর্মীদের হাজিরা ছিল ৯৮ শতাংশ ছিল বলে দাবি করেছেন জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী।

সারা দিনের নানা ছবি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন