১০০ দিন কাজের প্রকল্প

হাজিরার নথি না মেলায় ভেস্তে গেল জনশুনানি

তাঁরা শুনানিতে উপস্থিত থেকেছেন এই মর্মে লিখিত নথি না পাওয়ায় জন শুনানির জন্য হাজির হয়েও শুনানিতে অংশ নিলেন না শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার হুড়ার দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কুসুমজোড়িয়া গ্রামের ৫২ জন বাসিন্দা গত বছরের (২০১৩) ডিসেম্বর মাসে একশো দিনের প্রকল্পে কাজের আবেদন করেন। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ওই গ্রামেই সাধু বাঁধ নামে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হুড়া শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:২৭
Share:

শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন আধিকারিকরা।—নিজস্ব চিত্র

তাঁরা শুনানিতে উপস্থিত থেকেছেন এই মর্মে লিখিত নথি না পাওয়ায় জন শুনানির জন্য হাজির হয়েও শুনানিতে অংশ নিলেন না শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার হুড়ার দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কুসুমজোড়িয়া গ্রামের ৫২ জন বাসিন্দা গত বছরের (২০১৩) ডিসেম্বর মাসে একশো দিনের প্রকল্পে কাজের আবেদন করেন। পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ওই গ্রামেই সাধু বাঁধ নামে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ শুরু হয়। অভিযোগ, আবেদন করা ৫২ জনের মধ্যে অনেকেই ওই পুকুর সংস্কারের কাজ পাননি। শ্রমিকদের আরও অভিযোগ, পঞ্চায়েত কারও কাছ থেকে কাজের আবেদনই নিতে চায়নি।

বাকিদের অভিযোগ, যেহেতু দিনমজুরি করেই তাঁদের সংসার চলে তাই গ্রামে কাজ না পেয়ে তাঁরা অন্যত্র কাজ করতে চলে গিয়েছিলেন। পরে গ্রামে ফিরে এসে তাঁরা শোনেন যে পুকুর সংস্কারের কাজ হয়ে গিয়েছে। এরপরই তাঁরা জেলাশাসকের কাছে আবেদন করেন ভাতার জন্য।

Advertisement

শ্রমিকদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত আবেদন নিতে না চাওয়ায় তাঁরা সরাসরি জেলাশাসকের কাছে ভাতার আবেদন করেছিলেন। যদিও গ্রাম পঞ্চায়েতের যুক্তি ছিল, একই আবেদন পত্রে যাঁরা আবেদন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজন কাজ পেয়েছিলেন। তাছাড়া ভাতার আবেদন যাঁরা করছেন মাষ্টার রোলে তাঁদের অনেকেরই নাম ছিল। কিন্তু তখন তাঁরা কাজ করেননি। তাই ভাতার আবেদন নেওয়া যায়নি।

কাজ না পেয়ে যাঁরা ভাতার জন্য আবেদন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে সুবল চন্দ্র মাহাতো বলেন, “পঞ্চায়েত ভাতার আবেদন নিতে চায়নি। উল্টে প্রধান বলেছিলেন তোমরা তৃণমূল করলে ভাতা পেতে কোনও অসুবিধে হবে না।” ভাতার জন্য আবেদন করা ভারতী মাহাতো, গঙ্গাধর মাহাতো, সুবল মাহাতোরা বলেন, “আমরা আবেদন করেছিলাম, কিন্তু কাজ পাইনি। কাজ না পেয়ে আমরা অন্য জায়গায় কাজ করতে চলে গিয়েছিলাম। পরে শুনি কাজ হয়ে গিয়েছে। এ দিন আমাদের শুনানিতে ডাকা হয়েছিল।” শ্রমিকদের অনেকেরই বক্তব্য, শুনানিতে অংশ নিলে তাঁরা যে উপস্থিত হয়েছেন সেই মর্মে লিখিত নথি দিতে হবে। না হলে তাঁদের কাছে কোনও প্রমাণ থাকবে না।

ব্লকের প্রতিনিধি যিনি এ দিন শ্রমিকদের শুনানি গ্রহনের জন্য উপস্থিত ছিলেন সেই দেবদাস মাঝি শ্রমিকদের বোঝান, যে তাঁদের কিছু বলার থাকলে শুনানিতে অংশ নিয়ে তাঁরা বলতে পারেন। এ দিন শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কুসুমজোড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী সামন্ত মাহাতো। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধান তো আমার কাজের আবেদনই নিতে চায়নি।”

অবশেষে শুনানির কাজ না করেই ফেরত যেতে হয় ব্লকের প্রতিনিধি দেবদাসবাবুকে। তিনি অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দলদলি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রভাসচন্দ্র বাউরি বলেন, “যাঁরা কাজের আবেদন করেছিলেন তাঁদের নাম তো মাস্টার রোলে ছিল, তাই ভাতার আবেদন নেওয়া হয়নি।” তবে তৃণমূল না করলে ভাতা দেওয়া হবে না, এই অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “ভাতা দেওয়ার তো সরকারি বিধি রয়েছে। এক্ষেত্রে আমার কি করার রয়েছে। আসলে কিছু শ্রমিকের অভ্যাসই দাঁড়িয়ে গিয়েছে যে কাজ না করে ভাতার আবেদন করার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন