হাঁস বিলিতেও আমরা-ওরা, বিক্ষোভ

মায় হাঁসের ছানা। কিন্তু সেই ছানা-বিলি নিয়েই এবার আমরা-ওরা! ঘটনাস্থল বীরভূমের পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েত। ‘আমরা’ বলতে রাজ্যে শাসকদল তৃণমূল। ‘ওরা’, বিজেপি কর্মী-সমর্থক। এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অভিযোগ, “বিজেপি করার অপরাধে তাঁদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ছানা বিলির ক্ষেত্রেও বেছে বেছে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নাম ঢুকিয়ে তালিকা করেছে শাসকদল।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়ুই শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৪
Share:

বোলপুরে ব্লক অফিসের সামনে জড়ো হয়েছেন ক্ষুব্ধ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যারা। —নিজস্ব চিত্র

মায় হাঁসের ছানা। কিন্তু সেই ছানা-বিলি নিয়েই এবার আমরা-ওরা! ঘটনাস্থল বীরভূমের পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েত।

Advertisement

‘আমরা’ বলতে রাজ্যে শাসকদল তৃণমূল। ‘ওরা’, বিজেপি কর্মী-সমর্থক। এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অভিযোগ, “বিজেপি করার অপরাধে তাঁদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ছানা বিলির ক্ষেত্রেও বেছে বেছে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নাম ঢুকিয়ে তালিকা করেছে শাসকদল।”

সোমবার বোলপুরের বিডিও অফিসের সামনে এই অভিযোগে সরব হয়ে নানা প্রকল্প থেকে বঞ্চিত পাড়ুইয়ের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা বিক্ষোভ দেখালেন বিডিও অফিসের সামনে। বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দাবি, অবিলম্বে তাঁদের প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়া হোক। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে, প্রয়োজনীয় তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বোলপুরের বিডিও শমিক পাণিগ্রাহী।

Advertisement

পাড়ুইয়ে আমরা-ওরার অভিযোগ যদিও নতুন নয়। এর আগে বেছে বেছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করার অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের বিরুদ্ধে। এবার দ্বিচারিতার অভিযোগ উঠল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। বোলপুর ব্লকের পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতের আট নম্বার সংসদ কসবা(দক্ষিণ) এলাকার একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের অভিযোগ, বিজেপি করার জন্য তাঁরা একাধিক সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই অভিযোগে সোমবার সকাল থেকে বোলপুরের বিডিও দফতরের সামনে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখান।

কসবা দক্ষিণের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ‘আলো’-র রহিমা বিবি, ‘জীবন সাথী’ গোষ্ঠীর মরিয়ম বিবি, ‘তাজমহল’ গোষ্ঠীর সেতারা বিবি, ‘বাতাস’ গোষ্ঠীর আকরুমা বিবিদের অভিযোগ, “এলাকায় সম্প্রতি সরকার যে হাঁসের ছানা বিলি করেছেন, তাতে বেছে বেছে তৃণমূল তথা শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের ছানা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা শাসক দলের কর্মী-সমর্থক নই বলেই, ওই সমস্ত সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ব্লক প্রশাসনের কাছে এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ জানালাম।”

বিজেপি নেতা বলাই চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্থানীয় তৃণমূল নেতা কাজী নুরুল হোদা নিজেদের লোকের নাম ঢুকিয়ে ওই তালিকা করেছে। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের পাইয়ে দেওয়ার ঘটনা বোলপুরের বিডিওকে জানানো হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কোনও সমাধান না হলে আমরা ফের বিক্ষোভে দেখাব।”

ঘটনা হল, সম্প্রতি কসবা পঞ্চায়েতের আট এবং নয় নম্বর সংসদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাঁসের ছানা দেয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ওই ছানা বিলির ক্ষেত্রে, একাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। স্থানীয় আট নম্বর সংসদের নির্দল থেকে জিতে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সদস্য শেখ বিরাজুল এবং ন’ নম্বার সংসদ তথা ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রতীকে জিতে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সদস্যা তথা উপ-প্রধান পার্বতী বাগদীর অভিযোগ, “মাস ছয়েক আগে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলের সদস্যাদেরকে মুরগির ছানা দেওয়া হয়েছিল। শাসকদলের সমর্থক হওয়ায়, অন্যদের বঞ্চিত করে সেই তাঁদেরকে ফের হাঁসের ছানা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে আসা ওই সুযোগ সাধারণ মানুষকেও দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে বিজেপির তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছে কসবার স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব তৃণমূলের কসবা- সাত্তোর অঞ্চল সভাপতি লালু মোল্লা। তাঁর দাবি, “সব কিছুতে রাজনীতি খুঁজছে ওরা। গোটা বিষয়টি প্রশাসনের। এখানে দলীয় কোনও ব্যাপার নেই।”

কী বলছেন বিডিও?

বোলপুরের বিডিও শমিক পাণিগ্রাহী বলেন, “যে সমস্ত স্বনির্ভর দলগুলি অতীতে ওই প্রকল্পগুলির সুবিধা সুযোগ পাননি বলে দাবি করেছেন, তাঁদের নামের তালিকা নেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী তাঁরা পাওয়ার যোগ্য কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন