হোয়াটসঅ্যাপ-এ হাত বাড়াল পুলিশ

ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। নিজেদের ওয়েবসাইটে এমন অভিযোগ পেয়ে বিষ্ণুপুর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। জনসাধারণের কাছ থেকে এমন সাড়া পেয়ে এ বার জনসংযোগ বাড়াতে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ নিজেদের জুড়ল।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৪
Share:

ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা কাজে ফাঁকি দিচ্ছেন। নিজেদের ওয়েবসাইটে এমন অভিযোগ পেয়ে বিষ্ণুপুর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ। জনসাধারণের কাছ থেকে এমন সাড়া পেয়ে এ বার জনসংযোগ বাড়াতে বাঁকুড়া জেলা পুলিশ ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ নিজেদের জুড়ল।

Advertisement

আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর বিষয়ে সম্প্রতি রাজ্যের মধ্যে নজর কেড়েছে বাঁকুড়া পুলিশ। ‘বিবিএম’ পরিষেবার মাধ্যমে জেলার প্রত্যেকটি থানার শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে জেলা পুলিশ কর্তাদের আগেই জোড়া হয়েছে। তাতে নাকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় সুবিধা হয়েছে পুলিশের। বাড়িতে বসেও যাতে সাধারণ মানুষ নিজেদের সমস্যা, অভিযোগ সরাসরি পুলিশ সুপারকে জানাতে পারেন, সে জন্য ‘ওয়েবসাইট’-এ সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘ফেসবুক’-এর মাধ্যমেও বাঁকুড়া পুলিশ মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করার কাজ শুরু করেছে। এরপর জনসংযোগ বাড়াতে বাঁকুড়া পুলিশের নব সংযোজন ‘হোয়াটসঅ্যাপ’।

নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় ‘মেসেঞ্জার’-র গুলির মধ্যে অন্যতম ‘হোয়াটসঅ্যাপ’। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকা, এমনকী মাঝবয়সি লোকজনকেও মোবাইল ফোনে হোয়াটস অ্যাপে চ্যাট করতে দেখা যাচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের মোবাইলেও বেশ কিছু বাসিন্দা হোয়াটস অ্যাপ-এ মেসেজ পাঠিয়ে নানা সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। সম্প্রতি জেলার জন্য দু’টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করেছে জেলা পুলিশ। একটি সাধারণের জন্য (৭৭৯৭১১১০০০), অন্যটি মহিলাদের জন্য (৮০০১৮০১৮০১)। পুলিশ সুপার ওই দু’টি নম্বরেই ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ চালু করেছে।

Advertisement

পুলিশ সুপার জানান, ওয়েবসাইটে কিছু জানাতে গেলে ‘লগ ইন’ করার ঝক্কি রয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ সহজেই বার্তা বা প্রয়োজন হলে স্থির ও ভিডিও ছবি পাঠানো যায়। বার্তা আদানপ্রদান (চ্যাট) করা যেতে পারে। তাই সাধারণ মানুষের পক্ষে বিষয়টি অনেক সহজ। পুলিশের পক্ষেও বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর এ ভাবে পেলে কাজেও লাগবে।

তিনি বলেন, “মহিলা হেল্প লাইন ও সাধারণ হেল্প লাইন অপারেট করার জন্য একজন মহিলা ও পুরুষ কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে কোনও মেসেজ এলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা জবাব দেবেন। প্রয়োজনে তাঁরাই সংশ্লিষ্ট থানাকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে জানাবে। গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ আমার কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।” জেলার তিনটি মহকুমাতেই পোস্টার দিয়ে ‘হোয়াটসঅ্যাপ’-এ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। এ ক্ষেত্রে বাঁকুড়া জেলার স্কুল-কলেজ ও জনবহুল এলাকাগুলিকে বেছে নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ওয়েবসাইট ইতিমধ্যেই জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে অনেকেই নিয়মিত এলাকার সমস্যা পুলিশকে জানাচ্ছেন এখানে। ওয়েবসাইটের যাবতীয় অভিযোগ কিংবা পরামর্শ খোদ পুলিশ সুপারের কাছে আসছে। মোবাইল হারানো থেকে মোটরবাইক চুরির মতো অভিযোগও এ ভাবে জানাচ্ছেন অনেকে। আবার অনেকে পুলিশের কাজের খামতিও পুলিশ সুপারের কাছে সরাসরি তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। ব্ল্যাকবেরি মেসেঞ্জার (বিবিএম) পরিষেবা ব্যবহারের ফলেও পুলিশের কাজে গতি এসেছে। এক থানা থেকে অন্য থানায় কোনও ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। একটি বার্তার মাধ্যমে পুলিশ সুপার জেলার সব ক’টি থানাকে সেকেন্ডের মধ্যে নির্দেশ দিতে পারছেন। এমনকী তাঁর কথা মতো ওসি-আইসি’রা সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করছেন কি না তা ছবি তুলে বিবিএম-এ আপলোড করে পুলিশ সুপারকে দেখাতে হচ্ছে।

গত অগস্ট মাসে জেলাসফরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঁকুড়া জেলা পুলিশের কাজ করার পদ্ধতির প্রশংসা করেন। রাজ্যের অন্যান্য জেলা পুলিশকে বাঁকুড়া পুলিশের কাজের পদ্ধতি অনুসরণ করার নির্দেশও দেন তিনি।

বাঁকুড়া পুলিশের হোয়াটসঅ্যাপ-এ আসার সিদ্ধান্তকে বহু সাধারণ মানুষ প্রসংশা করছেন। জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজ-এ অনেকেই এ নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করেছেন ও পুলিশকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দাস বলেন, “বাঁকুড়া পুলিশের ওয়েবসাইটে অভিযোগ জানিয়ে অনেকেই উপকৃত হয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপ-এ পুলিশকে পাওয়া গেলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের আরও সুবিধা হবে। জনসংযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে পুলিশের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন রাজ্য বিজেপি-র সহ-সভাপতি তথা বাঁকুড়ার ডাক্তার সুভাষ সরকার। তবে তাঁর ক্ষোভ, “রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হতে না পারলে জনসংযোগ বাড়িয়েও পুলিশ সাধারণ মানুষের কতটা উপকার করতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। পুলিশ নিরপেক্ষ হলে বহু ঘটনাই এড়ানো যায়।”

পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ওয়েবসাইট-এ সাধারণ মানুষের দেওয়া পরামর্শকে আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখি। কোথাও কোনও অভিযোগ পেলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পক্ষপাতহীন ভাবে কাজ করা হচ্ছে। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর সংখ্যা এই জেলায় নেহাত কম নয়। তাই আমাদের এই পদক্ষেপে জেলাবাসীর সাড়া মিলবে বলে আমি আশাবাদী।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন