ট্রেকার চালককে মারধর করেছেন এক যাত্রী, এই অভিযোগ তুলে টানা চার দিন ধরে ট্রেকার পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে আদ্রা-কাশীপুর রুটে। ফলে, পুজোর মরসুমে সমস্যায় পড়েছেন কয়েক হাজার যাত্রী। কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া উদ্যোগী হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে সোমবার থেকে কয়েকটি অটো এই রুটে চালানোর ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু, যাত্রী সংখ্যার নিরিখে অটোর সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় ভোগান্তি কমেনি। স্বপনবাবু বলেন, “কার্যত বিনা কারণে পুজোর সময়ে ট্রেকার পরিষেবা বন্ধ করার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। সোমবার ট্রেকারের মালিকরা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের সরকারী নিয়মনীতি মেনে ট্রেকার চালানোর জন্য বলা হয়েছে।”
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার। ভাড়া দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদ্রার পলাশকোলায় এক যাত্রীর সঙ্গে বিবাদ বাধে এক ট্রেকার চালকের। অভিযোগ, ওই যাত্রী মারধর করেন ট্রেকার চালককে। এর প্রতিবাদে গত শুক্রবার থেকে আদ্রা-কাশীপুর রুটের সমস্ত ট্রেকার ও ম্যাজিক গাড়ি বন্ধ করে দেন মালিকরা। ঘটনাটি জানানো হয় আদ্রা থানায়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ট্রেকার চালক অভিযুক্ত যাত্রীর নাম, ঠিকানা বলতে পারেনি। ফলে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কিন্তু, এ ভাবে বিনা নোটিয়ে ট্রেকার পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় চূড়ান্ত ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। ঘটনা হল, বেসরকারি বাসের সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় কাশীপুর ব্লক ও পাশের হুড়ার কিছু এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দাদের ট্রেন ধরতে আদ্রায় আসার অন্যতম উপায় এই ট্রেকার ও ম্যাজিকের মতো ছোট গাড়িগুলি। দৈনিক ৩০টিরও বেশি এই ধরনের গাড়ি চলে আদ্রা-কাশীপুরের মধ্যে। এ ভাবে পুজোর মরসুমে ট্রেকার পরিষেবা বন্ধ থাকায় হয়রান হতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদেরই। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, এমনিতেই ন্যূনতম যাত্রী পরিষেবা বলতে যা বোঝায়, তা দেয় না এই ট্রেকারগুলি। বাদুড়ঝোলা হয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু, বাস না থাকায় এটাই ছিল ভরসা। সেই সুযোগ নিয়ে সামান্য কারণে হঠাত্ করে পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় তাঁরা খুবই সমস্যায় পড়েছেন।
ঘটনায় ক্ষুব্ধ শাসকদলও। ট্রেকার মালিকদের তরফে তন্ময় সেন অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরা পরিষেবা বন্ধ করেননি। চালকরাই নিরাপত্তাজনিত কারণে গাড়ি চালাতে চাইছেন না। তবে, তৃণমূল অনুমোদিত পরিবহণ কর্মী সংগঠনের কাশীপুরের সভাপতি নেপাল পরামানিকের পাল্টা দাবি, “চালকরা ভয় পেয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন না, এই মর্মে কোনও খবর আমাদের কাছে নেই।” গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ার পিছনে যে যুক্তি দেখাচ্ছেন মালিকরা, তাকে ‘সামান্য ঘটনা’ হিসাবেই দেখছে তৃণমূল। আর তার জেরেই, বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে রাস্তায় কিছু অটো নামানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বিধায়ক। এমনকী, এ দিন তৃণমূল অনুমোদিত পরিবহণ সংগঠনের কর্মীদের রাস্তায় নেমে যাত্রীদের সাহায্য করতেও দেখা গিয়েছে। আপাতত রঘুনাথপুর থেকে গোটা দশেক অটো আদ্রা-কাশীপুর রাস্তায় চালানো হলেও ভবিষ্যতে সেই সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তৃণমূলের।
পুরো ঘটনায় বিধায়ক স্বপনবাবুর পাশেই দাঁড়িয়েছেন জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন সুজয়বাবু বলেন, “কোনও আলোচনা না করে হঠাত্ পরিষবা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা আমরা সমর্থন করি ন। এ ছাড়াও ওই রুটের যাত্রী পরিষেবা নিয়ে কিছু অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। পুজোর ছুটির পরে দফতর খুললে আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”