হরেক পদের পসরা নিয়ে তৈরি রেস্তোরাঁ

অঞ্জলি দিয়ে, এসো বসো আহারে/ খাওয়াব এমন খাওয়া ভোজ কয় যাহারে জঙ্গলমহলের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ার পুজোকে ঘিরে এ বার এমনই দাবি বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর। শহরের সাহেববাঁধ রোডের রেস্তোরাঁ আকাশ সরোবরের রোহিত লাটার কথায়, “খাওয়া-দাওয়া ছাড়া কী আর পুজো জমে। তাই আমরা এ বার পুজোর দিনগুলিতে রসনা তৃপ্তির নানা আয়োজন রেখেছি।”

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৪
Share:

অঞ্জলি দিয়ে, এসো বসো আহারে/ খাওয়াব এমন খাওয়া ভোজ কয় যাহারে জঙ্গলমহলের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ার পুজোকে ঘিরে এ বার এমনই দাবি বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর। শহরের সাহেববাঁধ রোডের রেস্তোরাঁ আকাশ সরোবরের রোহিত লাটার কথায়, “খাওয়া-দাওয়া ছাড়া কী আর পুজো জমে। তাই আমরা এ বার পুজোর দিনগুলিতে রসনা তৃপ্তির নানা আয়োজন রেখেছি।”

Advertisement

তিন দিনে দুপুরের খাবারে তাঁরা তিন রকম নাম রেখেছেন। সপ্তমীতে ‘স্বাদবদল’, অষ্টমীতে ‘নিরামিষ’ বলে মহাভোগ এবং নবমীতে ‘ভুরিভোজ’। সপ্তমীর মেনু সাজানো হয়েছে লক্ষ্মীভোগ চালের ভাত, ঘি, গন্ধরাজ লেবু, বেগুনভাজা, আলুভাজা, শাকভাজা, বড়িভাজা, মোচার ঘন্ট, সোনা মুগের ডাল, ঝিঙে ছাতুর ডালনা, সরষে ইলিশ, মুরগির মাংস, চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি, দই এবং শালপাতায় মোড়া পান। অষ্টমীতে তাঁরা রেখেছেন রাধাবল্লভি, লক্ষ্মীভোগ চালের ভাত, আগের দিনের মতই চার রকমের ভাজা, লাউ-বড়ি পোস্ত, ছোলা-পনির। এ দিনের পাতে মিষ্টি বলতে গোলাপজাম। আর ভুরিভোজের তালিকায় রয়েছে হিংয়ের কচুরি, লক্ষ্মীভোগ চালের ভাত, সোনা মুগের ডাল, চার রকম ভাজা, শুক্ত, ভেটকি মাছের মুইঠা, ঠাকুরবাড়ির মাংস, পাঁপড়, দই, মিষ্টি ও শালপাতায় মোড়া পান। রাঁধুনি মলয় মজুমদারের কথায়, “দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত প্রতিদিনই লাঞ্চ মিলবে।” দাম প্রথম দিনে ৪০০, দ্বিতীয় দিনে ৩৫০ এবং শেষ দিনে ৫০০ টাকা।

শুধু হোটেলে গিয়ে খাওয়া নয়, পুরুলিয়া শহরের চৌহদ্দির মধ্যে একটা ফোন দিলেই খাবার বাড়িতেও পৌঁছে যাবে। রাঁচি রোডের জিউকের মালিক সৌগত দাস বলেন, “এমনি দিনে থালির চাহিদা ভাল থাকে। পুজো উপলক্ষে খাবারে নতুনত্ব আনা হয়েছে। আমাদের তো নিরামিষ। তাই গোলগাপ্পা, চাট, ভেজ পোলাও, মশলা কুলচা, রায়তার সঙ্গে চার রকমের সব্জি থাকছে লাঞ্চে। পাশাপাশি বিভিন্ন পাঞ্জাবি খাবারও থাকছে।” বাচ্চাদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছেন তাঁরা। দশ বছর অবধি বাচ্চাদের জন্য লাঞ্চ এবং ডিনারে একশো টাকা করে ছাড় দিচ্ছেন তাঁরা।

Advertisement

তিনি জানান, অষ্টমীতে যেহেতু অনেকেই ভাত খান না, তাই ওই দিন লুচি, সসব্জি, চাটনি, মিষ্টি, পাঁপড়ের আয়োজন থাকছে এবং অবশ্যই নিরামিষ। পুরুলিয়া শহরের আরও একটি রেস্তোরাঁ গোকুল। এই রেস্তোরাঁর ব্রিজমোহন মুন্দ্রার কথায়, “আমাদের থালির স্বাদ শহরবাসী মুখে লেগেই রয়েছে। পুজোর সময় আমরা স্পেশ্যাল থালি রাখছি। তবে আমাদের পনিরের পদ পনির গোকুল স্পেশ্যাল ভোজন রসিকদের রসনা তৃপ্তি করবেই। স্পেশ্যাল থালির দাম ১৩০ টাকা।” শহরের ইনটাচ রেস্তোরাঁর মালিক সুবিমলকান্তি মাহাতোর কথায়, “আমরা এ বার ভোজন রসিকদের জন্য নানা ধরনের বিরিয়ানির আয়োজন রাখছি। নিরামিষ বিরিয়ানিও থাকছে। পাশাপাশি লাঞ্চে চিংড়ির মালাইকারি, দই কাতলা ও অরেঞ্জ পোলাও থাকছে।” তাঁরাও বাড়িতে খাবার পৌঁছনোর ব্যবস্থা রেখেছেন।

শহরের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে থিম পুজোর ছড়াছড়ি বা পঞ্চকোট রাজবাড়ির সাবেকী পুজো দেখতে দেখতে রেলশহর আদ্রা, শিল্পশহর রঘুনাথপুর, কাশীপুর বা নিতুড়িয়ার দিকে যান সেখানেও নানা হোটেল ও রেস্তোরাঁ অতিথিদের জন্য নানা আয়োজন রেখেছেন। একটি রেস্তোরাঁর মালিক বিষ্ণু গরাঁই জানান, নিরামিষ ও আমিষ দু’রকম থালিই রাখছেন। দামও সাধ্যের মধ্যেই। পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতীয় নানা পদও থাকছে।

রঘুনাথপুরের সুরভি রেস্তোরাঁর মাকি সুরজিৎ ঘোষ বলেন, “নিরামিষ থালিতে দেরাদুন চালের ভাত, ভাজা, মুগ ফ্রাই, তিন রকমের সব্জি, মিষ্টি, চাটনি, আইসক্রিম, পাঁপড় থাকছে। দাম ২২০ টাকা। আর আমিষের মধ্যে ইলিশ থালি ৩০০, মাটন থালির দাম ৩২০ এবং চিকেন থালির দাম ২৬০ টাকা।”

শহরের ভিড় ছাড়িয়ে যদি একটু নিরিবিলিতে ধাবায় যেতে চান? তারও ব্যবস্থা রয়েছে। পুরুলিয়া-জামশেদপুর (৩২ নম্বর) জাতীয় সড়ক ধরে টামনার দিকে এগিয়ে গেলে নতুন ফ্যামিলি ধাবাতে তাঁরা নানা ধরনের খাবারের আয়োজন রেখেছেন বলে জানালেন ধাবার মালিক বিবেক রায়। অথবা রঘুনাথপুর ছাড়িয়ে আসানসোলের দিকে পুরুলিয়া-বরাকর রাস্তার পাশে পারবেলিয়াতে সুরজের ধাবা। এই ধাবার মালিক সুরজ বিশ্বকর্মা বলেন, “ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে ধাবার খাবারের স্বাদ নিতে আমাদের কাছে আসতে পারেন। পাশাপাশি পাঞ্জাবি খাবারের স্বাদও দেব আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন