৮ দিনে দু’বার চুরি, পুলিশকে আটকে বিক্ষোভ

মহারাজ নন্দকুমারের ভদ্রপুরের রাজপ্রাসাদ এখন আর নেই। নন্দকুমারের স্মৃতি বলতে নলহাটি থানার আকালিপুরের কালী মন্দির। মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত সেই আকালীপুরের গুহ্যকালী মন্দিরে বুধবার রাতে চুরির ঘটনা ঘটল। এই নিয়ে আট দিনের ব্যবধানে দু’বার চুরি হল এই মন্দিরেই। কিন্তু কোনও বারই পুলিশ চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার তো করতে পারেনি, ধরাও পড়েনি কোনও দুষ্কৃতী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নলহাটি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০০:৩৪
Share:

অলঙ্কারহীন কালী মূর্তি।

মহারাজ নন্দকুমারের ভদ্রপুরের রাজপ্রাসাদ এখন আর নেই। নন্দকুমারের স্মৃতি বলতে নলহাটি থানার আকালিপুরের কালী মন্দির। মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত সেই আকালীপুরের গুহ্যকালী মন্দিরে বুধবার রাতে চুরির ঘটনা ঘটল। এই নিয়ে আট দিনের ব্যবধানে দু’বার চুরি হল এই মন্দিরেই। কিন্তু কোনও বারই পুলিশ চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার তো করতে পারেনি, ধরাও পড়েনি কোনও দুষ্কৃতী।

Advertisement

একই মন্দিরে দু’বার চুরির ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই তাঁরা বৃহস্পতিবার তদন্তে আসা চার পুলিশকর্মীকে আটকে রাখেন। পুলিশ কুকুর-সহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের ঘটনাস্থলে এসে তদন্তর দাবি করেন বাসিন্দারা। চাপে পড়ে শেষমেষ দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কমব্যাট ফোর্স, বহরমপুর থেকে পুলিশ কুকুর নিয়ে নলহাটি থানার ওসি সোমনাথ ভট্টাচার্য ও মুরারই থানার ওসি মাধব মণ্ডল এলাকায় পৌঁছন। তার পরেই চার পুলিশকর্মী ঘেরাও মুক্ত হন। এক ঘণ্টা ধরে কুকুর নিয়ে মন্দির চত্বর থেকে শুরু করে সংলগ্ন শ্মশানঘাট, লাগোয়া ব্রাহ্মণী নদীর দুই পাড় তদন্ত করে পুলিশ। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ওই চুরির ঘটনায় কেউ গ্রেফতার বা আটক কিংবা চুরি যাওয়া গয়না কোনও কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এলাকাবাসী অবশ্য পুলিশকে সাত দিনের মধ্যে চুরি যাওয়া সামগ্রী এবং দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে এলাকায় মাইকিং করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য দিনের মতো এ দিন ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ স্থানীয় ভদ্রপুরের বাসিন্দা শ্যামল পাল তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মন্দিরে প্রণাম করতে গিয়ে দেখেন মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারের লোহার গেটের তালা ভাঙা। এর পরেই আকালিপুর গ্রামে বসবাসকারী মন্দিরের পুরোহিত দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে খবর দেওয়া হয়। তিনি মন্দিরে এসে দেখেন, মূল প্রবেশদ্বার ও পশ্চিম দিকের কাঠের দরজার তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা কালী মাতার উপর থাকা দু’টি চাঁদির তৈরী বড় ছাতা নিয়ে পালিয়েছে। একটির ওজন প্রায় দেড় কিলো হবে। দেবাশিসবাবু জানান, আকালিপুরের গুহ্যকালী মাতা একটা ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত এই কালীমূর্তির বয়স প্রায় ২৩৭ বছর। পুরনো এই মন্দিরের সংস্কার ২০০৪ সালে প্রাক্তন মত্‌স্যমন্ত্রী কিরণময় নন্দ, ওই দফতরের তকাত্‌লীন যুগ্ম অধিকর্তা মধুমিতা মুখোপাধ্যায় এবং স্থপতি সুতনু ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও আর্থিক সহযোগিতায় হয়। তার আগে আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে মায়ের গয়না চুরি যায়। তিন বছর আগেও দিনের বেলায় প্রণামী বাক্স চুরি যায়। গত সপ্তাহে বুধবার প্রণামী বাক্স চুরি হয়। তিনি বলেন, “বুধবার রাত সাড়ে ৮টার পরে মন্দিরে তালা লাগিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার ভোরে খবর পেয়ে দেখি মায়ের মাথার উপর দুটো চাঁদির ছাতা নেই।”

Advertisement

এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আকালিপুর, ভদ্রপুর, সিমলান্দি, দেবগ্রাম-সহ আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় শ’দুয়েক বাসিন্দা আকালিপুরের মন্দির এলাকায় জড়ো হয়েছেন। তাঁরা চার পুলিশ কর্মীকে আটকে রেখেছেন। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহের চাতালে লাইট ভাঙা। দু’জায়গায় সামান্য রক্ত পড়ে আছে। মূল মন্দিরের সামনের কাঠের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। পশ্চিম দিকের লোহার গেট বন্ধ। কিন্তু পশ্চিম দিকের কাঠের দরজার তিনটি তালা ভাঙা অবস্থায় একদিকে জড় করে রাখা আছে। একটি বড় শাবল মন্দিরের চাতালের এক দিকে দাঁড় করানো আছে। প্রণামী বাক্স ও আর একটি বাক্স নেই। পরে এলাকাবাসী মন্দির থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূরে নদীর ধারে প্রণামী বাক্স এবং পুজোর সামগ্রী রাখার আর একটি বাক্স খুঁজে পান। ভদ্রপুরের বাসিন্দা হীরালাল দাস, সুকুমার মুখোপাধ্যায়, আকালিপুরের সুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়দের ক্ষোভ, “এত বড় একটা ঘটনা পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের পাত্তা নাই। তাই এলাকার বাসিন্দারা পুলিশ কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানান। এলাকায় পুলিশর ক্যাম্পের দাবিও তোলেন বাসিন্দারা। সেই সব দাবির কথা জানাতে আমরা পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেছি। কিন্তু বিডিও বা এসডিও কেউ এলাকায় আসেননি।” নলহাটি ২ ব্লকের বিডিও গোবিন্দ নন্দী বলেন, “চুরির ঘটনা শুনেছি। তবে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছেন এ খবর আমার কাছে আসেনি।” জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “তদন্ত চলছি। এলাকাবাসীর দাবি মেনে কুকুর এনে তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু কোনও সূত্র মেলেনি। আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।” শীঘ্রই দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে এবং চুরি যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এসপি।

ছবি: অনির্বাণ সেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন