মেলা নিয়ে সংঘাত তুঙ্গে

সৃষ্টিধরের বিরুদ্ধে পোস্টার বলরামপুরেই

নিজের খাসতালুক বলরামপুরে পোস্টার পড়ল পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর বিরুদ্ধেই! ‘পরিবর্তন’-এর পরে এই প্রথমবার উল্টো চোরাস্রোতের বহিঃপ্রকাশ দেখল বলরামপুর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বলরামপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৫ ০১:১০
Share:

মন্দিরের গায়ে সভাধিপতির বিরুদ্ধে সেই পোস্টার।— নিজস্ব চিত্র।

নিজের খাসতালুক বলরামপুরে পোস্টার পড়ল পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর বিরুদ্ধেই!

Advertisement

‘পরিবর্তন’-এর পরে এই প্রথমবার উল্টো চোরাস্রোতের বহিঃপ্রকাশ দেখল বলরামপুর। পোস্টার প়ড়ার কারণ, বলরামপুরের ঝুলন মেলা নিয়ে এলাকার কালী মন্দির কমিটির সঙ্গে সভাধিপতির সংঘাত। এ দিন বলরামপুরের কালীতলা এলাকার সেই কালী মন্দিরের গায়েই দু’টি পোস্টার দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। তার একটিতে লেখা, ‘মন্দিরে যে দৈনন্দিন খরচ হয়, সেই টাকায় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য মন্দির বন্ধ থাকবে’। অন্য পোস্টারে আবার মন্দির বন্ধ করার মূল কারণ হিসেবে সরাসরি সৃষ্টিধর মাহাতোর দিকেই আঙুল তোলা হয়েছে! সভাধিপতির অভিযোগ, মন্দিরের বিষয়টিকে সামনে রেখে কিছু মানুষ রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন।

ঝুলন পূর্ণিমা উপলক্ষে বলরামপুরের সরাই ময়দানে মেলা বসানো নিয়ে স্থানীয় ঝুলন মেলা কমিটির সঙ্গে বিরোধ বেধেঝে জেলা পরিষদের (আরও নির্দিষ্ট করে বললে সভাধিপতির)। জেলা পরিষদের দাবি মোতাবেক, এই ময়দানের মালিকানা তাদের। তাই মেলা তারা করবে। মেলা থেকে প্রাপ্ত আয়ও জেলা পরিষদের প্রাপ্য। অন্য দিকে, প্রশাসন মেলা বসানোর অনুমতি দিতে টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে ঝুলন মেলা কমিটি। এমনকী, কমিটির তরফে প্রচারপত্র বা খোলাচিঠি ছাপিয়ে বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানোও হয়। ওই প্রচারপত্র প্রকাশিত হবার পরেই স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় মেলা কমিটির। সোমবার মেলা কমিটি মেলা করার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে সভা করার পরে মিছিল করে বলরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়ে প্রধানের কাছে মন্দিরের চাবি জমা দিয়ে দিতে চায়। কমিটির নেতা ও সদস্যেরা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে প্রতিবাদও জানান।

Advertisement

মেলা কমিটির লোকজনের দাবি ছিল, প্রশাসন যখন মেলা বসানোর অনুমতি দিতেই চাইছে না, তখন কালী মন্দিরও পঞ্চায়েতই সামলাক। কারণ, প্রতি বছর এই মেলা থেকে যে আয় হয়, তা ওই মন্দিরের নিত্যপুজোর পাশাপাশি আরও নানা কাজে খরচ করা হয়। কিন্তু, পঞ্চায়েত প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মাঝি মন্দিরের চাবি নিতে চাননি। তিনি কমিটির সদস্যদের বলেন, মাঠ জেলা পরিষদের। অনুমতি দিলে জেলা পরিষদই দেবে। পঞ্চায়েত ‘নো-অবজেকশন’ দিতে পারে মাত্র।

কমিটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, এই ঝুলন মেলা থেকে প্রাপ্ত অর্থে গোটা বছর কালী মন্দিরের খরচ চলে। এখন সেই সেই অর্থ মেলা কমিটির হাতে না এলে কী ভাবে মন্দিরের খরচ চলবে, এই প্রশ্নের সমাধান না হওয়াতেই মন্দির বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্যেরা। সোমবার সৃষ্টিধরবাবুর সমর্থনে এলাকায় একটি বাইক-মিছিল বের করেছিল তৃণমূল।

আর মঙ্গলবার সংবাদপত্র মারফত সৃষ্টিধরবাবুর বসানো নিয়ে স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানার পরে সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধেই পোস্টার পড়ল মন্দিরের গায়ে। মন্দির কমিটির এক সদস্য জানান, যেটা সত্যি সেটাই লেখা হয়েছে। মন্দির কমিটির আর এক সদস্য সুভাষ মাঝি বলেন, ‘‘এ দিন মন্দির বন্ধ থাকায় বহু মানুষ পুজো দিতে এসে ফিরে গিয়েছেন।’’ আর পোস্টার পড়া নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যা ঘটনা সেটাই লেখা হয়েছে!’’

প্রসঙ্গত, সৃষ্টিধরবাবু এই বলরামপুর থেকেই জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য। এই এলাকা বরাবর তাঁর খাসতালুক হিসাবে পরিচিত। এ হেন বলরামপুরে মন্দির বন্ধ হওয়ার জন্য তাঁকেই দায়ী করে পোস্টার পড়েছে জেনেও সৃষ্টিধরবাবু এ দিন কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া দেওয়ার পথে হাঁটেননি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি কেন খামোকা মন্দির বন্ধ হওয়ার কারণ হতে যাব? আমি তো মন্দির বন্ধ করার পক্ষে নই। আর বন্ধ করতে বলিওনি। এখানে মন্দিরের কোনও কিছুতেই জেলা পরিষদ হস্তক্ষেপ করছে না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট—মন্দিরকে সামনে রেখে এ ভাবে জেলা পরিষদের সম্পত্তিকে (সরাই ময়দান) ব্যবহার করা যাবে না।’’

একই সঙ্গে সভাধিপতি জানিয়েছেন, এ দিন মেলা কমিটির কিছু লোকজন তাঁর কাছে এসেছিলেন। তিনি তাঁদের জানিয়েছেন, মন্দির রং করার সময় জেলা পরিষদ তাঁদের টাকা দেবে। পাশাপাশি তিনি নিজেও চাঁদাও দেবেন। সৃষ্টিধরবাবুর কথায়, ‘‘কিন্তু আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার। মেলা থেকে প্রাপ্ত আয় বলরামপুরের উন্নয়নেই ব্যয় করা হবে, শুধু একটি মন্দিরের জন্য নয়। যে বইমেলা এই মাঠে শুরু হয়েছে, তা জনমানসে কতটা ভাল প্রভাব ফেলেছে, তা তো এখানকার মানুষ জানেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন