পূর্ত দফতর চায় রাস্তা ‘দত্তক’ নিতে, নেই নথিই

মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, গ্রামগঞ্জের পথঘাটও শহরের মতো ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ হোক। তা হলে এক দিকে যেমন সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, তেমনই প্রতি বছর রাস্তা সারাই বাবদ সরকারের মোটা খরচ বাঁচবে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মেনে পুরসভা ও জেলা পরিষদের হাতে থাকা রাস্তার ‘দত্তক’ চেয়ে ২০১৫-এর ১৬ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল পূর্ত দফতর।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:২১
Share:

মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন, গ্রামগঞ্জের পথঘাটও শহরের মতো ঠিকঠাক রক্ষণাবেক্ষণ হোক। তা হলে এক দিকে যেমন সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে, তেমনই প্রতি বছর রাস্তা সারাই বাবদ সরকারের মোটা খরচ বাঁচবে। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মেনে পুরসভা ও জেলা পরিষদের হাতে থাকা রাস্তার ‘দত্তক’ চেয়ে ২০১৫-এর ১৬ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল পূর্ত দফতর। নবান্নের খবর, বিজ্ঞপ্তি জারির পরে দেড় বছর কেটে গেলেও দায়িত্ব বুঝে দেওয়া তো দূরের কথা, অধিকাংশ জেলা পরিষদ সব রাস্তার দাগ, খতিয়ান ও মৌজার খুঁটিনাটি তথ্যটুকুও খুঁজে পাচ্ছে না।

Advertisement

অথচ, এ সব না পেলে রাস্তার দায়িত্ব যে নেওয়া যাবে না— বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলেছে পূর্ত দফতর। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘শুধু অধিকার পেলেই তো হবে না, কাজের সুবিধার্থে রাস্তার মৌজা ম্যাপ, দু’পাশের জমির মাপ, জমির মালিকানা—সমস্ত তথ্য পাওয়াটা আবশ্যিক।’’

পাশাপাশি জেলা পরিষদ ও পুরসভাগুলি এত দিন কোন খাতের টাকায় ওই সব রাস্তা সারাই করেছে, তারও হিসেব চাওয়া হয়েছে।

Advertisement

রাস্তা দত্তক দিতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে জেলা পরিষদগুলি। কারণ রাস্তা সারাইয়ের টাকা সঙ্কুলান করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। তবে পূর্ত দফতরের এই সব শর্ত পেয়ে মাথায় হাত জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষগুলির। কারণ, অধিকাংশ রাস্তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য তাদের কাছে নেই।

কেন?

কারণ— পূর্ত দফতর যে ভাবে রাস্তা তৈরির আগে ঠিকুজি পরীক্ষা করে জমির দখল নেয়, পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদ সাধারণ ভাবে তা করে না। ভূমি দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘গ্রামে অনেক ক্ষেত্রে বাবা বাছা করে রাস্তার জমি নেওয়া হয়। রাস্তা হলে এলাকার কী উপকার হবে, কার্যত সেই যুক্তিতেই জমি আদায় করেন পঞ্চায়েত সদস্যরা। সেই জন্যই সব রাস্তার দাগ, খতিয়ান পাওয়া যাওয়া যাচ্ছে না।’’

তা হলে উপায়?

বাধ্য হয়ে জেলা পরিষদগুলি ভূমি দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে। কিন্তু এক ভূমিকর্তার কথায়, ‘‘জেলার অফিসগুলিতে রোজকার কাজ করারই লোক নেই!’’

সমস্যা আরও রয়েছে। নবান্নের এক কর্তা বলছেন, জেলা পরিষদের হাতে যে রাস্তাগুলি রয়েছে তার অধিকাংশই বাম আমলের প্রথম দিকে তৈরি। পুরনো নথি ঘেঁটে রাস্তার জমির দাগ নম্বর, খতিয়ান মৌজা ম্যাপ বার করা সময়সাপেক্ষও বটে।

সূত্রের খবর, বর্ধমান জেলা পরিষদ প্রথম দফায় তাদের ৩৪টি রাস্তা পূর্ত দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও মাত্র ছ’টির নথি খুঁজে পেয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ১৫টি রাস্তার দায়ভার হস্তান্তর করবে। কিন্তু এখনও সব কাগজপত্র খুঁজে পায়নি। বর্ধমানের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ উত্তম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জেলা পরিষদের নিজস্ব কী সম্পত্তি আছে, তা-ই আমরা জানি না। বাম শাসকেরা তেমন কিছু নথিপত্র রেখে যায়নি। ভূমি দফতরের এক জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে সম্প্রতি নিয়োগ করে কাগজপত্র খোঁজা হচ্ছে।’’

কার্যত এই ছবি সর্বত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন