মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে ১০ লক্ষ টাকার প্রকল্প জমার নির্দেশ

কর্মাধ্যক্ষ-কোটা, বিতর্কে জেলা পরিষদ

প্রত্যেক কর্মাধ্যক্ষকে ১০ লক্ষ টাকার কাজের প্রস্তাব জমার নির্দেশ দিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, কর্মাধ্যক্ষদের এই ‘কোটা’ বেঁধে দেওয়ার পরে প্রকল্পের প্রস্তাব জমার শেষ দিন ছিল শুক্রবার।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ২৩:৫৬
Share:

প্রত্যেক কর্মাধ্যক্ষকে ১০ লক্ষ টাকার কাজের প্রস্তাব জমার নির্দেশ দিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, কর্মাধ্যক্ষদের এই ‘কোটা’ বেঁধে দেওয়ার পরে প্রকল্পের প্রস্তাব জমার শেষ দিন ছিল শুক্রবার। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, ৬ জন কর্মাধ্যক্ষ ইতিমধ্যে প্রকল্প জমা দিয়েছেন। বাকিরা সোমবারের মধ্যে দিয়ে দেবেন।

Advertisement

আগামী সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুর সফরে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে এই কর্মাধ্যক্ষ ‘কোটা’ নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিরোধীদের দাবি, টাকা পড়ে থাকার জন্য পাছে মুখ্যমন্ত্রীর ধমক খেতে হয়, সে জন্য তড়িঘড়ি কর্মাধ্যক্ষদের এ ভাবে প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। কারণ, জেলা পরিষদের তহবিলে মোটা অঙ্কের টাকা পড়ে থাকায় গত বছর এক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিলেন সভাধিপতি উত্তরা সিংহ। মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, টাকা পড়ে থাকবে, অথচ কাজ হবে না, এটা চলবে না। জেলা পরিষদ সূত্রে খবর, ক’দিন আগেও বরাদ্দের পরে কয়েক কোটি টাকা পড়েছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে তড়িঘড়ি এ ভাবে প্রকল্পের প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে।

এ ভাবে কর্মাধ্যক্ষদের বাড়তি সুবিধে দেওয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, গোটা জেলায় ব্লক রয়েছে ২৯টি। আর জেলা কর্মাধ্যক্ষ ৯ জন। তাহলে বাকি ২০টি ব্লক কেন প্রকল্পের প্রস্তাব দিতে পারবে না, সেই প্রশ্ন উঠছে। জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রীতা জানা বলেন, “কর্মাধ্যক্ষদের ১০ লক্ষ টাকা করে প্রকল্প জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে শুনেছি। এ সব অবৈধ ভাবে হচ্ছে। কর্মাধ্যক্ষদের ‘কোটা’ থাকে বলে জানা নেই।’’ রীতাদেবীর আরও সংযোজন, ‘‘এই কোটা নিয়ে জেলা পরিষদের সভায় কোনও দিন আলোচনা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। এমন প্রস্তাবও পাশ হয়নি। আসলে কর্মাধ্যক্ষদের বাড়তি গুরুত্ব দিতেই অলিখিত ভাবে এ সব করা হচ্ছে।’’ এমনকী জেলা পরিষদের এক তৃণমূল সদস্যও মানছেন, “কর্মাধ্যক্ষরা এ ভাবে বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারেন না। ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ অনুযায়ী কাজ হওয়ার কথা। কর্মাধ্যক্ষদের সুপারিশকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে কেন বুঝতে পারছি না।”

Advertisement

কর্মাধ্যক্ষ ‘কোটা’র কথা অবশ্য মানতে নারাজ জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। বিরোধীদের বোঝার ভুল হচ্ছে! কাজ তো ব্লকেরই হবে।” তাঁর যুক্তি, এটা তো ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। টাকা পাবে দফতরগুলো পাবে দফতরগুলো তাদের মতো করে কাজ করবে। কর্মাধ্যক্ষরা তো এক-একটা দফতরেরই কাজকর্ম দেখভাল করেন।

সাংসদ, বিধায়কদের টাকা খরচের নির্দিষ্ট ‘কোটা’ অর্থাৎ এলাকা উন্নয়ন তহবিল রয়েছে। । ফি বছর এই তহবিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু জেলা কর্মাধ্যক্ষদের ক্ষেত্রে এমন কিছু নেই। জেলা পরিষদের বরাদ্দ টাকায় কী কী কাজ হবে, সাধারণত তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক হয়। ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ করে কাজ এগোয়। সে ক্ষেত্রে কর্মাধ্যক্ষদের থেকে এ ভাবে কাজের প্রস্তাব চাওয়ায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে। যদিও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের দাবি, বিরোধীদের এই অভিযোগ উন্নয়ন থামিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের কথায়, ‘‘বিরোধীরা অকারণ অভিযোগ তুলছে। এতে পক্ষপাতিত্বের কোনও বিষয় নেই। বরং কাজেই সুবিধা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন