ডাকাতিতে জেল খেটেও অনায়াসে ওলা-র চালক

এত দিন ধরে অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি সংস্থা ওলা ও উবের-এর তরফে দাবি করা হচ্ছিল, গাড়িচালকদের নাম নথিভুক্ত করার সময়ে খতিয়ে দেখা হয় যে, তাঁরা আগে কখনও কোনও অপরাধে যুক্ত ছিলেন কি না। কারও যদি অপরাধের পূর্ব ইতিহাস থাকে, তা হলে তাঁকে আর চালক হিসেবে নেওয়া হয় না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:২২
Share:

গুড্ডু সিংহ ও শঙ্কর সাউ

এত দিন ধরে অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সি সংস্থা ওলা ও উবের-এর তরফে দাবি করা হচ্ছিল, গাড়িচালকদের নাম নথিভুক্ত করার সময়ে খতিয়ে দেখা হয় যে, তাঁরা আগে কখনও কোনও অপরাধে যুক্ত ছিলেন কি না। কারও যদি অপরাধের পূর্ব ইতিহাস থাকে, তা হলে তাঁকে আর চালক হিসেবে নেওয়া হয় না।

Advertisement

বুধবার ভোরে শহরের বুক থেকে এক নাবালিকাকে তুলে নিয়ে গিয়ে গাড়ির ভিতরে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ যে দুই যুবকের বিরুদ্ধে উঠেছে, তার মধ্যে এক জন গুড্ডু সিংহ ওলার নথিভুক্ত চালক। যার অর্থ, গুড্ডুর নাম নথিভুক্ত করার আগেও ওলার তরফে দেখে নেওয়া হয়েছিল যে তার কোনও অপরাধের ইতিহাস রয়েছে কি না। এবং সেটা করা হয়েছিল পুলিশের সাহায্য নিয়েই।

বুধবার বিকেলে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিশাল গর্গ জানিয়ে দিয়েছেন, ২০১৩ সালে হেস্টিংস থানায় একটি ডাকাতির ঘটনায় এই গুড্ডুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সেই সময়ে বেশ কিছু দিন গুড্ডু জেলও খাটে।

Advertisement

স্বভাবতই এখন প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কী ভাবে অপরাধের পূর্ব ইতিহাস পরীক্ষা করা হয়?

ওলা-র এক কর্তার কথায়, ‘‘এক জন যুবকের সঙ্গে আগে অপরাধ জগতের কোনও যোগাযোগ ছিল কি না, তা পরীক্ষা করার মতো আমাদের তো কোনও রকম পরিকাঠামো নেই। পুলিশের উপরেই তো এ ক্ষেত্রে ভরসা করতে হবে।’’

মাঝেমধ্যেই শহরে বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনায় অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সিচালকের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। বুধবার ভোরের ঘটনা সমস্ত ধরনের নৃশংস ঘটনাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই যদি পূর্ব ইতিহাস পরীক্ষা করার হাল হয়, তা হলে তো ধরে নিতে হবে শহরের বুকে ওলা-উবেরের অনেক চালকেরই অপরাধের সঙ্গে পূর্ব সম্পর্ক রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এদের উপরে ভরসা করে কী করে নিশ্চিন্তে অ্যাপ-নির্ভর ট্যাক্সিতে যাতায়াত করবেন সাধারণ মানুষ?

ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত সেই গাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

ওলা-র তরফে জানানো হয়েছে, ওই গাড়ির সঙ্গে এ দিনই সম্পর্ক ছিন্ন করে দিয়েছে তারা। বুধবার সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ঘটনার কথা জানতে পারার পরেই ওই গাড়ির মালিকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংস্থার আরও দাবি, যে সময়ে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই সময়ে ওই গাড়িটি ওলা-র ডিউটি করছিল না। তবে, গুড্ডুর সঙ্গে এ দিন ধৃত শঙ্কর সাউও মাঝেমধ্যে ওই ওলা গাড়িটি চালাত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। কী করে নথিভুক্ত চালক না হওয়া সত্ত্বেও শঙ্কর সেই গাড়ি চালাত, তা-ও অবশ্য জানা যায়নি।

পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘ওলা-উবেরের মতো সংস্থাগুলি চালক নিয়োগের ব্যাপারে সতর্ক না হলে সরকার তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের কথা ভাবনাচিন্তা করবে। ওই গাড়ির পারমিট বাতিল করা হয়েছে। ওলাকে কারণ দর্শানোর নোটিস পাঠিয়েছে পরিবহণ দফতর।’’

বুধবার খিদিরপুরে অভিযুক্ত দুই যুবকের আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, ২৩-২৪ বছরের ওই দুই যুবক গত বেশ কয়েক বছর ধরে মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিল। শঙ্করের ভাই গৌরব সাউ এ দিন বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাত একটা নাগাদ দাদার মোবাইলে একটা ফোন আসে। দাদা তখন আমার পাশেই শুয়ে ছিল। দশ মিনিট কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।’’

শঙ্করের আত্মীয়দের অভিযোগ, গুড্ডুর সঙ্গে মেলামেশার ফলেই বিপথে চলে যাচ্ছিল শঙ্কর। যদিও এখনও পর্যন্ত পুলিশের খাতায় তার কোনও নাম ওঠেনি। গুড্ডুর মা সীমাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘প্রচুর মদ খেত। মদই ওকে শেষ করে দিল।’’

ওলা-র ওই গাড়িটি আপাতত ওয়াটগঞ্জ থানায় রাখা আছে। গাড়িটিকে যে অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে সেই অবস্থাতেই পুলিশ রেখে দিতে চাইছে। কারণ, ধর্ষণ ও খুন যা হয়েছে, তা পুরোটা ওই গাড়ির ভিতরেই ঘটেছে। পুলিশের তদন্তকারী অফিসারদের মতে, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে এই গাড়িটি ভাল করে পরীক্ষা করালে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন