সাতে সাত রুখে মুখরক্ষা পর্ষদের

বুধবার জীবনবিজ্ঞানের প্রশ্নও পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বলে রটে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:১০
Share:

মাধ্যমিক পরীক্ষা কার্যত শেষ হয়েছে এ দিনই। কাল, শুক্রবার ঐচ্ছিক পরীক্ষা। ছবি: সংগৃহীত।

সাতে সাতই হতে যাচ্ছিল! মাধ্যমিক পরীক্ষার একেবারে শেষ প্রান্তে এসে জীববিজ্ঞান পরীক্ষায় কোনও ক্রমে মুখরক্ষা হল মধ্যশিক্ষা পর্ষদের।

Advertisement

বুধবার জীবনবিজ্ঞানের প্রশ্নও পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টার মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বলে রটে গিয়েছিল। যথারীতি শুরু হয়ে যায় হইচই। এমনকি সাতে সাত হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ব্যঙ্গবিদ্রুপের বান বইতে থাকে। তবে পরীক্ষার শেষে মিলিয়ে দেখা যায়, হোয়াটসঅ্যাপে যে-প্রশ্ন ছড়িয়েছে, তার সঙ্গে এ দিনের জীবনবিজ্ঞানের প্রশ্নের মিল নেই।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দিন যে-প্রশ্ন ছড়িয়েছিল, সেটা গত বছরের প্রশ্ন। আসলে একটা বড় চক্র কাজ করছে। তবে তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তার মোকাবিলা করা হচ্ছে কড়া ভাবেই।’’

Advertisement

মাধ্যমিক পরীক্ষা কার্যত শেষ হয়েছে এ দিনই। কাল, শুক্রবার ঐচ্ছিক পরীক্ষা। প্রশ্ন হল, পরপর ছ’দিন প্রশ্ন বেরিয়ে গেল কী ভাবে? শিক্ষক শিবিরের একাংশের বক্তব্য, এ বার পরীক্ষা পরিচালনায় শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল খুবই কম। পরীক্ষা পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন সরকারি আধিকারিকেরা। তা হলে ভূত কি ছিল সর্ষের মধ্যেই? অনেকের প্রশ্ন, পরীক্ষা শেষ হলেও ভূত তো অধরাই থেকে গেল। তার কী হবে?

পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্ন ছড়ানোর অভিযোগে ‘খোকাবাবু’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের তিন যুবককে গ্রেফতার এবং দুই নাবালককে আটক করেছিল সিআইডি। তাতেও সমাধান মেলেনি। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্ন বেরিয়ে গিয়েছে তার পরেও। কয়েকটি জেলার বিভিন্ন অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও ভৌতবিজ্ঞানের প্রশ্ন বেরিয়ে যায় সেই মোবাইলের মাধ্যমেই।

এ দিনও ওই সব জেলার কিছু অংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। তা হলে কি ইন্টারনেট বন্ধ করেই সাফল্য এল? শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা সাফল্য বা ব্যর্থতা নয়। সাড়ে ১০ লক্ষ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে। পকেটে করে কে কী ভাবে মোবাইল নিয়ে যাচ্ছে, ধরা খুব কষ্টকর। তবু এটা আটকানোর চেষ্টা চলছে খুব কড়া ভাবেই।’’

বিরোধী শিবিরের কটাক্ষ, কেমন চেষ্টা চলছে, সেটা তো দেখাই যাচ্ছে! এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য জানান, পরীক্ষা ‘সফল ভাবে উতরে দেওয়া’র জন্য তাঁরা এ দিন পর্ষদের দফতরের রেলিংয়ে গোলাপগুচ্ছ উপহার দিয়ে এসেছেন!

শিক্ষা মহলের একাংশের প্রশ্ন, পর্ষদ কি পরের বারেও জেলায় জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে পরীক্ষা নেবে? তাতে সাধারণ মানুষ কয়েক ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেন। এটা কেন হবে? তার থেকে কড়া নজরদারি চালিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে যাওয়া বন্ধ করা তো অনেক সহজ কাজ। পুলিশ-প্রশাসন সেটা পারছে না কেন?

ছ’দিন প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় অভিভাবকেরাও ক্ষুব্ধ। মিত্র ইনস্টিটিউশনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কিছু পরীক্ষার্থীর অভিভাবক। তাঁদের মতে, প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ায় পর্ষদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা এত কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছে। একটা দুষ্টচক্র প্রশ্ন বাইরে বার করে দেওয়ায় তাদের পড়াশোনার মূল্য থাকছে না। ওরা খুব মুষড়ে পড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন