কাঠগড়ায় ছাপাখানা

‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে আমার হাত দিয়েই’

তদন্তের স্বার্থে আমাকে যদি গ্রেফতার করা হয়, আমি তদন্তে সাহায্য করব। কারণ আমি না-বুঝেই ওদের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছি। এই দুর্নীতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পুলিশ-প্রশাসনের এই বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪৬
Share:

ফাইল চিত্র।

এক সময় তিনি কাজ করতেন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের এক বেসরকারি ছাপাখানায়। অশোক দেব চৌধুরী নামে সেই প্রাক্তন কর্মীর অভিযোগ, ওই ছাপাখানা থেকে পশ্চিমবঙ্গের জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশ্নপত্র, উত্তরপ্রদেশ ও ত্রিপুরার বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

অশোকবাবু ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ এবং সিআইডি-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কোনও পদক্ষেপ না-করায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। আদালত সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট থানাকে এই বিষয়ে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

মধ্যমগ্রামের ওই বেসরকারি ছাপাখানা সংস্থা উত্তরপ্রদেশ ও ত্রিপুরার শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নপত্র ছাপার বরাত পায়। অশোকবাবুর অভিযোগ, তাঁরই মাধ্যমে পরীক্ষার আগে ওই দুই রাজ্যে প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়েছিল। প্রশ্নপত্রগুলির বিনিময়ে উত্তরপ্রদেশের ৫০ জন পড়ুয়ার প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারী জানান, নিজের অজান্তেই তিনি ওই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তার পরে কাজ ছেড়ে দেন। এখন সব কিছু প্রকাশ করে দেওয়ায় তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, এ রাজ্যের কয়েকটি নামী কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে ওই ছাপাখানা সংস্থার। জয়েন্টের প্রশ্নপত্র ইতিমধ্যে ফাঁস হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁর সন্দেহ। তিন বছরের জন্য ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের।

Advertisement

অশোকবাবুর আইনজীবী চন্দ্রশেখর বাগ জানান, বিধাননগর কমিশনারেট ও বিধাননগর সাউথ পুলিশ স্টেশনে তাঁর মক্কেল অভিযোগ করেছেন। প্রকাশ্যে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ জানানোর পরে তাঁর মক্কেলকে খুনের চেষ্টা চলছে। অথচ পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘সেই জন্য বিধাননগরের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন জানানো হয়। তিনি পুলিশকে দ্রুত তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।’’

অভিযোগকারী অশোকবাবু বলেন, ‘‘তদন্তের স্বার্থে আমাকে যদি গ্রেফতার করা হয়, আমি তদন্তে সাহায্য করব। কারণ আমি না-বুঝেই ওদের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছি। এই দুর্নীতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। পুলিশ-প্রশাসনের এই বিষয়ে সদর্থক ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। আমি সিআইডি এবং সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড তো প্রেসিডেন্সির প্রবেশিকা পরীক্ষা নেয়। সেখানেও গরমিল হয়ে যেতে পারে।’’

আনন্দবাজারের তরফে অভিযুক্ত ছাপাখানা সংস্থার এক কর্তাকে ফোন করা হলে তিনি সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের নাম ও অফিসের ঠিকানা জানতে চান। তার পরে বলেন, সংবাদপত্রের অফিসে গিয়ে দেখা করে তিনি যা জানানোর জানাবেন। কিন্তু আরও কিছু প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ভুল নম্বরে ফোন করা হয়েছে। তার পরেই ফোন কেটে দেন ওই কর্তা।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন তোলেননি। জবাব দেননি মেসেজেরও। সিআইডি ডিআইজি (অপারেশন) নিশাদ পারভেজ বলেন, ‘‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে তবেই মন্তব্য করব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement