মাধ্যমিকের প্রথম দিনেই মোবাইলে প্রশ্ন বাইরে! 

পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পর্ষদ। সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার্থীরা তো ফোন আনতে পারবেই না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৫
Share:

সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র।—নিজস্ব চিত্র।

নিরাপত্তা-ব্যূহ নিশ্ছিদ্র করা হচ্ছে বলে দাবি করছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। তা সত্ত্বেও মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই হোয়াটসঅ্যাপ মারফত প্রশ্নপত্র বাইরে চলে আসার অভিযোগ উঠল। স্বভাবতই মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে যে-কড়াকড়ির কথা পর্ষদ বারংবার বলে আসছে, তার সারবত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল।

Advertisement

পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহারে কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পর্ষদ। সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, পরীক্ষার্থীরা তো ফোন আনতে পারবেই না। এমনকি শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরাও যদি পরীক্ষার দিন স্কুলে ফোন না-আনেন, তা হলে ভাল হয়। যদি আনেনও, পরীক্ষা চলাকালীন ফোন রাখতে হবে প্রধান শিক্ষকের লকারে। পরীক্ষার মধ্যে কোনও শিক্ষক ফোন ব্যবহার করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি।

এত নিষেধাজ্ঞার পরেও মঙ্গলবার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে বাংলা পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে প্রশ্নপত্রের বেশ কিছু পাতা কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বাংলা পরীক্ষা বাতিল হবে কি না, সেই প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ।

Advertisement

পর্ষদ-প্রধান কল্যাণময়বাবু জানান, এটাকে প্রশ্ন ফাঁস বলা যাবে না। পরীক্ষা বাতিলেরও কোনও প্রশ্ন নেই। তাঁর দাবি, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্নের কয়েকটি পাতা ছড়িয়ে পড়েছে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে। ফলে এতে পরীক্ষার্থীরা কোনও ভাবে উপকৃত হয়েছে, এমন বলা যায় না। তাই এটাকে প্রশ্ন ফাঁস বলা যাবে না।’’ কল্যাণময়বাবুর ব্যাখ্যা, প্রশ্ন যদি পরীক্ষা শুরুর আগে কোনও ভাবে বাইরে ছড়িয়ে পড়ত, তা হলে সেটাকে প্রশ্ন ফাঁস বলা যেতে পারত।

শিক্ষা শিবিরের একাংশের মতে, পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহারের উপরে জারি করা নিষেধাজ্ঞা ঠিকমতো মেনে চলা হচ্ছে কি না, কঠার ভাবে সেটা দেখা দরকার। সেই নজরদারিতে যে খামতি রয়েছে, এ দিনের ঘটনায় সেটা পরিষ্কার। কী ভাবে প্রশ্নপত্র হোয়াটাসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল, তার কোনও উত্তর দিতে পারেননি কল্যাণময়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বেলা দেড়টা নাগাদ জানতে পারি, প্রশ্নপত্রের প্রথম পাতা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিধাননগর কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেছি।’’ পর্ষদ-প্রধান জানান, যে বা যারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি মালদহের এক পরীক্ষা কেন্দ্রের একটি ছবিকে ঘিরেও এ দিন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ছবিতে দেখা যায়, এক ছাত্র বেঞ্চে বসে প্রশ্নপত্র তুলে ধরেছে। সেই ছবি তোলা হয়েছে জানলার ও-পার থেকে। জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেছেন, ‘‘মালদহ জেলায় প্রশ্ন ফাঁসের কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’

এ দিন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছড়ানোর ঘটনার সমালোচনায় মুখর হয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষকদের মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে এত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে মোবাইলের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে এল? তা হলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত?’’ পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকারের অভিযোগ, পরীক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে শিক্ষকদের উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারেনি পর্ষদ। তারা ভেনু সুপারভাইজার-সহ বেশ কয়েক জনকে নিয়োগ করেছে পরীক্ষা কেন্দ্রে। তা সত্ত্বেও মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। ‘‘তা হলে কি পর্ষদ নিযুক্ত আধিকারিকেরাই মোবাইল ব্যবহার করছেন,’’ প্রশ্ন নবকুমারবাবুর। এবিটিএ-র সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, এটা তো বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো! গত বছর ময়নাগুড়ি স্কুলে প্রশ্ন বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় শাস্তি হয়নি প্রধান শিক্ষকের। ‘‘এ বার পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হল সরকারি আধিকারিকদের। এ ভাবে সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা পরিচালনা করা যে সম্ভব নয়, প্রথম দিনেই সেটা প্রমাণিত হল,’’ বলেন কৃষ্ণপ্রসন্নবাবু।

আজ, বুধবার ইংরেজি-সহ সব দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন