কড়া ব্যবস্থা হবে: পার্থ

প্রশ্নপত্র ফাঁসে গ্রেফতার হতে চাইছি আমিই 

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সত্যি হলে পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান-সহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:১৬
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়

ফোন বেজে উঠল বৃহস্পতিবার দুপুরে: ‘‘আমি গ্রেফতার হতে চাই। তবেই গোটা ঘটনা সামনে আসবে। দোষীরা শাস্তি পাবে। প্রশ্নপত্র নিয়ে দুর্নীতি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’ ফোনে বললেন পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশে সরকারি পরীক্ষার প্রশ্ন এবং জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সরব অশোক দেবচৌধুরী।

Advertisement

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ সত্যি হলে পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান-সহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। অশোকবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে তারা। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে তদন্তভার এখনও গ্রহণ করা হয়নি বলে জানান এক সিআইডি-কর্তা।

কয়েক দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং সিআইডি-র কাছে অশোকবাবু অভিযোগ করেন, উত্তরপ্রদেশ ও ত্রিপুরায় সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এবং সেটা করেছে মধ্যমগ্রামের এক বেসরকারি ছাপাখানা। তিনি ওই ছাপাখানায় কাজ করতেন এবং এই দুর্নীতি হয়েছে তাঁর হাত দিয়েই। রাজ্যের নামী কয়েকটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশ্নপত্রও ফাঁস করা হচ্ছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে তাঁকে খুনেরও চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। বিষয়টি জানালে আদালত তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।

Advertisement

কী ভাবে ফাঁস হল প্রশ্নপত্র?

অশোকবাবু জানান, গত জুলাইয়ে ওই ছাপাখানা তাঁকে উত্তরপ্রদেশে পাঠায়। সঙ্গে দেওয়া হয় কয়েকটি প্যাকেট। তাঁর দাবি, প্যাকেটে কী রয়েছে, তিনি তখন তা জানতেন না। কিন্তু একটি ঘটনায় পুরো বিষয়টি অনাবৃত হয়ে পড়ে। ওই সব প্রশ্ন এবং উত্তরপত্র দেওয়ার জন্য ৫০ জন চাকরিপ্রার্থীকে ডাকা হয়েছিল। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। তাঁদের উত্তর-সহ ওই প্রশ্ন দেওয়ার কথা। কিন্তু যিনি উত্তর লিখবেন, নির্দিষ্ট দিনে তিনি হাজির হতে পারেননি। অগত্যা ওই সব উত্তর লিখে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে অশোকবাবুর উপরে। তখনই তাঁকে গোটা বিষয়টি জানানো হয়। বিষয়টি প্রকাশ করলে তাঁকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন অশোকবাবু।

রাজ্যে ফিরে অশোকবাবু জানতে পারেন, ত্রিপুরাতেও এই ছাপাখানার চক্র রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের প্রশ্নপত্র ফাঁস করার জন্য ওই ছাপাখানা সংস্থা বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগসাজশ করছে বলে অভিযোগ। অশোকবাবু বলেন, ‘‘জয়েন্টের প্রশ্নপত্রের একটি কোড নম্বর রয়েছে। নির্দিষ্ট কয়েক জন ছাড়া সেটি কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। অথচ ওই সব কোচিং সেন্টার সেই কোড নম্বর জানে। জয়েন্ট বোর্ড এই বিষয়ে কিছু জানতেই পারছে না। কিন্তু প্রশ্নপত্র বাইরে চলে যাচ্ছে।’’ এই দুর্নীতির খোঁজ পেয়েই ছাপাখানার চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। অশোকবাবুর অভিযোগ, তার পর থেকে তিনি বারবার পুলিশের কাছে গিয়ে গ্রেফতার হতে চেয়েছেন। কিন্তু পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। তাই তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। বিষয়টি জানানো হয় সিআইডি-কেও।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান মলয়েন্দু সাহা বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা যেমন যেমন সাহায্য চাইবেন, আমি তা করতে প্রস্তুত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন