সুমিত গুপ্ত, রূপেশ কুমার, রিক্তা কুণ্ডু।
প্রাথমিক শোকের ধাক্কা কাটার ক্ষোভ দানা বাঁধছে শান্তিপুর থেকে শুরু করে জেলার প্রায় সর্বত্র।
প্রশ্ন উঠছে, কী করে সকলের চোখের সামনে চলছিল চোলাই মদের কারবার? পুলিশ-প্রশাসন কেন এত দিন ব্যবস্থা নেয়নি? কেন চোখ বুজে বসে ছিলেন আবগারি কর্তারা?
১৯৯৯ সালে কৃষ্ণনগরে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল বিষমদে। তার পর বিভিন্ন এলাকায় দু’এক জনের মৃত্যু হয়। দীর্ঘ দিন পর ফের এই ঘটনায় কার্যত বিব্রত জেলা পুলিশ থেকে প্রশাসন। বিরোধীদের দাবি, এক মাত্র কারণ আবগারি দফতর ও পুলিশের একটা অংশের চোলাই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অবৈধ লেনদেন।
এই ঘটনায় আবগারি দফতরের তিন অফিসার ও আট কনস্টেবলকে সাসপেন্ড করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সে তো ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, তাঁরা চোলাই বিক্রি বন্ধের জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ করেছেন। প্রচুর চোলাই মদও বাজেয়াপ্ত হয়েছে। বুধবার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তের দাবি, “কয়েক দিন আগে ওখান থেকে প্রচুর চোলাই বাজেয়াপ্ত হয়েছে। যত দূর জানা যাচ্ছে, মদটা স্থানীয় ভাবে তৈরি নয়। কোথা থেকে এল, তাতে কিছু মেশানো হয়েছিল কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” রানাঘাট মহকুমাশাসক মনীশ বর্মা বলেন, “কী কারণে ওঁদের মৃত্যু হল, সেটা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই স্পষ্ট হবে।”
গোড়া থেকে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করারও চেষ্টা হয়েছে। দুপুরে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত বিশ্বাস যেমন দাবি করেন, “অসুস্থতা এবং মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হচ্ছে না।” পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না এলে মৃত্যুর কারণ বলা সম্ভব নয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা শ্রীমন্তী মাহাতো, রামাবতী মাহাতোদের অভিযোগ, “গুলবার মাহাতো চোলাই মদ বিক্রি করত নদীর ও পারে কালনা থেকে এনে। সেখানেই এলাকার পুরুষেরা ভিড় করত। গুলবারকে নিষেধ করতে গেলে সে উল্টে হুমকি দিত। মদের জন্য এতগুলো লোক মরল! পুলিশের উচিত ছিল, আগেই ব্যবস্থা নেওয়া।”
জেলাশাসক থেকে শুরু করে পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ কর্তারা প্রায় সকলেই সকাল থেকেই শান্তিপুরে ছোটাছুটি শুরু করেন। ঘটনাস্থলে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডুও। শান্তিপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা পুরপ্রধান অজয় দে-ও সকাল থেকেই এলাকায় ছিলেন। কিন্তু দেখা মেলেনি বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যের। তিনি ছিলেন বিধানসভায়। অরিন্দম কেন এলাকায় না গিয়ে বিধানসভায় এসেছেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তকে ফোন করে তা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা জেলা পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাতে অবশ্য অরিন্দম শান্তিপুর হাসপাতালে আসেন।
শাসক দল তথা প্রশাসন অবশ্য নিজেদের ঘাড় থেকে দায় ঝাড়তেই ব্যস্ত। জেলা সভাধিপতির দাবি, “৩৫-৩৬ বছর ধরে এই অভ্যাস চলে আসছে। আমরা সেটা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। প্রশাসন চেষ্টা করছে। তবে আমিও চাইব, এত বড় ঘটনার পরে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তদন্ত করে দেখা হোক।”