আঙুল উঠছে সৌন্দর্যায়নের যন্ত্রের দিকেই

গাফিলতির অভিযোগ এড়াচ্ছে রেল। দুর্ঘটনার কারণ সন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গড়ার কথা জানান পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা।

Advertisement

ফিরোজ ইসলাম

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৩২
Share:

দুর্ঘটনাস্থলে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা। নিজস্ব চিত্র

সৌন্দর্যায়নের কর্মতৎপরতাই কি বিপদ হয়ে দেখা দিল? উত্তর পেতে দেরি হবে। তবে শতাধিক বছরের পুরনো বর্ধমান স্টেশনের ঐতিহ্যবাহী ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে রেল-কর্তৃপক্ষের গাফিলতির তত্ত্বই ঘুরেফিরে আসছে।

Advertisement

স্টেশনে সৌন্দর্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কাজ চলাকালীন শনিবার রাতে মূল ভবনের পোর্টিকোর লাগায়ো দু’টি স্তম্ভ যে-ভাবে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে, তাতে ওই সংস্থার অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠছে। তার থেকেও বড় যে-প্রশ্ন রবিবার রেল প্রশাসনের অন্দরে ঘোরাফেরা করেছে, সেটি হল, ঠিকাদার সংস্থা বাছাই করার সময় রেলকর্তারা যথেষ্ট সজাগ ছিলেন তো?

গাফিলতির অভিযোগ এড়াচ্ছে রেল। দুর্ঘটনার কারণ সন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গড়ার কথা জানান পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা। এ দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ভবনের কাঠামোর শক্তি পরীক্ষা করানোর কথা ভাবা হচ্ছে। জীর্ণ ও বিপজ্জনক অংশ ভেঙে নতুন নির্মাণ হবে।’’ দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে শর্মা বলেন, ‘‘তদন্তে সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ আজ, সোমবার বর্ধমান স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান নেওয়া হবে।

Advertisement

স্থানীয় সূত্রের খবর, স্টেশন সৌন্দর্যায়নের জন্য কাঠামোর বিভিন্ন স্তম্ভের প্লাস্টার তুলে ফেলা হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে ‘ভাইব্রেটর’-এর মতো ভারী যন্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠছে। ওই সব যন্ত্র ব্যবহারের ফলে কাঠামোয় ফাটল ধরার আশঙ্কা থাকে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। দুর্ঘটনার পরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ভেঙে পড়া ঠেকাতে ইস্পাতের ‘ক্রিপ’ বা চৌকো কাঠামো ব্যবহার করে তড়িঘড়ি ‘সাপোর্ট’ বা ঠেকনা দেওয়ার যে-তৎপরতা চোখে পড়েছে, তার ছিটেফোঁটাও কাজ শুরু করার আগে চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। কাঠামোর সহনক্ষমতা আগাম যাচাই করা হয়েছিল কি না, সেই বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন কাঠামো-বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

১৯০৫ সালে তৈরি বর্ধমান স্টেশন ভবনের মূল কাঠামো চুন-সুরকি, ইট দিয়ে গড়া। ছাদে লোহার কড়ি-বরগা। দুর্ঘটনায় পোর্টিকোর আটটি স্তম্ভের মধ্যে স্টেশনে প্রবেশপথের ডান দিকের দু’টি স্তম্ভ সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। ওই দু’টি স্তম্ভে বসানো ইস্পাতের গার্ডার পড়ে যাওয়ায় বারান্দার কিছু অংশ ভেঙে পড়ে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, ইটের স্তম্ভের সঙ্গে আধুনিক আরসিসি স্তম্ভের ফারাক আছে। ইটের স্তম্ভে জোড় রক্ষা করে চুন-সুরকির মশলা। স্তম্ভের শক্তি নির্ভর করে ইটে-ইটে জুড়ে থাকার উপরেই। পুরনো ভবনে ওই মশলার শক্তি কমতে থাকে। তাই এমন ভবনে কাজে নামার আগে তার কাঠামোর শক্তি সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন। কোনও কারণে স্তম্ভের ইটের জোড় আলগা হলে তা ভার সহ্য করার অবস্থায় থাকে না। উপরকার ভারে কাঠামো ভেঙে পড়ে। বর্ধমান স্টেশনে তেমনটাই ঘটে থাকতে পারে।

দুর্ঘটনার পরে বর্ধমানে এক এবং দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে ‘থ্রু’ ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করা হয়নি। কারণ, প্রবেশপথের মুখে থাকা ওই দু’টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ রাখলে ফুট ওভারব্রিজের উপরে চাপ অসম্ভব বেড়ে গিয়ে নতুন করে দুর্ঘটনার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন