প্রায় শুকনো শ্রীমতী নদী। তার উপরে কংক্রিটের সেতু। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নির্মম অত্যাচারের পর ওই সেতুর নীচে চাষের জমিতে তাঁকে ফেলে রেখে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। প্রায় ২০ ঘণ্টা সেখানেই পড়ে ছিলেন কুশমণ্ডির নির্যাতিতা তরুণী। পরদিন দুপুর থেকেই আলরাস্তা ধরে পতিরাজপুর হাটের দিকে গিয়েছেন লোকজন। অনেকেই পড়ে থাকতে দেখেছেন নির্যাতিতাকে। আমল দেননি। বিকেলের দিকে কয়েক জন কৌতূহলবশত হয়ে কাছে গিয়ে বুঝতে পারেন, সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকা ওই যুবতীর উপর কী ঘটে গিয়েছে!
এখনও যুদ্ধ করছেন ওই তরুণী। ১২ বছর বয়স থেকে শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে করতেই এই জীবনীশক্তি পেয়েছেন বলে দাবি তাঁর গ্রামের মানুষের। আবার তাঁর মানসিক স্থিতি নষ্টের মূলেও সেই অত্যাচারের ধারাবাহিকতাকেই দায়ী করেছেন তাঁরা। এখানকার মানুষ ওই তরুণীকে ভবঘুরের মতো দেখেই অভ্যস্ত। তাই নির্মম অত্যাচারের পরে মালদহ মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন আধা চেতনায় থাকা ওই তরুণীর জবানবন্দির ভিত্তিতে পুলিশ যাদের গ্রেফতার করেছে, তাদের জেরা করে বাকি দোষীদের গ্রেফতার করার ব্যাপারেও দাবি জোরালো হচ্ছে। কিন্তু ঘটনার পরে প্রায় দু’সপ্তাহ হয়ে গেলেও তদন্ত আর বিশেষ এগোয়নি বলে দাবি গ্রামবাসীদের।
বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, ঘটনার সময় জেলা সফরে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন যে করেই হোক কাউকে গ্রেফতার করে দেখাতে হবে, এই লক্ষ্য থেকেই তড়িঘড়ি রামপ্রবেশ শর্মাকে (লেংড়া) পাকড়াও করা হয় বলে বাসিন্দাদের ওই অংশের দাবি। তাকে জেরা করে পরদিন পতিরাজপুর থেকে আন্ধারু বর্মন নামে আরেক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রামের অন্য একটি অংশ অবশ্য দাবি করছে, তরুণী ওই অবস্থার মধ্যেও রামপ্রবেশ ওরফে লেংড়ার নাম উল্লেখ করেছিলেন পুলিশের কাছে। ওই গ্রামবাসীদের আরও দাবি, গ্রামে দু’জন লেংড়া আছে। তার মধ্যে মেয়েটি আলাদা করে রামপ্রবেশকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। এর থেকেই বোঝা যায়, তাঁর মানসিক স্থিতি এখনও পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি।
তার পর থেকে প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। আর কেউ গ্রেফতার হয়নি। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও কুশমন্ডির ওই নির্যাতনের বিষয়ে প্রশ্ন করলেই ফোন কেটে দিচ্ছেন। এমনকী, কুশমন্ডি থানার আইসি, এসডিপিওদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, সাংবাদিকদের সঙ্গে এই বিষয়ে কোনও কথা বলা যাবে না। কেন পুলিশের এত রাখঢাক— সেই প্রশ্ন তুলেছে আদিবাসী সংগঠনগুলি।