স্বজনপোষণ-সহ নানা ধরনের অভিযোগ উঠছিল। তাই ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মান পেতে হলে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিজের থেকে অনলাইন আবেদনের ব্যবস্থা করেছিল স্কুলশিক্ষা দফতর। কিন্তু বিতর্ক বা অভিযোগ এড়াতে পারছে না ওই পুরস্কার।
রাজ্যে শিক্ষারত্ন সম্মান প্রাপকদের বাছাই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতি। আজ, মঙ্গলবার শিক্ষক দিবসে যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ওই সম্মান নিতে চলেছেন, ওই সমিতি প্রশ্ন তুলেছে তাঁদের কারও কারও নির্বাচন নিয়েও। তাদের বক্তব্য, স্বচ্ছতার অভাবটা শুধু যোগ্য প্রার্থীদের এড়িয়ে অন্যদের নির্বাচনেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এমন কিছু শিক্ষককেও ওই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হচ্ছে, যাঁদের কার্যকলাপ আদৌ প্রশ্নাতীত নয়। নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা ক্ষেত্রে বিস্তর অস্বচ্ছতার জন্য যাঁরা কোনও ভাবেই দায় এড়াতে পারেন না।
সমিতির অভিযোগ, সরকারি স্কুলগুলিতে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ছাত্র ভর্তির ঘটনা ঘটছে কয়েক বছর ধরে। এর পিছনে রয়েছেন এলাকার কোনও কোনও রাজনৈতিক নেতা এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। যে-সব স্কুলের প্রধানেরা বিনা প্রশ্নে নেতাদের বশংবদ হয়ে এই সব অনিয়ম মেনে নিচ্ছেন, দেখা যাচ্ছে, তাঁদের অনেকের বরাতেই শিক্ষারত্নের শিকে ছিঁড়ছে। আর অনিয়মের কোনও রকম প্রতিবাদ করলেই নেমে আসছে বদলির খাঁড়া।
শিক্ষারত্ন বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু সোমবার অভিযোগ করেন, সরকারি স্কুলের শিক্ষারত্ন প্রাপকদের অনেকেই নিজের লেখা বইয়ের ব্যবসা এবং প্রাইভেট টিউশনের সঙ্গে যুক্ত।
তবে স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তার দাবি, শিক্ষারত্ন বাছাইয়ের কাজটা যথেষ্ট স্বচ্ছতার সঙ্গেই করা হয়। এবং এটা দেওয়া হয় শিক্ষকদের সারা জীবনের কাজের ভিত্তিতেই।
কিন্তু সৌগতবাবুদের অভিযোগ, এমন কিছু শিক্ষককে ওই সম্মানের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে, যাঁদের কর্মকাণ্ড সংশয়াতীত নয়। কর্তব্যে অবহেলার জন্য বিধাননগর সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর। এই নিয়ে বিতর্কের সঙ্গে শিক্ষারত্ন বাছাইয়ের বিষয়টি জড়িয়ে গিয়েছে। সৌগতবাবুর দাবি, কর্তব্যে অবহেলার জন্য ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাসপেনশনের ঘটনায় সহকারী প্রধান শিক্ষক তারাপদ সাঁতরার দায় রয়েছে। অথচ আজ তিনিও শিক্ষারত্ন সম্মানের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। কী ভাবে তারাপদবাবু ওই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেন, তার তদন্ত দাবি করেছেন সৌগতবাবুরা।
বিধাননগর সরকারি স্কুলে ঠিক কী ঘটেছিল? গত বুধবার ওই স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে স্কুলশিক্ষা সচিব এবং স্কুলশিক্ষা দফতরের অধিকর্তা যা দেখেছেন, তাতে খুশি হতে পারেননি। অপরিচ্ছন্ন স্কুল, মিড-ডে মিলের হিসেবে অসামঞ্জস্য চোখে পড়েছে তাঁদের। তার পরেই স্কুলশিক্ষা দফতর প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয়। সৌগতবাবুদের বক্তব্য, সুকুমার চক্রবর্তী সবে গত মে মাসে বালিগঞ্জ সরকারি স্কুল থেকে বিধাননগর সরকারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। মিড-ডে মিলের খতিয়ানে অসামঞ্জস্যই হোক বা স্কুলের কাজকর্মে অন্যান্য অসঙ্গতি, সেগুলো তো দীর্ঘদিনের ব্যাপার। তার দায় নতুন দায়িত্ব নেওয়া প্রধান শিক্ষকের ঘাড়ে পুরোপুরি চাপানো যায় কী ভাবে?
সৌগতবাবু জানান, এর আগে সহকারী প্রধান শিক্ষক তারাপদবাবু দু’দফায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ‘‘স্কুলশিক্ষা দফতর থেকে যে-সব অভিযোগ করা হয়েছে, তার দায় তারাপদবাবু অস্বীকার করতে পারেন না,’’ বলেন সৌগতবাবু। তাঁর ব্যাখ্যা, মিড-ডে মিলের মান নিয়ে তারাপদবাবুর সময়েই অভিভাবক এবং কয়েক জন শিক্ষক অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তারাপদবাবুর কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে সুকুমারবাবু সম্প্রতি তাঁকে চিঠি দিয়ে সতর্কও করেছিলেন।
তারাপদবাবু অবশ্য এ দিন জানান, তিন বছর ধরে তিনি সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সদস্য-পদে নেই। সেই কারণেই হয়তো তাঁর বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগ করছে ওই সমিতি। ওই সহকারী প্রধান শিক্ষকের দাবি, মিড-ডে মিল নিয়ে অভিভাবক বা শিক্ষকেরা তাঁর কাছে কোনও দিনই অভিযোগ করেননি।
আর শিক্ষারত্ন?
‘‘আমার পিএইচডি, প্রকাশিত বই-সহ সব কিছু জানানোর পরেই আমায় এই সম্মানের জন্য বিবেচনা করা হয়েছে,’’ বলছেন তারাপদবাবু।
বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য জানা যায়নি।