কলেজে কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিয়মের ঘটনার কথা যত সামনে আসছে, ততই প্রশ্ন উঠছে কলেজ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও। অভিযোগ, ছাত্র ভর্তিতে দুর্নীতি ঠেকাতে অধ্যক্ষেরা সে ভাবে কিছুই করে উঠতে পারছেন না।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বারবারই অধ্যক্ষদের কঠোর হওয়ার কথা বলে চলেছেন। কিন্তু বাস্তবে বেশির ভাগ অধ্যক্ষ শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সামনে ঠুঁটো জগন্নাথ বলেই অভিযোগ। অধ্যক্ষেরা নিজেরা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় স্বীকার করছেন, এ সব ঘটনা যে ঘটছে তাঁরা জানেন। কিন্তু ছাত্র সংসদের বিরোধিতা করলে কলেজে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়বে।
আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অধ্যক্ষদের হেনস্থার ঘটনা। কিছুদিন আগে কলকাতার এক কলেজের অধ্যক্ষ ভর্তির অনিয়ম নিয়ে কী কী ব্যবস্থা নিয়েছেন সেটা সংবাদপত্রকে জানাতেই ছাত্র সংসদ তাঁকে ঘণ্টা চারেক ঘেরাও করেছিল।
২০১২ সালে তৎকালীন রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকারের নিগ্রহ থেকে শুরু করে গত বছর জয়পুরিয়া কলেজের সান্ধ্য বিভাগের টিচার-ইন-চার্জ অশ্বিনীকুমার রায়ের নিগ্রহের মতো অজস্র ঘটনায় অভিযোগের আঙুল ছিল তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের দিকেই। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য শুনে কলকাতার এক অধ্যক্ষের বক্তব্য, ‘‘কড়া যদি হই তার পর আক্রান্ত হলে শিক্ষামন্ত্রী বাঁচাবেন তো?’’
বাম শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনের মতে, আশঙ্কাটা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেই সঙ্গে শাসক দলের সঙ্গে অধ্যক্ষদের স্বার্থের সম্পর্কও এ ক্ষেত্রে কাজ করছে বলে তাঁদের অভিযোগ। যেমন ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলেন, ‘‘কিছু অধ্যক্ষ সরকারের কাছ থেকে নানাবিধ সুবিধা এবং পদ পাওয়ায় তাঁরা আর শাসক দলের ছাত্র সংগঠনকে চটাতে চান না।’’ এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসেরও মত, অধ্যক্ষেরা ঝঞ্ঝাটে জড়াতে চান না। কারণ এতে তাঁদেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা। শুধু সেই মুহূর্তের ক্ষতি নয় অবসরের পরেও অসুবিধায় পড়তে পারেন বলেও অনেকে ভাবেন।’’
ঘটনা হল, শিক্ষামন্ত্রী নিজেও বিষয়টা অস্বীকার করছেন না। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘এত বার বলে চলেছি তাতেও অধ্যক্ষেরা যদি কড়া না হন তা হলে কী বুঝব? এঁদেরও নিশ্চয়ই কোনও স্বার্থ রয়েছে।’’