Maynaguri

Bikaner-guwahati Express Derailment: ভাঙা স্লিপার আর প্রশ্ন সঙ্গে নিয়েই চলল ট্রেন

রেলকর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, সময় নিয়ে সব ক’টি স্লিপার বদলানোর পরে কেন ট্রেন চালানো হল না?

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:৪৯
Share:

বিকানের এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনের ট্র্যাকশন মোটর খুলে ঝুলছিল। তার ধাক্কায় দীর্ঘ পথ এই ভাবেই ভেঙেছে কংক্রিটের স্লিপার। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক

আটচল্লিশ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই দোমোহনীতে ক্ষতিগ্রস্ত কামরা সরিয়ে, লাইন মেরামত করে ট্রেন চালিয়ে মহড়া দিল রেল। এবং সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে সেই লাইন চালুও হয়ে গেল। প্রথমে গেল অওয়ধ অসম এক্সপ্রেস। সকালে অতি ধীর গতিতে মহড়া শেষ করে খুশিই ছিলেন রেলকর্মীরা। কেউ হাততালি দেন, কেউ জয়ের চিহ্ন দেখান দুই আঙুল তুলে। যদিও তখনও প্রশ্ন চিহ্ন রেখে কংক্রিটের ভাঙা স্লিপারগুলি দেখা যাচ্ছিল লাইনের মধ্যে। সব স্লিপার সরানো যায়নি। তার উপরেই পাতা হয়েছে নতুন লাইন। তাতেই রেলের আধিকারিকদেরই একাংশ দাবি করছেন, বড্ড ঝুঁকি হয়ে গেল। ভাঙা স্লিপার শক্ত করে রেল লাইন ধরে রাখতে পারে না। রেলকর্তাদের একাংশের প্রশ্ন, সময় নিয়ে সব ক’টি স্লিপার বদলানোর পরে কেন ট্রেন চালানো হল না? রেলের অনেক কর্মীও ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন আশঙ্কার কথা।

Advertisement

লাইন মেরামতির কাজে নজরদারিতে ছিলেন, এমন এক সহকারী বাস্তুকার যেমন বলেন, “এখন লাইনের যা অবস্থা হয়ে রয়েছে, তাতে কিছুতেই ঘণ্টায় দশ কিলোমিটারের বেশি গতিতে এই লাইন দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে না। কারণ লাইনের নীচে অগুনতি স্লিপার ভাঙা থাকায় এর বহন ক্ষমতা কমে গিয়েছে। জোর গতিতে ট্রেন চললে স্লিপারে ভার বেশি হয়। তেমন হলে এই স্লিপারগুলি দু’টুকরো হয়ে যাবে। তাতে ফের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।”

সব জেনে বুঝেও কেন এই ঝুঁকি নেওয়া হল?

Advertisement

রেল আধিকারিকদের দাবি, উপরমহলের থেকে আসা ‘চাপে’ই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। যাতে রদ্দি কামরার ট্রেন এবং ত্রুটিযুক্ত ইঞ্জিন চালানোর ত্রুটি থেকে দ্রুত নজর ঘোরানো যায়। অস্বস্তিও কাটানো যায়।

ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেই সারা দেশের নজর পড়ে জলপাইগুড়ির দোমোহনীতে। দুর্ঘটনার পরদিনই রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থলে এসেছেন। সেই সঙ্গে এসেছেন রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে দেশের রেল বিভাগের তা-বড় কর্তাব্যক্তি। তাই পুরো দেশকে রেল কত ‘করিৎকর্মা’, সেই বার্তা দেওয়ার তাগিদ ছিল কর্তাদের। তাই দুর্ঘটনার রাতেই একদিকে বাগডোগরা, অন্য দিকে গুয়াহাটি থেকে মোট তেরোশো শ্রমিক আনা হয়েছিল বলে রেলের দাবি। মুম্বই, দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল বিশেষজ্ঞদের। এক ডজন এজেন্সিকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছিল। লক্ষ্য একটাই, যত দ্রুত সম্ভব ট্রেন চলাচল যাতে শুরু করা যায়। দুর্ঘটনা হয়েছে আপ লাইনে। পাশের ডাউন লাইন দিয়ে এ দিন সকাল থেকে রাজধানী-সহ অন্যান্য ট্রেন চালানো হয়েছে। দুপুরের মধ্যে আপ লাইনেও মহড়া চলাচল হয়ে যায়। তা নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করে রেল বড়সর বিবৃতিও দিয়েছে।

রেল আধিকারিকদেরই দাবি, ভাঙা স্লিপার রেখে দিয়েই ট্রেন চালানোর ঝুঁকি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। মাস কয়েক আগেই জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের পরে দোমোহনী স্টেশন থেকে মূল লাইনের একটি বিকল্প তৈরি করেছে রেল। যাকে ‘ওয়াই লেগ’ বলে। সামান্য এই ঘুরপথে গিয়ে ফের মূল লাইনে যাওয়া যায়। এই পথ দিয়েই ট্রেন চলছিল। তাই দুর্ঘটনার পরে কোনও ট্রেন বাতিল বা সম্পূর্ণ অন্য পথ দিয়ে চালাতে হয়নি। সে পথেই আরও কয়েকটি দিন ট্রেন চালিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত লাইন সম্পূর্ণ বদলে ফেলা যেত।

শনিবার রেলবোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয়কুমার ত্রিপাঠি বলেছেন, “অতি দ্রুত পরিষেবা ফেরানো গিয়েছে। সব দিক খতিয়ে দেখেই সব পদক্ষেপ করা হয়েছে।” রেলের একটি অংশের দাবি, আপাতত এমনই চলবে। কিছু দিন পরে দু’-তিন দিন এই লাইন বন্ধ রেখে সব ভাঙা স্লিপার সরিয়ে নেওয়া হবে।

এ দিন কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটিও তদন্ত শুরু করেছেন। তিনি জলপাইগুড়িতে হাসপাতালে গিয়ে জখম যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। তার পরে আলিপুরদুয়ারে গিয়ে অন্য ডব্লিউএপি-৪ ইঞ্জিন খুঁটিয়ে দেখেছেন। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ইঞ্জিনটিকে দোমোহনী স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, সেখানেই সেটিকে খুলে পরীক্ষা করা হবে। দেখা হবে, গলদ সত্যি কোথায় কতটা ছিল।

করোনার আক্রান্ত: ট্রেন দুর্ঘটনায় জখম হয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি ছিলেন মানিক ওরাওঁ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে কোভিড ওয়ার্ডে নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় তাঁর একটি পায়ের একাংশ কাটা পড়েছে। মানিকের বাড়ি কোচবিহারে। এ ছাড়া আরও ছয় জন ভর্তি রয়েছেন।

অজিতের অন্ত্যেষ্টি: ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত অজিত প্রসাদের (৩৪) দেহ শনিবার সকাল ১০টা নাগাদ নিয়ে আসা হল তাঁর বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের রাধানগরের তালপোখোরিয়ায়। দেহ আসার অনেক আগে থেকেই সেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয়রা। এসেছিলেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। দেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন অজিতের স্ত্রী খুশবু। বাবা লালন যাদবকে কোনও রকমে ধরে রাখেন পরিজনেরা। প্রায় আধ ঘণ্টা এলাকায় দেহ রাখা ছিল। তার পরে, স্থানীয় কালাঝরিয়া শ্মশানে অজিতের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন