গেরুয়া মঞ্চে বিএসএফ ডিজি, বিতর্ক তুঙ্গে

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ, গরু পাচার, বিভিন্ন সামগ্রীর চোরাচালান-সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলার সমস্যা এবং তার সমাধানের দাবি নিয়ে আরএসএস বরাবরই সরব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪১
Share:

হাজিরা বিতর্ক: গেরুয়া শিবিরের চিন্তন বৈঠকে উর্দি পরে উপস্থিত বিএসএফের ডিজি। রবিবার। —নিজস্ব চিত্র।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস) প্রভাবিত সংগঠনের মঞ্চে উর্দি পরে হাজির হলেন বিএসএফ-এর ডিজি কে কে শর্মা। যা দেখে রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন উঠল, তা হলে কি দেশের নিরাপত্তাবাহিনীতেও গেরুয়া অনুপ্রবেশ ঘটে গেল? সঙ্ঘ প্রভাবিত মঞ্চে বিএসএফ-এ শীর্ষ কর্তার যোগ দেওয়ার এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাল তৃণমূল, বাম এবং কংগ্রেস। তৃণমূল নেতৃত্ব জাতীয় স্তরেও বড়সড় প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Advertisement

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশ, গরু পাচার, বিভিন্ন সামগ্রীর চোরাচালান-সহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলার সমস্যা এবং তার সমাধানের দাবি নিয়ে আরএসএস বরাবরই সরব। ওই দাবিতে জনচেতনা এবং আন্দোলন গড়ে তুলতে সীমান্ত চেতনা মঞ্চ নামে সংগঠনকে সক্রিয় করেছে তারা। বিবেকানন্দ রোডে মহর্ষি দধীচি ভবনে ওই মঞ্চের চিন্তন বৈঠকে রবিবার হাজির হয়ে বিএসএফ-এর ডিজি স্বীকার করে নেন, তাঁদের বাহিনীর একাংশ যে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত, তা তাঁরা জানেন এবং ঠেকাতে ব্যবস্থাও নেন।

দু’দিনের চিন্তন বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন, সীমান্তে নারী নির্যাতন এবং গরু পাচার দৈনন্দিন সমস্যা। কিন্তু পুলিশ এবং বিএসএফ নিষ্ক্রিয়। বৈঠকের শেষাংশে সেখানে যোগ দিয়ে ডিজি বলেন, ‘‘আমি এটা অস্বীকার করছি না যে, বিএসএফ-এর একটা অংশ গবাদি পশু পাচারে যুক্ত হয়। কিন্তু আমরা তাদের চিহ্নিত করে চাকরি থেকে বরখাস্ত করি, জেলে পাঠাই।’’ তবে তিনি কেন এ ধরনের অনুষ্ঠানে এসেছেন, সংবাদমাধ্যম তাঁকে সে প্রশ্ন করার সুযোগ পায়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিটকয়েনে প্রতারণা, মামলা এ বার বাংলাতেও

অনুষ্ঠান ঘিরে বিরোধীরা সরব হলেও উদ্যোক্তা সংগঠন অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। সীমান্ত চেতনা মঞ্চের পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) জগন্নাথ সেনাপতি বলেন, ‘‘ম়ঞ্চের কেউ কেউ ব্যক্তিগত ভাবে আরএসএস করতে পারেন। কিন্তু মঞ্চটি আরএসএস-র শাখা সংগঠন নয়। আর ইউপিএ জমানাতেও আমাদের অনুষ্ঠানে বিএসএফ-এর তৎকালীন ডিজি এসেছেন।’’ জগন্নাথবাবুর আরও দাবি, যে সব নাগরিক সংগঠন সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই চলার কথা বিএসএফ-এর নিয়মাবলিতে লেখা আছে।

জগন্নাথবাবুরা যা-ই ব্যাখ্যা দিন, ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কবিতা লিখেছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, গৈরিকীকরণ শেষ সীমায়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-আন্দোলন হবেই। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বিএসএফ-এর ডিজি রাজনীতি করতে চাইলে উর্দি ছেড়ে করতে পারেন। উর্দি পরে এ ভাবে রাজনীতি করা যায় না। এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর।’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘উনি কি এখানে বিশেষ কোনও শলা-পরামর্শে এসেছিলেন?’’ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, তাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে বিষয়টি জানাবেন।

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী এবং কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তীরও বক্তব্য, এই ঘটনায় দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এবং আধা সামরিক বাহিনীতে গেরুয়া অনুপ্রবেশ স্পষ্ট হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন