সমস্যা জানতে রোগীদের কাছে প্রশ্নমালা

হঠাৎ হঠাৎ পরিদর্শনই শুধু নয়, হাসপাতালের সব কিছু ঠিকঠাক চলছে কি না, এ বার সরাসরি রোগীদের থেকে সেই তথ্য সংগ্রহ করবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৬ ০৮:৫২
Share:

হঠাৎ হঠাৎ পরিদর্শনই শুধু নয়, হাসপাতালের সব কিছু ঠিকঠাক চলছে কি না, এ বার সরাসরি রোগীদের থেকে সেই তথ্য সংগ্রহ করবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

কী ভাবে? হাসপাতালে ভর্তি থাকা বা আউটডোরে দেখাতে আসা রোগীর কাছে এ বার পৌঁছে যাবে ছাপানো প্রশ্নমালা। নানা প্রশ্ন থাকবে তাতে। যেমন, ভর্তির সময় কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে? ট্রলি ঠিকঠাক পাওয়া গিয়েছিল? ট্রলি ঠেলার জন্য ওয়ার্ডবয় ছিল? ওয়ার্ডে নার্সরা ঠিক মতো পরিষেবা দিয়েছেন? চিকিৎসক নিয়মিত দেখেছেন? ওষুধ পেয়েছেন? চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা জুলুম করেছেন? রোগীর উত্তরপত্র খতিয়ে দেখবেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। প্রতিলিপি চলে যাবে স্বাস্থ্য ভবনে। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘এই লিখিত জবাব থেকে এমন তথ্যও পেতে পারি, যে সমস্যার কথা জানতামই না। ফলে হাসপাতাল চালাতে সুবিধা হবে।’’

দিন কয়েক আগে নবান্নে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রোগীদের প্রতি মানবিক হওয়ার নির্দেশ দেন। রোগীদের অভিযোগের নিষ্পত্তিতে বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলেন তিনি। হাসপাতালে হঠাৎ পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য-কর্তাদের সরাসরি রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন মমতা। তিনিই রোগীদের কাছে সরাসরি প্রশ্নমালা পৌঁছে দিয়ে সমস্যাগুলো জানার চেষ্টা করতে বলেন

Advertisement

মমতার কাছে অভিযোগ এসেছে যে, ভর্তি থাকা রোগীদের থেকেও হাসপাতালে দেখাতে আসা রোগীদের হেনস্থা বেশি। আউটডোরে ডাক্তারেরা যত্ন নিয়ে দেখেন না, নির্দিষ্ট ডাক্তারের কাছে পৌঁছনোর জন্য নাম লেখাতে সারা দিন কেটে যায়, ফার্মেসিতে ওষুধ থাকলেও মেলে না, ওষুধ পেলেও কাউন্টারের কর্মী ব্যবহার বলে দেন না— এমন বহু অভিযোগ আছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘রোগীদের কাছ থেকে লিখিত তথ্য পেলে সমস্যার গোড়ায় পৌঁছনো যাবে।’’

রোগীদের কাছে প্রশ্নমালা পৌঁছে দেবে কে? ২৪ জুন রাজ্যে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা সঙ্ঘমিত্রা ঘোষের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক সরকারি হাসপাতালে ছাপানো ফর্ম থাকবে। হাসপাতালেরই কিছু কর্মীকে আউটডোর ও ইন্ডোরে এই ফর্ম‌ নিয়ে যেতে হবে। প্রশ্নমালা রোগীদের দিয়েই পূরণ করাতে হবে। কোনও রোগী নিজে উত্তর দিতে না পারলে তাঁর আত্মীয়কে দিয়ে লেখাতে হবে। রোগী বা তাঁর আত্মীয়ের স্বাক্ষর ছাড়া ফর্ম জমা নেওয়া হবে না।

আউটডোরের রোগীর কাছ থেকে কি তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব? এত কর্মী কি হাসপাতালে রয়েছে? স্বাস্থ্য ভবন থেকে বলা হয়, বড় বড় হাসপাতালে প্রতি পাঁচ জন রোগী পিছু এক জনের কাছ থেকে তথ্য নিতেই হবে। না হলে সংগৃহীত তথ্যের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি থাকবে না। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্তত ১০ জন রোগীর কাছ থেকে রোজ তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাটি বলেন, ‘‘হাসপাতালের কর্মী সঙ্কট এই প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে তবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। রোগীদের সাহায্য করতে কয়েকটি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সক্রিয় রয়েছে। তাদের কাজে লাগানো যেতে পারে।’’

সরকারি হাসপাতালের অধিকাংশ চিকিৎসকই এই উদ্যোগে খুশি। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, আগেও নানা রোগীবান্ধব পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। সেগুলোর বেশ কয়েকটি নজরদারির অভাবে শুরু হয়েও শেষ হয়ে গিয়েছে।

নতুন এই উদ্যোগের ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না তো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন