জোট নিয়ে তাড়া দিলেন রাহুল

দু’দিন আগে ফ্রন্টের বৈঠকে বাম শরিকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, জোটের ব্যাপারে সনিয়া-রাহুল ঝেড়ে কাশছেন না কেন! আবার রবিবার এন্টালিতে এক কর্মিসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, সনিয়া গাঁধী নাকি তাঁকে বলেছেন বাংলায় জোট নিয়ে তাঁর কোনও ধারণাই নেই!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৩
Share:

ছবি: পিটিআই।

দু’দিন আগে ফ্রন্টের বৈঠকে বাম শরিকরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, জোটের ব্যাপারে সনিয়া-রাহুল ঝেড়ে কাশছেন না কেন! আবার রবিবার এন্টালিতে এক কর্মিসভায় তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, সনিয়া গাঁধী নাকি তাঁকে বলেছেন বাংলায় জোট নিয়ে তাঁর কোনও ধারণাই নেই!

Advertisement

অথচ বাস্তব হল, বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি কতটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে আজ প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের ডেকে বৈঠক করলেন রাহুল গাঁধী। এ ব্যাপারে আলোচনা দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশও দিলেন রাজ্য নেতৃত্বকে। তবে রাহুল আজ এ-ও পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন যে, কংগ্রেসের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে যেন আসন সমঝোতা না হয়!

বাংলায় জোটের প্রশ্নে রাজ্য নেতাদের মতামত জানতে ঠিক এক মাস আগে দিল্লিতে বৈঠক ডেকেছিলেন রাহুলই। সেই আলোচনায় প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা প্রায় সর্বসম্মত ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে হারাতে তাঁরা বামেদের সঙ্গে জোটে আগ্রহী। যুক্তি ছিল, তৃণমূল শাসনে অতিষ্ঠ রাজ্যের মানুষ এটাই চাইছেন। ১২ নম্বর তুঘলক রোডে ওই বৈঠকের পর রাহুলের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের মুখোমুখি আর কোনও বৈঠক হয়নি। জোটের ব্যাপারে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও করেনি। ফলে সনিয়া-রাহুলের অবস্থান নিয়ে রাজ্য রাজনীতির কোনও কোনও মহলে কিছুটা সংশয় তৈরি হচ্ছিল। তা ছাড়া কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে কংগ্রেসের এক সর্বভারতীয় নেতার কথায়, আজকের বৈঠকের পর সেই সংশয় আর থাকার কথা নয়। তবে প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রাহুল গাঁধী এ-ও বলেছেন, জোটের আগ্রহ যে হেতু উভয় শিবিরে রয়েছে তাই আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে উভয়ের মর্যাদা যেন বজায় থাকে। কে কতগুলি আসনে লড়বে, তা প্রথমে ঠিক করে নিয়ে আসন ধরে ধরে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। আজ সংসদে ইয়েচুরির সঙ্গে রাহুল এবং আহমেদ পটেলের কথা হয়।

Advertisement

আবার সংসদেই কংগ্রেসের দফতরে আজ রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ও প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশীও উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘জোটের ব্যাপারে নীতিগত ভাবে রাহুলের কোনও আপত্তি নেই। তবে সীতারাম ইয়েচুরি বা দিল্লিতে অন্য বাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এআইসিসি-র নেতাদের মনে হয়েছে, বামেরা খুব বেশি আসন কংগ্রেসকে ছাড়তে চাইছেন না। তার পরেই আসন ভাগাভাগি নিয়ে অগ্রগতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রাহুল আলোচনায় বসেছিলেন।’’

প্রশ্ন হল, মোটামুটি ভাবে কতগুলি আসনে লড়তে চাইছে কংগ্রেস? প্রদীপবাবুর জবাব, ‘‘কমবেশি ১০০টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দেওয়া উচিত বামেদের। নইলে জোট নিয়ে কিন্তু জটিলতা তৈরি হতে পারে। একা চলার কথাও তখন ভাবতে হতে পারে কংগ্রেসকে!’’ প্রদীপবাবুর মতো এতটা সুর অবশ্য চড়াননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তবে তিনিও বলেন, ‘‘রাজ্যে এক তৃতীয়াংশ আসনে লড়তে চাইছে কংগ্রেস। এটা মোটেই অমূলক বা অযৌক্তিক দাবি নয়।

আসন ভাগ নিয়ে মহম্মদ সেলিমের সঙ্গে কয়েক বার বৈঠক করেছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য। কলকাতায় বাম নেতাদের সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে। আমরা চাইছি কে কতগুলি আসনে লড়বে, সেই সংখ্যাটা আগে স্থির হয়ে যাক।’’ তবে বাম শিবিরের বক্তব্য, রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে ১০০ আসনের থেকে আরও কিছু নামতে হবে কংগ্রেসকে।

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, ১০০ আসনের কথা বলে পাল্টা চাপের রাজনীতিতে নামল কংগ্রেস। যে কোনও জোটে এ রকম দর কষাকষি বা স্নায়ুর লড়াই হয়েই থাকে। গত ক’দিন ধরে বাম সূত্রে বলা হচ্ছিল, তাঁরা কংগ্রেসকে ৬৫ থেকে ৭০টির মতো আসন ছাড়তে রাজি, তার বেশি নয়। আবার ফ্রন্টের শরিক দলগুলির থেকে কংগ্রেসের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল। এই অবস্থায় পাল্টা চাপ তৈরির চেষ্টায় নামল কংগ্রেস।

যদিও অধীরবাবুর মত, এটা চাপ বা পাল্টা চাপ নয়। গত বিধানসভা নির্বাচন ও লোকসভা ভোটে আসন ভিত্তিতে কোথায় কোন দল প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ছিল, তার ভিত্তিতে আসন ভাগ হওয়া উচিত। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির যুক্তি, আসন নিয়ে কেউ কাউকে ভিক্ষা দিচ্ছে না। কারণ, রাজ্যের অধিকাংশ আসন তো এখন তৃণমূলের দখলেই। তাঁর মতে, উভয় শিবিরকেই আন্তরিক ও যুক্তিসঙ্গত ভাবে এগোতে হবে। তবে অধীরবাবু এ-ও বলেন, ‘‘বাম শরিকরা কী চাইছেন, তা আমাদের মাথাব্যথা নয়। এ নিয়ে সিপিএমকেই ভাবতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন