নবান্নে সৌহার্দ্য সফর

রেল চালাতে মমতার পরামর্শও নেন প্রভু

এসেছিলেন মোদী সরকারের দু’বছরের সাফল্য তুলে ধরতে। ফিরে গেলেন পঞ্চমুখে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

নবান্নে সুরেশ প্রভু এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার প্রদীপ আদকের তোলা ছবি।

এসেছিলেন মোদী সরকারের দু’বছরের সাফল্য তুলে ধরতে। ফিরে গেলেন পঞ্চমুখে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে বসিয়ে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু বলেন, ‘‘মমতা এক জন সফল রেলমন্ত্রী ছিলেন।’’ প্রভু এ-ও জানাতে ভোলেননি যে, মন্ত্রক চালাতে গিয়ে তিনি মাঝে-মধ্যে মমতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে নেন। ‘‘প্রায়ই আমি ওঁর সঙ্গে কথা বলি।’— মন্তব্য প্রভুর। সহযোগিতার বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমি বরাবর সুরেশ প্রভুর সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলেছি। সেটাই বজায় থাকবে।’’

এবং এই ‘সুসম্পর্কের’ আবহেই কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, কলকাতায় মেট্রো প্রকল্পের জট ছাড়াতে তাঁরা হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করবেন। মোদী সরকার যে পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করছে না, তা বোঝাতে কেন্দ্রের তরফে এ দিন তথ্যও পেশ করা হয়েছে।

Advertisement

কী রকম?

বণিকসভার এক আলোচনাচক্রে রেলমন্ত্রী নির্দেশে রেল বোর্ডের সদস্য আদিত্য মিত্তল পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, ২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের জন্য প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার রেল প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল।

নতুন লাইন বা ডাবলিংয়ের কাজ হয়েছিল ১৫৩ কিলোমিটারে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে বিনিয়োগের অঙ্কটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার কোটি। আর নতুন লাইন বা ডাবলিং হয়েছে অন্তত দু’শো কিলোমিটার জুড়ে। রেল বোর্ডের আর এক সদস্য হেমন্ত কুমারের বক্তব্য: পশ্চিমবঙ্গের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, ব্রেথওয়েটের মতো সংস্থাকে নতুন সরঞ্জামের বরাত দেওয়া হয়েছে। কুলটির ‘সেল’ ও রেলের অধীনস্থ ‘রাইটস’-এর যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি পেয়েছে পাঁচশো ওয়াগন তৈরির বরাত। খুব তাড়াতাড়ি ওখানে উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা। উপরন্তু রাজ্যের দু’টো ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের অংশেও কাজ চালু হয়েছে।

এক দিনের ঠাসা কর্মসূচি নিয়ে এ দিন কলকাতা ঘুরে যান রেলমন্ত্রী। শহরের এক পাঁচতারা হোটেলে বণিকসভার আলোচনাচক্র, নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন ও সব শেষে সল্টলেক ইজেডসিসি’তে দলীয় অনুষ্ঠান সেরে রাতে তিনি দিল্লি ফিরেছেন।

রেল-কর্তারা জানিয়েছেন, রেলের নিজস্ব প্রকল্পগুলি রূপায়ণের তাগিদে অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি রেলমন্ত্রীর প্রস্তাব, নতুন নতুন প্রকল্পে রেলের সঙ্গে রাজ্য সরকারও যৌথ উদ্যোগে সামিল হোক। প্রভু জানান, বিভিন্ন রাজ্যে ইতিমধ্যে রেল-রাজ্য যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি গড়ে বড় বড় কাজ শুরু হয়েছে। যেমন, মহারাষ্ট্র ১৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পে রেলের সঙ্গে জোট বেঁধেছে। প্রভুর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গও রেলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের সংস্থা বানিয়ে প্রকল্প গড়ে তুলুক। নতুন ভাবে বেশ কিছু স্টেশনের উন্নয়ন করা হচ্ছে। সেখানেও রাজ্য আমাদের সহযোগী হতে পারে।’’

রেলমন্ত্রীর এ হেন প্রস্তাব সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি। অন্য দিকে রেলমন্ত্রী পরিষেবার মান বাড়ানোর দিকেও জোর দিয়েছেন। যাত্রী ধরে রাখতে, পণ্য পরিবহণের বহর বাড়াতে কাজ করতে বলেছেন। বণিকসভার আলোচনাচক্রে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য— ‘‘আগে রেলের জেনারেল ম্যানেজারদের পিছনে আপনাদের ছুটতে হতো। এখন অবস্থা পাল্টাচ্ছে। জিএম’রাই আপনাদের পিছনে ছুটবেন।’’

কর্মযজ্ঞের গতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যাত্রী পরিবহণে গতি আনতে সেমি হাইস্পিড ট্রেন চালুর পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। হেমন্ত কুমার বলেন, এখন ভারতে এক্সপ্রেস ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। গতিমান এক্সপ্রেস ১৬০ কিমি বেগে চলতে পারে। সেখানে সেমি হাইস্পিড ট্রেন ছুটবে দু’শো কিমি বেগে। এ জন্য পরিকাঠামো খাতে নতুন খরচের দরকার নেই। সেমি হাইস্পিডে দিল্লি থেকে মুম্বই যেতে প্রায় বারো ঘণ্টা সময় বাঁচবে।

নতুন নক্‌শা অনুযায়ী কোচ এলেই বিভিন্ন লাইনে সেমি হাইস্পিড ট্রেন চালানো শুরু হবে বলে দাবি রেল-কর্তার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন