লঞ্চের ডেকে রেলিং টপকানোর মজা। নৈহাটি-ব্যান্ডেল রেলসেতু উদ্বোধনে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
রেল পরিষেবার হাল এমনই যে, নিরাপত্তা থেকে খাবারদাবার পর্যন্ত সব বিষয়েই রোজ রোজ জমা পড়ে হাজারো অভিযোগ। কখনও কখনও তা খবরের শিরোনাম হয়। কয়েক দিন ছোটাছুটি করে তৎপরতা দেখান রেলের কর্মী-অফিসারেরা। সমস্যার স্থায়ী সুরাহা হয় না। রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহাঁই নিত্য ভোগান্তির কথা মেনে নিয়েছেন। হয়রানির মোকাবিলা করতে মোবাইল ফোন প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার কথা বলছেন তিনি।
ট্রেন সফরে নিরাপত্তা থেকে শুরু করে খাবার পর্যন্ত যে-কোনও অভিযোগ জানাতে আর কামরার টিকিট পরীক্ষককে খুঁজে বার করতে হবে না। অথবা ট্রেন থামলে ছুটতে হবে না গার্ডের কাছে। নিজের মোবাইল থেকে ১৩৮ নম্বরে একটি ফোন করলেই রেলকর্মীরা হাজির হয়ে যাবেন ভুক্তভোগী যাত্রীর কাছে।
আপাতত রাজধানী, দুরন্ত ও শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো দামি ট্রেনে এই ব্যবস্থা পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করছে রেল। পরে আস্তে আস্তে অন্যান্য মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। শুক্রবার পূর্ব রেলের গরিফা স্টেশনে হুগলি নদীর উপরে জুবিলি সেতুর পাশে নবনির্মিত রেলসেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে নতুন এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন গোহাঁই।
‘‘ট্রেনে নিরাপত্তার সমস্যা আছে। এ ছাড়াও রয়েছে যাত্রীদের নানান অভিযোগ। খাবারদাবার থেকে শুরু করে অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার— সব কিছু নিয়েই অভিযোগ ভূরি ভূরি। কিন্তু ভ্রমণরত অবস্থায় ওই সব সমস্যার কথা কাকে জানাবেন যাত্রীরা? যাত্রীদের সুবিধার জন্যই প্রযুক্তিনির্ভর এই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে,’’ বলেছেন রেল প্রতিমন্ত্রী। এই ব্যবস্থায় যাত্রীদের নিরাপত্তা থেকে ভাল খাবার, সব কিছুরই ব্যবস্থা করা যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী।
কোন কামরার কোন যাত্রী অভিযোগ জানাতে চাইছেন, ট্রেনে থাকা রেলকর্মীরা তা জানতে পারবেন কী ভাবে? রেল সূত্রের খবর, যাত্রীরা তাঁদের মোবাইল থেকে ১৩৮ নম্বরে এসএমএস বা ফোন করলেই সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোলের মাধ্যমে যাত্রীর
নম্বরটি বা এসএমএসের বক্তব্য পৌঁছে যাবে ট্রেনে থাকা রেলকর্মীর কাছে থাকা ট্যাবলেটের স্ক্রিনে। সেটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে তিনি নিজেই যাত্রীর কাছে গিয়ে খোঁজ নেবেন, কী অসুবিধা হচ্ছে। রাজধানী, দুরন্ত আর শতাব্দীর ক্ষেত্রে এই কাজটি আপাতত করবেন ট্রেন সুপার নিজে। অন্য ট্রেনগুলিতে কে ওই কাজ করবেন, সেটি ঠিক করা হবে পরে।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার জন্য অনেক রেল প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। সেই সব প্রকল্পের কাজও চলছে বলে জানান রাজেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘মমতাদিদির সময়ে ঘোষিত প্রকল্পগুলি আমরা একে একে শেষ করছি। সেই সঙ্গে আমাদের নতুন প্রকল্পগুলিরও কাজ চলছে। রেলকে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলব।’’
এ দিন ওই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই পূর্ব রেলের গরিফা স্টেশনে ‘সম্প্রীতি সেতু’, বোলপুরে একটি রেল উড়ালপুল, ছাতনায় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের নতুন প্ল্যাটফর্ম এবং মেট্রো রেলের মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশনের নতুন প্ল্যাটফর্ম ও অতিরিক্ত মেট্রো রেকের উদ্বোধন করেন গোহাঁই। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর বাড়ি হুগলি নদীর ও-পারে হুগলিঘাটে। অনেক দিন পরে নিজের এলাকায় এসে কিছুটা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বাবুল। অনুষ্ঠানে এসে স্মৃতির পাতা থেকে কিছু গল্পও তুলে ধরেন দর্শক-শ্রোতাদের কাছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে পোর্ট ট্রাস্টের সুসজ্জিত লঞ্চে চেপে নতুন সেতু এবং আশপাশ পরিদর্শন করেন গোহাঁই ও বাবুল। পরে বাবুল আবার ওই লঞ্চে ঘোরেন কিছু ক্ষণ। শোনান গানও।