ইউনেস্কোর ধাক্কায় টনক নড়ল। ফের নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত টানা টয় ট্রেন চালাতে উদ্যোগী হয়েছে রেল মন্ত্রক। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশ কিছু জায়গায় লাইন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় এই রুটে এখন দু’ভাগে খুবই স্বল্প দূরত্বের মধ্যে ট্রেন চলে। ইউনেস্কো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বছর চারেক ধরে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা এই রেললাইন অবিলম্বে সারিয়ে টানা রেল চলাচল শুরু না-করলে তার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হবে। তার পরেই উদ্যোগী হয়েছেন রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া।
এক সময় ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়নো ন্যারো গেজ লাইন আজ জায়গায় জায়গায় ভেঙে গিয়েছে। তিনধরিয়া ও পাগলাঝোরায় ধস নেমে বিস্তীর্ণ এলাকায় লাইনের নীচের মাটি উধাও। বর্তমানে দার্জিলিং ও ঘুমের মধ্যে ৪টি ট্রেন ছাড়া দু’টি ট্রেন চলে দার্জিলিং ও কার্শিয়াং-র মধ্যে। এ ছাড়া ‘জঙ্গল সাফারি’ নামে একটি ট্রেন চলছে শিলিগুড়ি ও রাংটং-এর মধ্যে। টয় ট্রেন পুরো রুটে না-চলায় দার্জিলিং-এ আগের থেকে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে বলে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। তৃণমূলের হাতে রেল মন্ত্রক থাকার সময়ে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে বেশ কয়েক বার দেখা করেছিলেন গোর্খা নেতৃত্ব। কিন্তু কাজ হয়নি। প্রাক্তন রেলমন্ত্রী পবন বনশল ও প্রাক্তন রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সঙ্গেও বৈঠক করেন রোশন গিরিরা। তার পরেও কাজ এগোয়নি।
রেলের হেরিটেজ বিভাগের সঙ্গে সম্প্রতি ইউনেস্কোর যে আলোচনা হয়েছে, তাতেই প্রমাদ গনেছেন রেল কর্তারা। রেল মন্ত্রককে ইউনেস্কো সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অবিলম্বে আমূল সংস্কার করে পুরো রুটে ট্রেন চালু করতে না-পারলে ওই লাইনটিকে হেরিটেজ তালিকার বদলে তারা বিপজ্জনক তালিকার অন্তর্ভুক্ত করবে। সুন্দরবন ও দার্জিলিং হিমালয়ান রেল পশ্চিমবঙ্গের এই দু’টি দ্রষ্টব্যই ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় রয়েছে। তাদের মধ্যে একটি বিপজ্জনক তালিকায় চলে গেলে তা শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, গোটা দেশের পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা রেল কর্তাদের। তার পরেই এই লাইন সংস্কারের কাজ শুরু করেছে রেল মন্ত্রক।
দার্জিলিঙের টয় ট্রেন আবার যাতে পুরো রুটে সফর করতে পারে, সে জন্য সম্প্রতি দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়ার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। রেল বাজেটে এ জন্য আর্থিক সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছিলেন গৌড়া। টয় ট্রেনকে চাঙ্গা করার কাজে সহযোগিতা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সম্প্রতি চিঠি লিখেছেন রেলমন্ত্রী। নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য সরকারও ওই প্রকল্পে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
টয় ট্রেনে চড়ে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিং সফর এখন অতীত। প্রথমে ২০১০ সালে পাগলাঝোরায় বড় ধস নামে। পরের বছর ভূমিকম্পে তিনধরিয়ায় একটা বড় এলাকায় লাইনের নীচের মাটি সরে যায়। তার পরে ৮৮ কিলোমিটারের ওই রেললাইন এখন কার্যত তিন ভাগে বিভক্ত।
জিটিএ সদস্য জ্যোতিকুমার রাইয়ের কথায়, “দার্জিলিঙের টয়ট্রেন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। স্থানীয় বাসিন্দারাও টয় ট্রেন নিয়ে গর্বিত। দার্জিলিং থেকে সমতল পর্যন্ত সরাসরি রেললাইন থাকা প্রয়োজন। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “পুরো পথে ট্রেন না চললে টয় ট্রেনের হেরিটেজ স্বীকৃতি বাতিল করা হবে বলে ইউনেস্কো আগেই সতর্ক করেছিল। তবে দীর্ঘদিন ধরেই এই রেলপথ সংস্কারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী দাবি জানিয়ে আসছেন।”